বালিয়াকান্দিতে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর চাপে কোণঠাসা নৌকার মাঝিরা

এ কে আজাদ, রাজবাড়ী : আগামী ২৮ নভেম্বর ৩য় ধাপে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ৭ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে রয়েছে স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) একাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থী। কোণঠাসা হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। 

এদিকে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ। সারাজীবন আওয়ামীলীগের রাজনীতি ও সমর্থক হয়েও নৌকার পক্ষে কথা বলতে ভয় পাচ্ছে তারা। এর অন্যতম কারণ স্থানীয় রাজনীতি।

উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে রয়েছে কমপক্ষে একজন করে সতন্ত্র প্রার্থী।যাদের সবাই আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেতে কেন্দ্র থেকে দলীয় নমিনেশন ফরম সংগ্রহ করেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তারা স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।

উপজেলার সদর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতিকে নির্বাচন করছে সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ নায়েব আলী শেখ । তবে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হয়ে আনারস প্রতিকে নির্বাচন করছে মোঃ আলমগীর বিশ্বাস। এছাড়াও এ ইউনিয়নের অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন, সতন্ত্র কামরুজ্জামান (মোটর সাইকেল), বিএনপি সমর্থিত খন্দকার মশিউল আযম (ঘোড়া) , বিএনপি সমর্থিত জাফর আলী মিয়া (চশমা)।

উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতিকে নির্বাচন করছে ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জহুরুল ইসলাম। তবে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন না পেয়ে সতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হয়ে আনারস প্রতিকে নির্বাচন করছে ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবুল কালাম আজাদ ও সহকারী অধ্যাপক একেএম কবিরুজ্জামান ( ঘোড়া)। এছাড়াও অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন, বিএনপি সমর্থিত মোঃ আব্দুল ওহাব মন্ডল ( মোটর সাইকেল), সতন্ত্র প্রার্থী একেএম আতাউর রহমান ( চশমা)।

উপজেলার জংগল ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতিকে নির্বাচন করছে ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের সভাপতি কল্লোল বসু। তবে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন না পেয়ে সতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হয়ে আনারস প্রতিকে নির্বাচন করছে সাবেক চেয়ারম্যান নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। এ ছাড়া অন্য প্রার্থী হলেন, বিএনপি সমর্থিত ইউসুফ বিশ্বাস ( মোটর সাইকেল)।

উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতিকে নির্বাচন করছে উপজেলা আওয়ামিলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য আঃ হান্নান মোল্যা। আওয়ামীলীগের মনোনয়ন না পেয়ে সতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হয়ে আনারস প্রতিকে নির্বাচন করছে আহম্মদ আলী। ইউনিয়নের অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন, জাতীয় পার্টির মোঃ টুটুল মোল্যা (লাঙ্গল)।

উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতিকে নির্বাচন করছে সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ রেজাউল করিম। আওয়ামীলীগের মনোনয়ন না পেয়ে সতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হয়ে মোটরসাইকেল প্রতিকে নির্বাচন করছে খলিলুর রহমান খান।

উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতিকে নির্বাচন করছে ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের সভাপতি একেএম ফরিদ হোসেন। আওয়ামীলীগের মনোনয়ন না পেয়ে সতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হয়ে মোটরসাইকেল প্রতিকে নির্বাচন করছে সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুছ আলী সরদার৷ ইউনিয়নের অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন, বিএনপি সমর্থিত আয়নাল হক দেওয়ান ( আনারস) , আবুল কালাম মন্ডল ( চশমা)।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে (সতন্ত্র) আওয়ামীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা শক্ত অবস্থানে রয়েছে। সতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থীদের সাথে অনেক ইউনিয়নে রয়েছে ইউনিয়ন আওয়ামিলীগ ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবিন্দ। যার ফলে কোণঠাসা হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রার্থীর। যার মুল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে স্থানীয় রাজনীতি।

উল্লেখ্য, উপজেলা নির্বাচন অফিসার নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ এর দেওয়া তথ্য মতে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে সাধারণ ওয়ার্ড রয়েছে ৬৩টি,সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে ২১টি,ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৬৬টি, ভোট কক্ষের সংখ্যা ২৮টি।

মোট ভোটার রয়েছে, ইসলামপুর ইউনিয়নে ২৫ হাজার ২১৮ ভোটার, বহরপুর ২৭ হাজার ৬০৫ ভোটার, নবাবপুর ৩১ হাজার ৪৯৭ ভোটার, নারুয়া ২১ হাজার ১৪২ ভোটার, বালিয়াকান্দি ২৩ হাজার ৪৮ ভোটার, জঙ্গল ১৬ হাজার ৫৯৩ ভোটার, জামালপুর ২৪ হাজার ৪৮১ ভোটার।

(একে/এসপি/নভেম্বর ১৮, ২০২১)