E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

খলিশাখালির হাজার বিঘা সরকারি জমি থেকে ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করতে একের পর এক পরিকল্পিত মামলা 

২০২১ সেপ্টেম্বর ২৯ ১৬:৫৪:২৩
খলিশাখালির হাজার বিঘা সরকারি জমি থেকে ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করতে একের পর এক পরিকল্পিত মামলা 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার দেবহাটার খলিশাখালিতে বসবাসরত ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করতে জমির মালিকানা দাবিকারিরা একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে চলেছেন। অভিযোগ পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে না পেরে তারা আদালতে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে এ সব মামলা দায়ের করে যাচ্ছেন।

সাতক্ষীরা জেলা ভূমিহীন সমিতির সভাপতি আব্দুস সাত্তার বলেন, ২০১৭ সালে পারুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী সুধীন কুমার সরকার তার এক লিখিত প্রতিবেদনে দেবহাটা উপজেলার খলিশাখালির অবৈধ দখলদার হিসেবে সাতক্ষীরার কামালনগরের শামছুর রহমানের ছেলে বশির আহম্মদ,দেবহাটার শিমুলিয়ার আব্দুল মালেক ওরফে মালেক কাজীর দুই ছেলে কাজী গোলাম ওয়ারেশ ও কাজী আব্দুর রফিক (৩০০ বিঘা), তাদের তিন বোন, আইডিয়ালের পরিচালক নজরুল ইসলাম, সখিপুরের ফজর আলী গাজীর ছেলে আনছার আলী, গাজীরহাটের আব্দুল মজিদ খেজুরবাড়িয়ার আনারুল ইসলাম, সাতক্ষীরা সদরের ভাড়ড়ার আজিম সরদারের ছেলে আব্দুল জলিল দারোগাসহ কমপক্ষে ৩০ জন খলিশাখালির ৩৮ বিঘা সরকারি খাল এবং এক হাজার ৩২০ বিঘা জমি ও অনিয়ম ও দূর্ণীতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে ভোগদখল করে আসছেন।

২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি ওই সম্পত্তি সরকারি খাস জমি উল্লেখ করে সাতক্ষীরা জজকোর্টের সাবেক জিপি অ্যাড. গাজী লূৎফর রহমান আদালতে রিসিভার নিয়োগের আবেদন জানালে অ্যাড. বিকাশ কুমার কুণ্ডু চৌধুরী ও অ্যাড. আশরাফুল আলম বাবুকে রিসিভার দেন আদালত। পরে এসব অবৈধ দখলদাররা রিসিভার বাতিলের জন্য দৌঁড়ঝাপ শুরু করলে উচ্চ আদালত রিসিভার আদেশ স্থগিত সহ নালিশী জমির নেচার এন্ড ফেচার এবং দখলের ওপর স্ট্যাটাসকো আদেশ দেন। এ বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে ২৫৬৮/২০১৭ লিভ টু আপিল দাখিল করলে বিচারপতি মোঃ ইম্মান আলী, বিচারপতি মীর্জা হুসেন হায়দার ও বিচারপতি আবু বক্কর ছিদ্দিক যৌথভাবে গত ৪ ফেব্র“য়ারী সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসককে ওই জমি প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দেখভালের জন্য আদেশ দেন।

একই সাথে ওই আপিল নিষ্পত্তি ঘোষণা করা হয়। এরপর গত ১৩ এপ্রিল ওই এক হাজার ৩২০ বিঘা জমি ভূমিহীনদের নামে স্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য রবিউল ইসলাম, গোলাপ ঢালী ও হাবিবুলÍাহ বাহার খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। দেবহাটার ন’পাড়া, পারলিয়া, নোড়ার চক , চারকুনি, ঢেবুখালি, বেজোরাটি, গাজীরহাট, বেদীশহর, কালীগঞ্জের তারালী, ইন্দ্রনগর, পাইকাড়া, নলতা, আশাশুনির বদরতলা, বসুখালি, খলিশাখালিসহ বিভিন্ন এলাকার পাঁচ শতাধিক ভূমিহীন পরিবার গত ১১ সেপ্টেম্বর খলিষাখালির প্রায় এক হাজার বিঘা খাস জমি হিসেবে বসবাস শুরু করে।

