E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

পদ্মফুলে সজ্জিত চাপাইবিলে বিনোদন প্রেমীদের ভিড়

২০২২ আগস্ট ১৩ ১৫:৫১:২৬
পদ্মফুলে সজ্জিত চাপাইবিলে বিনোদন প্রেমীদের ভিড়

আবু নাসের হুসাইন, সালথা : ষড়ঋতুর বাংলাদেশ। ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে বাংলার প্রকৃতি নতুন রূপে সাজে। সবুজ পাতায় ছেয়ে যায় বৃক্ষরাজি। বিশেষ করে বর্ষাকালে জলজ উদ্ভিদ প্রাণ ফিরে পায়। শাপলা, শালুক, কচুরিপানা আর পদ্মফুলে সজ্জিত হয় খাল-নদী আর বিল। এবছর নদী-নালা ও খাল-বিলে পানি কম থাকায় শাপলা, শালুক ও কচুরীপানা নেই বললেই চলে। 

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের ভাবুকদিয়া গ্রামের সাথেই রয়েছে চাপাই বিল। কিছু অংশ সালথা উপজেলার মধ্যে। বাকি অংশ ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের মধ্যে অবস্থিত চাপাই বিল। এই বর্ষা মৌসুমে চাপাই বিলটি এমনই পদ্মফুলে সজ্জিত হয়ে নিজের সৌন্দর্য বিলিয়ে দিচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমীদের মধ্যে।

শুক্রবার (১২ আগষ্ট) বিকালে বিলটি ঘুরে দেখা যায়, সালথা উপজেলার ভাবুকদিয়া মৌজা ও সদর উপজেলার রনকাইল মৌজায় অবস্থিত বিস্তৃর্ণ বিলজুড়ে সাদা এবং গোলাপী রঙের পদ্মফুল ফুটে আছে। চাপাইবিল নামে পরিচিত এ বিলের পশ্চিমে রনকাইল গ্রাম আর পূর্বে ভাবুকদিয়া-ঠেনঠেনিয়া গ্রাম। এ বিলের আবদ্ধ পানিতে শাপলা-শালুক আর পদ্মফুলের ছড়াছড়ি। এখানে দৈনন্দিন জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল থেকে আসা বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণী পেশার লোকজন ভীড় জমাচ্ছে।

শাপলা ফুল না ফুটলেও হাজার হাজার পদ্মফুল ফুটেছে বিলটিতে। সারি সারি পদ্মফুলের সৌন্দর্য বিনোদনপ্রেমীদের মুগ্ধ করছে। তবে প্রতিদিন শত শত ফুল ছিঁড়ে নিয়ে বিলটির সৌন্দর্য নষ্ট করছেন অনেকেই। সরেজমিনে দেখাযায় একটি ফুল তুলতে গিয়ে নষ্ট করছেন কয়েকটি ফুল।

ভাবুকদিয়া গ্রামের ৬০ বছর বয়সের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য কালাম মিয়া বলেন, আমার জন্মের পর থেকেই দেখি, এ বিলে বর্ষাকালে পদ্মফুল ফোটে। অনেকেই পদ্মফুলের পাতা কুড়িয়ে হাটে বিক্রি করেছে। সেই টাকা দিয়ে তাদের সংসারও চলেছে। তখন অনেক অভাব-অনটন ছিল।

পাশের কানাইপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ফকির মো: লুৎফর রহমান বলেন, বর্ষা এলেই পদ্মফুল ফোটে। আমরা ছোটবেলায় শুকনো মৌসুমে অনেক পদ্মগাছের বীজ কুড়িয়ে খেয়েছি। এখন আর বীজ দেখা যায় না, তবুও বর্ষায় পদ্মফুলের গাছ জন্মে।

স্থানীয় মাঝি সহ অনেকেই বলেন, এক সময় হাটে এ বিলের পদ্মপাতায় লবণ, মাছ, খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করা হতো। পদ্মপাতায় মেজবানিও খাওয়ানো হতো। এছাড়া ইরি মৌসুমে এখানে ধানের আবাদ হয়। শীত মৌসুমে কলাই, শাক, সবজিরও আবাদ হয়। ওই সময় পদ্মগাছের কোনো চিহ্ন দেখা যায় না। বর্ষা আসার সঙ্গে সঙ্গে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে বিলটি। তখনই দেখা যায়, হাজার হাজার পদ্মফুল ফুটে আছে। আষাঢ় থেকে শুরু করে ভাদ্রমাস পর্যন্ত এ পদ্মফুল ফুটে থাকে।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মো: ইব্রাহিম মোল্লা চাপাই বিলটি রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানিয়ে বলেন, বছরে অন্তত চার মাস বিলটিতে পদ্মফুল ফুটে থাকে এবং সৌন্দর্য ছড়ায়। এসময়টায় পদ্মফুল যেন কেউ না তোলে, সেদিকে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরদারি প্রয়োজন।

সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ছায়ানীড় পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা মো: ইনামুল হাসান মাসুম জানান, প্রতিদিনই অসংখ্য পর্যটক চাপাইবিলে পদ্ম ফুলের সৌন্দয্য উপভোগ করতে আসছেন। আমার বন্ধুদের নিয়ে গতকালকেও চাপাইবিলে ঘুরতে গেছিলাম। নৌকায় করে পুরো বিলটা ঘুরলাম। রাশি রাশি পদ্মফুল বিলটাকে পুরো ছেয়ে ফেলেছে। এমন সৌন্দর্য্য দেখার জন্য সবাইকে অন্তত একবার হলেও এ বিলে আসা উচিত।

তিনি আরো বলেন, এখানে থাকার বা বসার কোন ব্যবস্থা নেই। সেই সাথে এখানে একটা মৌসুমী মিনি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবী জানাচ্ছি। এতে একদিকে যেমন পর্যটকদের সুবিধা হবে অন্য দিকে সরকারের রাজস্ব আয় হবে।

এ ব্যাপারে কানাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফকির মোঃ বেলায়েত হোসেন বলেন, এই চাপাই বিলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোনো কমতি নেই। আমার বিশ্বাস, যে একবার ঘুরতে আসবে তিনি বারবার আসতে চাইবেন। কারন এখানে রাস্তা করে দিয়েছি, সেই রাস্তা ত্রানমন্ত্রণালয় পক্ষ থেকে পাকারাস্তাকরন এবং পথচারীদের পানি খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি, মানুষের বসার সু-ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সৌন্দর্যবর্ধনের প্রক্রিয়া চলছে। মানুষের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছি এবং আগামীতে পর্যটকদের জন্য আরো উন্নত পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে।

গট্টি ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লাভলু বলেন, চাপাই বিলের পদ্মফুলের সৌন্দর্যের টানে প্রতিনিয়তই পর্যটকদের ভীড় চোখে পড়ার মতো। বালিয়া গট্টি ও ঠেনঠেনিয়া হয়ে ভাবুকদিয়া চাপাই বিলের যাওয়ার রাস্তা রয়েছে। বিনোদণ প্রেমীদের সুবিধার্থে রনকাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সাথে আমরাও আরো উন্নত পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করবো।

(এন/এসপি/আগস্ট ১৩, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test