E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুলিয়ারচরে ইউএনওর বিরুদ্ধে বিজয় দিবসের নামে ব্যবসায়ীদের থেকে চাঁদা তোলার অভিযোগ

২০২১ ডিসেম্বর ১৫ ১৬:১৪:৫৩
কুলিয়ারচরে ইউএনওর বিরুদ্ধে বিজয় দিবসের নামে ব্যবসায়ীদের থেকে চাঁদা তোলার অভিযোগ

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করার নাম করে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা চাঁদা তোলার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)’র বিরুদ্ধে।

সরকারিভাবে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দের পাশা পাশি বিজয় দিবসের সকল অনুষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহের জন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন শিল্পপতি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ স্ব-স্ব ইচ্ছায় মোটা অংকের টাকা দিয়ে সহযোগিতা করলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবাইয়াৎ ফেরদৌসী অতি গোপনীয়তা অবলম্বন করে বিনা রশিদে উপজেলার বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ইঁট ভাটা ও মিল-কারখানার মালিকদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা চাঁদা আদায় করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

১৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুরের দিকে ডুমরাকান্দা বাজারের মা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী নেপাল মোদক বলেন, মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে ইউএনও অফিসের নাম করে বাজারের ব্যবসায়ী লাল বাদশা আমাদের নিকট থেকে ৫শত টাকা নিয়েছে।

মঙ্গলবার রাত পৌনে ৮টার দিকে রামদী ইউনিয়নের আগরপুর বাসস্ট্যান্ড বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ মুলু বলেন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য ইউএনও অফিস থেকে আমাদের বাসস্ট্যান্ড ‘স’ মিল মালিকদের নিকট ২ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবী করে। আমরা ৫ জন মিল মালিক ১ হাজার টাকা করে চাঁদা দিয়েছি।
ছয়সূতী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা মো. বাবুল মিয়া বলেন, বিজয় দিবস উপলক্ষে ইউএনও অফিসের লোকজন দ্বাড়িয়াকান্দি বাসস্ট্যান্ড থেকে চাঁদা তুলছে। বিষয়টি স্থানীয় মাননীয় এমপি মহোদয়কে অবগত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ডুমরাকান্দা বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. আলী আকবর খাঁনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান উপলক্ষে ইউএনও স্যার আমাকে নির্ধারণ করে দিয়েছে ডুমরাকান্দা বাজারের পক্ষ থেকে তাকে মোট ৩০ হাজার টাকা উত্তোলন করে দেওয়ার জন্য। বাজারের ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে বহু কষ্ট করে টাকা তুলে এবং আমার পকেট থেকে মিলিয়ে মঙ্গলবার সকালে ইউএনও অফিসে গিয়ে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে এসেছি।

এছাড়া তিনি আরো বলেন, উপজেলার প্রতিটি বাজারের সভাপতিকে ৩০ হাজার টাকা করে দেওয়ার জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আর কুলিয়ারচর বাজার কমিটির সভাপতিকে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ইউএনও স্যার। তিনি এধরনের চাঁদাবাজি করাকে অন্যায় হিসাবে আক্ষায়িত করেছেন তিনি।

এ ব্যাপারে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে দ্বাড়িয়াকান্দি বাসস্ট্যান্ড বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আরশ মিয়া বলেন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান উপলক্ষে ইউএনও স্যার আমাকে বলেছেন দ্বাড়িয়াকান্দি বাসস্ট্যান্ড বাজারের পক্ষ থেকে তাকে মোট ৩০ হাজার টাকা তুলে দেওয়ার জন্য। বাজারের ব্যবসায়ীদের নিকট গিয়ে এখনও ৩০ হাজার টাকা উঠাতে পারিনি তাই আজ টাকা দিয়ে আসতে পারিনি। আজ বুধবার আমার পকেট থেকে মিলিয়ে হলেও ইউএনও স্যারকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে আসতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ব্যবসায়ী বলেন, মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান উদযাপন উপলক্ষে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বিভিন্ন শিল্পপতিদের দেওয়া টাকা বাদে এ উপজেলায় প্রায় ২০টি বাজারের ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে ৩০-৫০ হাজার টাকা চাঁদা তুলা হলে প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা চাঁদা তুলা হবে। তাহলে এসব টাকা কোথায় ব্যয় করা হবে এটাই ভাবার বিষয়।

