E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বর্তমান সরবরাহকৃত পানিতে ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধ 

ভৈরবে সওজের আপত্তিতে প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকায় সুপেয় পানি সরবরাহ থেকে বঞ্চিত পৌরবাসী

২০২১ ডিসেম্বর ১৮ ১৫:৫১:৪৭
ভৈরবে সওজের আপত্তিতে প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকায় সুপেয় পানি সরবরাহ থেকে বঞ্চিত পৌরবাসী

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষের আপত্তির মুখে পল্টুন বসাতে না পারায় আটকে গেছে ভৈরববাসীর সুপেয় ও নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ। ফলে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের গ্রহণ করা প্রকল্পটির ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হলেও, প্রকল্পটির সমাপ্তি এবং এর সুফল নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সুপেয় ও নিরাপদ পানি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভৈরব পৌরবাসী।

এদিকে একই অধিদপ্তর থেকে বাস্তবায়িত আগের প্রকল্পের ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে সরবরাহকৃত পানি ময়লা-আবর্জনা আর দুর্গন্ধযুক্ত ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় সেই পানি ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছেন পৌরবাসী। ফলে পেটের পীড়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে জনস্বাস্থ্য চরম হুমকির মুখে পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মেঘনা নদী থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি তুলে এনে বিশুদ্ধকরণ করে পৌরবাসীকে সরবরাহ করার করার লক্ষ্যে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৯২ হাজার টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। যার কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুছ এন্ড ব্রাদার্স। চলতি বছরের ৩০ জুন কাজটি শেষ হলে ১ জুলাই ভৈরব পৌরসভাকে বুঝিয়ে দেবার কথা ছিলো উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের।

গত এপ্রিল মাসে সমস্ত কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা ভৈরবের মেঘনা নদীর তীরে পানি সরবরাহ পাম্পের জন্য পল্টুন বসাতে গেলে বাঁধা দেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তাদের দাবি, মেঘনা নদীর উপর নির্মিত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক সেতুর কারণে ওই এলাকাটিকে কেপিআই এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছেন সরকার। কেপিআই এলাকায় কোনো স্থাপনা করতে গেলে পূর্বানুমতি লাগবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। ফলে কাজটি থেমে যায়।
কাজটি যথা সময়ে শেষ না হওয়ায় এবং ৩০ জুন প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে আবারও মেয়াদ বৃদ্ধি করতে হবে। উচ্চ পর্যায়ের নীতি নির্ধারকদের মতামতের ভিত্তিতে এই মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এইসব জটিলতায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এই প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে দ্রুত কাজটি শেষ করে ভৈরববাসীর সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে চান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, জানালেন এর সাইট ম্যানেজার মো. মজিবুর রহমান।

এদিকে স্থানীয় গ্রাহকরা জানান, দিনের পর দিন পানি সরবরাহ বন্ধ থাকে। আর যদি পানি আসে, তবে সেই পানি ব্যবহার করার উপযোগী থাকে না। পান করা তো বহু দূরের বিষয়। সরবরাহকৃত পানি থাকে দুর্গন্ধযুক্ত। পানির সাথে মিশে আসে ময়লা-আবর্জনা। এমন কি কেঁচোও আসে। এনিয়ে তারা অনেকবার বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করলেও, ফলাফল আসেনি।

শহরের ঘোড়াকান্দা আজিজ প্লট এলাকার বাসিন্দা শফিক আহমেদ খোকা ও মনোয়ারা বেগম জানান, সপ্তাহের দুই/তিন দিনও তারা পানি সরবরাহ থেকে বঞ্চিত থাকেন। যদিও পানি পান, তাতে ড্রেনের পানি মিশ্রিত দুর্গন্ধ থাকে। যা দিয়ে কোনো কাজ করা যায় না।

সাবেক পলাশ সিনেমা হল রোডের বাসিন্দা হনুফা বেগম জানান, তার বাড়িতে ১৫টি ভাড়াটিয়া পরিবার থাকতো। পানির সমস্যার কারণে একে একে সবগুলি ভাড়াটিয়া তার বাড়ি ছেঁড়ে চলে গেছেন। ফলে তিনি আর্থিকভাবে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি এই পানি সমস্যার দ্রুত সমাধান চান।

বর্তমান পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় ত্রুটি-বিচ্যুতির বিষয়টি স্বীকার করে ভৈরব পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও ভারপ্রাপ্ত মোটরসুপার মো. শাজাহান মিয়া বলেন, ১৯৯৭ সালে স্থাপিত বর্তমান পানি বিশুদ্ধকরণ প্রকল্পটির নানা ত্রুটির কারণে পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। বর্তমানে গ্রহণ করা প্রকল্পটি চালু হলে পৌরবাসীর পানির সমস্যা দূর হয়ে যাবে। পৌরসভার পক্ষ থেকে সড়ক ও জনপথের সেতু বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠি দেওয়া হয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকেও। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, উদ্ভূত সমস্যার সমাধান খুব শীঘ্রই হয়ে যাবে।
সুপেয় পানির সমস্যা ভৈরব পৌরবাসির দীর্ঘদিনের। এই সমস্যা সমাধানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বাস্তবায়িত প্রকল্পটি গত জুন মাসে পৌরসভাকে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিলো। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর হয়ে বর্তমানে গ্রহণ করা প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ণ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ভৈরব পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব ইফতেখার হোসেন বেনু।

ভৈরব উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাসুদ রেজা জানান, প্রকল্পের ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার পর কেপিআই এলাকায় পল্টুন স্থাপনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের কথা বলে কাজটি আটকে দিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এদিকে প্রকল্পটির মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে জুন মাসে। এখন প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনুমোদন-এই দুইয়ের জন্যই কাজ চলছে। আশা করি এই দুই সমস্যার সমাধান হলে প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়িত হবে এবং ভৈরব পৌরবাসীর সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা চালু হবে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক সেতু এলাকার দায়িত্বে থাকা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নরসিংদী জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হায়দার জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়ণের শুরুতে কিশোরগঞ্জ সড়ক বিভাগের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর রোড কেটে পাইপ লাইন বসানোর অনুমতির আবেদন করলে আমরা সেটি দেই এবং তারা সেই কাজ সমাপ্ত করে।

এখন কেপিআই এলাকায় স্থাপনা করতে চাইলে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগবে। তারা যতো দ্রুত সেই অনুমোদন আনতে পারবেন, তত দ্রুত কাজটি সমাপ্ত হবে। আর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ার পর আমাদের পক্ষ থেকে আমরা দ্রুততার সাথে কাজটি সমাধানে সব রকমের সহায়তা করবো। সকল জটিলতা কেটে সুপেয় পানি সরবরাহ সুনিশ্চিত হবে, এমনটিই আশা করেন ভৈরব পৌরবাসী।

(এসএস/এসপি/ডিসেম্বর ১৮, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test