E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন

আশাশুনি থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চুরির মামলায় দু’জনকে আটক করে নির্যাতনের অভিযোগ

২০২১ সেপ্টেম্বর ০১ ১৭:৩৩:৩৮
আশাশুনি থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চুরির মামলায় দু’জনকে আটক করে নির্যাতনের অভিযোগ

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মিথ্যা চুরির মামলায় দু’জনকে আটকের পর শারীরিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরার আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ গোলাম কবীর ও উপপরিদর্শক গাজী নুরুন্নবীর বিরুদ্ধে। গত ১৭ আগষ্ট দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে আশাশুনি উপজেলার চকবাটরা ও গোদাড়া বিলের নিজ নিজ মাছের ঘের থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। প্রতিকার চেয়ে মোমিন গাজী প্রধানমন্তীসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন।

আটককৃতরা হলেন, গোদাড়া গ্রামের মৃত জহুরুল সরদারের ছেলে মোঃ ফজলুর রহমান সরদার (৩৫) ও একই গ্রামের মৃত আলতাফ হোসেন গাজীর ছেলে মুজিবর রহমান (৪৫)।

সরেজমিনে মঙ্গলবার সকালে আশাশুনি উপজেলার গোদাড়া গ্রামে গেলে কেরামত আলীর ছেলে আহসানউল্লাহ সরদার, সর্বত আলী, মোমেনা খাতুনসহ কয়েকজন আমান উল্লা ও আসমার তাণ্ডবে মোমেনা ও মোমিনের জমির ঘেরা, ইটের দেয়াল ভেঙে দেওয়ার কথা তুলে ধরেন। তাদের বেড়া কেটে দেওয়ার পর তথনও পুকুর পাড়ে পড়ে ছিল।

আহসানউল্লাহ তার বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে চারটি দলিলে সাড়ে ৮বিঘা জমি লিখে নিয়ে তাদের তিন ভাইকে নিঃস্ব করে দেওয়া ও মেঘনা লাইফ ইনস্যুরেন্সে কাজ করার সময় গ্রাহকদের লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ করেন আমানউল্লাহের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া আসমা একের পর এক বিভিন্ন লোকজনদের নামে যেভাবে মামলা করে চলেছেন তার ব্যাখ্যা দেন।

আহছানউল্লাহ সরদার জানান, মাদার সরদারের ৬২ শতক জমির মধ্যে পৈতৃক সূত্রে মোমেনা খাতুন চার শতক জমির মালিক হন। ওয়ারেশ সুত্রে প্রাপ্ত চার খালার অংশের চার শতক জমি এক বছর আগে কেনেন মোমেনার ছেলে আব্দুল মোমিন গাজী। নিয়ম অনুযায়ি মোমেনা ও মোমিনের জমি অন্য ওয়ারেশদের মত সামনের একটি অংশ পাওয়ার কথা। সে অনুযায়ি তারা সামনের একটি অংশসহ ৮ শতক জমি বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা দিয়ে দেয়। ১০ বছর আগে আমানউল্লাহ সামনের অংশ জুড়ে বাড়ির প্রাচীর বানানোর চেষ্টা করলে মোমেনা বাধা দেন। এ সময় তাকে পিটিয়ে জখম করে আসমা ও আমানউল্লাহ।

মোমিন গাজী জানান, মা ও তার কেনা জমির সামনের অংশ দখল করতে আমান ও তার স্ত্রী আসমা জোর করে সামনের অংশ ঘিরে নিলে তারা কেটে দেন। একপর্যায়ে ঘেরা কাটার দায়ে তার কাছে এক লাখ টাকা চান আমান ও আসমাসহ চারজন। এ ঘটনায় তিনি আমানউল্লাহ ও আসমাসহ চারজনের নামে আদালতে চাঁদাবাজির মামলা করেন চলতি বছরের ৯ মে। প্রতিশোধ নিতে কেরামত সরদারের ছেলে আমান উল্লাহ সরদার ও তার স্ত্রী আসমা খাতুন পরিকল্পিতভাবে তার পৈতৃক জমি জবরদখলকারি রহিমাকে দিয়ে তাকেসহ স্ত্রী নাছিমা,ভাই মুজিবর, ভাইপো শাহীন , মুজাহিদের নামে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে বাড়ি ছাড়া করে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক গাজী নুরুন্নবীর উপস্থিতিতে ওই বাঁশের বেড়া তুলে দেওয়া হয়।