উপজেলা পরিষদের একাউন্ট ক্লার্ক (হিসাব সহকারী) মো. ইমরান হোসেন ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে অর্থ আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সরকারি বাজেট অপ্রতুল থাকায় দিবসের ব্যয় নির্বাহের জন্য স্থানীয় ভাবে অর্থ আদায়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা তোলা হচ্ছে। যাহা গত ৫ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মহান বিজয় দিবস-২০২১ উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতিমূলক সভার কার্যবিবরণীতে উল্লেখ রয়েছে। তবে চাঁদা তুলে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান করা সরকারি কোন নির্দেশনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তেমন কোন নির্দেশনা নাই।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও কুলিয়ারচর গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ইমতিয়াজ বিন মুছা জিসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিজয় দিবস উপলক্ষে এ উপজেলার ৩৫০ জন বীরমুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কুলিয়ারচর গ্রুপের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রতিজনকে একটি করে শাল দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইলহাম গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইয়াছির মিয়া বলেন, বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে কখন, কোথায় কি ধরণের অনুষ্ঠান হবে আমার সাথে কেউ কোন আলাপ কিংবা সমন্বয় করেনি। এছাড়া লোকমুখে শুনেছি বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে একটি প্রস্তুতিমূলক সভার মাধ্যমে উপজেলা কমিটি করা হয়েছে। সেখানে আমাকে না জানিয়ে আমাকে উপদেষ্ঠা করা হয়েছে। অথচ আজও আমাকে একটি চিঠি কিংবা সভার কার্যবিবরণীর কপি না দিয়ে অনুষ্ঠানের জন্য আমার নিকট ২ লাখ টাকা দাবী করা হয়েছে।

“বিজয় আমাদের অহংকার, বিজয় আমাদের গর্ব। দেশের প্রতি ভালোবেসে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য আমার ইলহাম গ্রুপের পক্ষ থেকে ইউএনও অফিসকে ২ লাখ টাকা দিয়েছি এবং উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। বেশ কয়েকজন শিল্পপতিও মোটা অংকের টাকা দিয়েছে। তারপরও কেন উপজেলার বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ী, মিল-কারখানার মালিকসহ ঠিকাদারদের নিকট থেকে এভাবে চাঁদাবাজী করা হয়েছে এ প্রশ্ন ইউএনও’র নিকট। এধরনের চাঁদাবাজী একধরনের নীরব নির্যাতনের সামিল। স্বাধীন দেশে এ ধরনের কাজ চলতে পারেনা। এটা স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থী। স্বাধীন একটি দেশে এ ভাবে চাঁদা তুলে বিজয় দিবস উদযাপন করা স্বাধীনতার চেতনার মধ্যে পড়ে না।”

এছাড়া কোথায় থেকে কত টাকা চাঁদা তুলেছে বা তুলছে এবং এসব টাকা কোথায় কোথায় ব্যবহার করা হবে তাও আমার জানা নেই।

বিভিন্ন এলাকার তথ্য অনুযায়ী স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের নামে ইউএনও অফিসের পক্ষ থেকে বিভিন্ন লোকজন দিয়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে শুনেছি। এসব টাকা কোথায় ব্যয় করা হবে আমার বোধগাম্য নয়। এমন ভাবে চাঁদা তুলবে জানলে এ অনুষ্ঠানে আমি এত টাকা দিয়ে সহযোগিতার হাত বারাতামনা। তবে বিষটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তদন্ত সাপেক্ষে উদঘাটন হওয়া অতিব জরুরি বলে আমি মনে করি।

এ ব্যাপারে অর্থ উপ-কমিটির আহবায়ক সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাকে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে অর্থ উপ-কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে। তবে চাঁদা তোলা কিংবা টাকা উঠানোর বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। এব্যাপারে ইউএনও স্যারই ভালো জানেন। ওনার নিকট থেকে আয় ব্যয়ের হিসাব চাইতে পারেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবাইয়াৎ ফেরদৌসীর সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি এ প্রতিনিধির মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলমের সাথে যোগাযোগ সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি এ প্রতিনিধির মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

(এসএস/এসপি/ডিসেম্বর ১৫, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test