খলিষাখালি ভুমিহীন সমিতির সহসভাপতি গোলাপ ঢালী বলেন, পুলিশ প্রশাসনকে আইনগত ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ভূমির মালিক দাবিদাররা থানায় মামলা করতে পারেননি। একপর্যায়ে তারা কৌশল পরিবর্তণ করে নিজেদের দাবির স্বপক্ষে প্রেসক্লাবে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। একইভাবে আদালতে তথ্য গোপন করে ১২ সেপ্টেম্বর কালীগঞ্জের ভাড়াসিমলার আতিকুর রহমান সাইফুল ইসলামসহ ১০জনের নাম উল্লেখ করে. একই দিনে দেবহাটার সখীপুরের আনছার আলী বাদি হয়ে রাজু হোসেনসহ নয়জনের নাম উল্লেখ করে ঘেরের বাসা ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ এনে আদালতে যথাক্রমে সিআর-৩১/২১ ও সিআর- ১০২/২১ নং মামলা দায়ের করেন। একই ধরণের অভিযোগে শিমুলিয়া গ্রামের আহসানউল্লাহ ঢালী বাদি হয়ে সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ২০ সেপ্টেম্বর সিআর-১৩৮/২১ নং মামলা দায়ের করেছেন।

মামলা তিনটির তদন্তভার পিবিআই এর উপর ন্যস্ত হয়েছে। এ ছাড়া সখীপুরের রিয়াজুল ইসলাম বাদি হয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর ভূমিহীন নেতা আবুল হোসেনসহ চারজনের নামে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম প্রথম আদালতে বোমা সন্ত্রাস, ঘেরের বাসা ভাঙচুর , ঘের কর্মচারিকে মারপিট ও মাছ লুটপাটের অভিযোগে মামলা(সিআর-১৪৫/২১) দায়ের করেছেন। বিচারক ইয়াসমিন নাহার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা রেকর্ড করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা গ্রহণের জন্য দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

গোলাপ ঢালী আরো বলেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর শিমুলিয়ার কাজী গোলাম ওয়ারেশ বাদি হয়ে সাইফুল ইসলামসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে, শহরের মুনজিতপুরের মোঃ সেলিম বাদি হয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর আমজাদ আলীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে দ্রুত বিচার আইনে যথাক্রমে ৩০৪/২১ ও ১৮/২১ নং মামলা দায়ের করেছেন। আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়াও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে দায়ের করা হয়েছে দু’টি মামলা।

এ ব্যাপারে আইডিয়াল এর নির্বাহী পরিচালক ডা. নজরুল ইসলাম জমির স্বপক্ষে রেকর্ড ও খাজনা দিয়ে যাচ্ছেন দাবি করলেও তারা সুপ্রিম কোর্টে মামলার পক্ষভুক্ত হয়ে শুনানীতে অংশ নেওয়ার পরও আদালত কেন গত ৪ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসককে ওই জমি প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দেখভালের জন্য আদেশ দিয়েছেন তার যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। এ ছাড়া তারা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে কেন খলিষাখালির ৩৮ বিঘা সরকারি খাস খাল জবরদখল করেছেন তার কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। জমির বৈধ মালিক হলে আদালত কেন জেলা প্রশাসক মহোদয়কে দেখভালের দায়িত্ব নিতে বললেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ কয়েকজন আইনজীবী ভূমি কমিটির পক্ষে যে প্রতিবেদন দিয়েছেন তাতে ওই জমির মালিকানা তাদের বহাল রয়েছে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. জহুরুল ইসলাম বলেন, মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে ২৫৬৮/২০১৭ লিভ টু আপিল মামলায় চমির মালিকসহ ১০৮ জন পক্ষভুক্ত হয়েছেন। শুনানী শেষে আদালত সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জমির দেখভাল ও প্রশাসনিক দায়িত্ব দিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করায় জমির মালিকগণের মালিকানার বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সেক্ষেত্রে ওই জমি সরকারিভাবে প্রজ্ঞাপন বা হিন্দু সম্প্রদায়ের ফেলে যাওয়া ওয়ারেশ বিহীন জমি হিসেবে ২০(২) ধারায় মামলা করে ১/১ খতিয়ান ভুক্ত করতে হবে।

এ ব্যাপারে দেবহাটা থানার নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ ওবায়দুল্লাহ বলেন, খলিশাখালির বিষয়টি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। তিনি থানায় নতুন যোগদান করেছেন। উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে সামগ্রিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test