মোমিন গাজী আরো জানান, আসমা খাতুন তার প্রতিপক্ষদের ঘায়েল করতে পুলিশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে ২০১৭ সাল থেকে ভাসুরসহ বিভিন্ন লোকজনের নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা করেছেন। বর্তমানে উপপরিদর্শক গাজী নূরুন্নবীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন আসমা। গত ১৭ জুলাই দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে চরবাটরা ও গোদাড়া গ্রামের নিজ নিজ ঘেরের বাসা থেকে ফজলু ও ভাই মুজিবরকে ধরে নিয়ে থানায় এসে অমানুষিক নির্যাতন চালান উপপরিদর্শক গাজী নুরুন্নবী। নির্যাতনে মুজিবরের বাম হাতের হাড় ভেঙে যায়। ফেটে যায় বাম পায়ের হাড়। এ্কইভাবে ফজলুর মেরুদণ্ডের হাড় ফেটে যায়। এরপর দু’জনকেই নিজের ঘরে এনে নির্যাতন চালান থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কবীর।

একপর্যায়ে ফজলুকে আসমার বাড়িতে সাজানো চুরির মামলার দায় আদালতে স্বীকার করতে বাধ্য করান উপপরিদর্শক নুরুন্নবী। ফজলু ও মুজিবরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা আদালতে আবেদনও করেন। এ ব্যাপারে গত ২৪ জুলাই সংবাদ সস্মেলন করতে চাইলে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সচিব মাহাবুবর রহমান পুলিশের বিরুদ্ধে সংবাদ সস্মেলন করা যাবে না বলে জানিয়ে দেন। বাধ্য হয়ে তিনি প্রতিকার চেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপিসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন।

মুজিবর রহমান জানান, আদালতে আবেদন করেও বাইরের কোন হাসপাতালে তার হাত ভাঙার চিকিৎসা করানো হয়নি। তিনি গত ১৯ আগষ্ট জামিনে মুক্তি পেয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বুধবার জজ কোর্ট থেকে মুক্তি পাওয়া ফজলুর স্ত্রী ফাতেমা খাতুন সাংবাদিকদের জানান, তার স্বামীকে ১৭ জুলাই ঘেরের বাসা থেকে তুলে থানায় এনে ¯প্রাইটের খালি বোতলে বালি ভরে মেরুদণ্ডের হাড় ফাটিয়ে দিয়েছেন উপপরিদর্শক নুরুন্নবী। বৃহষ্পতিবার সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হবে।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের অর্থোপেডিকস সার্জন ডাঃ হাফিজুল্লাহ জানান, মুজিবরের বাম হাতের হাড় এক মাসেরও বেশি আগে ভারী জিনিস দিয়ে আঘাতের ফলে ভেঙে যায়।

এ ব্যাপারে গোদাড়া গ্রামের আমানউল্লাহ সরদারের স্ত্রী আসমা খাতুন আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক নুরন্নবীর সঙ্গে পরিচয় থাকার বিষয়টি অস্বীকার না করেই বলেন, মোমিন ও তার পরিবারের অহেতুক সামনের অংশ দাবীকে কেন্দ্র করে তাদের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে। তার বাড়িতে চুরির ঘটনায় পুলিশ তার দেবর ফজলু ও মুজিবরকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে চুরির মামলাটি সাজানো বলে দাবি করলে তিনি বলেন ঘটনার রাতে তিনি বাড়িতে ছিলেন না। তবে তার বেশ কিছু জিনিসপত্র চুরি হয়েছে।

এ ব্যাপারে বুধবার বিকেলে আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক নুরুন্নবী মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, আসমা খাতুনের সঙ্গে সখ্যতা, মুজিবর ও ফজলুকে নির্যাতনের অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ গোলাম কবীর বুধবার বিকেলে এ প্রতিবেদককে মোবাইল ফোনে জানান, মুজিবর ও ফজলুকে মারপিটের অবিযোগ ঠিক নয়। ফজলুর কাছ থেকে আসমার বাড়ির চুরি যাওয়া মালামালের কিছু অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। ফজলুর আদালতে চুরির কথা স্বীকারও করেছে। তবে আসমার স্বামীর বিরুদ্ধে বাবার জমি লিখে নিয়ে ভাইদের সঙ্গে প্রতারনা করেছেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ০১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test