E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

পরকীয়ায় ধরা খেয়ে পলাতক, অপহরণের অভিযোগে স্ত্রীর মামলা

৩৫ দিন পর কৃষককে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ

২০২২ আগস্ট ২১ ১৬:৫১:৩৩
৩৫ দিন পর কৃষককে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ

আবু নাসের হুসাইন, সালথা : পরকীয়ায় ধরা খেয়ে মারধরের শিকার হন নুর ইসলাম। মারধর খাওয়ার পর পরিবারের পরামর্শে নুর ইসলামকে ওই রাতেই বাড়ি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন নুর ইসলাম তার শ্যালক ওমর ফারুকের কাছে আশ্রয় নেয়। সেখানে তিনি আফরিন জুটমিলে চাকরী নেয় বলে পুলিশ সুত্রে জানা গেছে। 

গত ১৪ জুলাই রাত ৯ টার দিকে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের রাঙ্গারদিয়া গ্রামে পরকিয়ায় ধরা খেয়ে মারধরের এঘটনা ঘটে।

এদিকে গুম-অপহরণের অভিযোগে গত ২৭ জুলাই স্থানীয় ১৪ জনের বিরুদ্ধে ফরিদপুর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন নুর ইসলামের স্ত্রী আন্না বেগম। আদালত মামলাটি সালথা থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। থানা থেকে মামলাটি তদন্তভার দেয়া হয় এসআই ফরহাদ হোসেনকে।

মামলার আসামীরা হলেন- রাঙ্গারদিয়া গ্রামের মান্নান মাতুব্বর, সিদ্দিক মাতুব্বর, সানোয়ার মাতুব্বর, মুনছুর মুন্সী, হাবিব শেখ, আনিছ শেখ, হাসান শেখ, বাবলু মোল্যা, রাকিব শেখ, দবির শেখ, কবির শেখ, ইসমাইল মোল্যা, হিলাল শেখ ও হিমায়েত শেখ।

শুক্রবার (১৯ আগস্ট) গভীর রাতে বগুড়া সদর থেকে মামলার ভিকটিম নুর ইসলামকে উদ্ধার করে সালথা থানা পুলিশ। রবিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সালথা থানার ওসি। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। নুর ইসলাম,

ভিকটিম নুর ইসলামের স্ত্রী আন্না বেগম মামলার এজাহারে উল্লেখ্য করেন- আসামীদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা ও গ্রাম্য দলাদলি নিয়ে বিরোধ চলছিল। আমার স্বামী একজন দরিদ্র কৃষক। কিছুদিন আগে গাছ কাটা নিয়ে মামলার এক আসামী আনিচের সাথে আমার স্বামীর বিরোধ সৃষ্টি হয়। গত ১৪ জুলাই রাত ৯ টার দিকে আমার স্বামী স্থানীয় সুইচগেট বাজারে চা খেতে যায়। রাত ১১ টা বেজে গেলেও সে আর বাড়িতে ফিরে না। মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

আমি ও আমার সন্তান যখন স্বামী নুর ইসলামের অপেক্ষায় রয়েছি, তখন মামলার আরেক আসামী ছিদ্দিক আমাদের বাড়িতে এসে আমার শশুরকে বলে- তোমার ছেলে কোথায়?। আমরা বলি- সে বাজারে চা খেতে গেছে। তখন ছিদ্দিক আমার শশুরকে বলে, তোমার ছেলের লাশ রাঙ্গারদিয়া কুমার নদে ভাসছে, যাও গিয়ে লাশ নিয়ে আসো। পরে আমরা নদীর পাড়ে গিয়ে খোঁজখুজি করে তার সন্ধান না পেয়ে বাড়িতে চলে আসি। পরের দিন সকাল ৯টার দিকে আমার ছেলে তার ফেসবুক আইডিতে ঢুকে একটি ভিডিও পোষ্টে দেখেন। সেখানে দেখা যায়, আসামীরা আমার স্বামীকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করছে। তারপর থেকে তার আর খোঁজ নেই। এতে আমরা সন্দেহ ও আশঙ্কা করছি যে, আমার স্বামীকে অপহরনের পর খুন করে তার লাশ গুম করে রেখেছেন আসামীরা।

তবে আসামীরা অভিযোগ করে বলেন- আমাদের নামে এত বড় মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রায় এক মাস ধরে এলাকা ছাড়া করে রেখেছে নুর ইসলামের স্ত্রী। মিথ্যা মামলা দেওয়ায় আমরা তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করবো। সঠিক তদন্ত করে সত্য ঘটনা উদঘাটন করায় সালথা থানা পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সালথা থানার এসআই ফরহাদ হোসেন বলেন, মামলাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত শুরু করার পর অনেক কিছু বেরিয়ে আসে। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমেও বেশ কিছু গুরুপূর্ণ তথ্য পাই। এসব তথ্যের সুত্র ধরেই নুর ইসলামকে উদ্ধার করতে সক্ষম হই। মুলত তদন্ত করে আমি যেটা পেয়েছি তা হল, মামলার আসামীদের একজনের বোনের সাথে পরকিয়া ছিল নুর ইসলামের। ঘটনার রাতে ওই আসামীর বোনের সাথে পরকিয়ায় ধরা খেয়ে মারধরের শিকার হন নুর ইসলাম।

তিনি বলেন, মারধর খাওয়ার পর পরিবারের পরামর্শে নুর ইসলামকে ওই রাতেই বাড়ি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন নুর ইসলাম বগুড়া সদরে গিয়ে তার শ্যালক ওমর ফারুকের কাছে আশ্রয় নেয়। সেখানে তিনি আফরিন জুটমিলে চাকরী নেয়। এদিকে তার স্ত্রী আন্না বেগম আসামীদের বিরুদ্ধে (১৪৩.৩৬৪.৩০৭.৩২৬.৩৪) ধারায় আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি তদন্ত করে ক্লিয়ার হওয়ার পর আমি সঙ্গীয় পুলিশ দিয়ে বগুড়া সদরে গিয়ে প্রথমে তার শ্যালককে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নুর ইসলামকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শেখ সাদিক বলেন, নুর ইসলামকে লুকিয়ে রেখে তার স্ত্রী মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। আমরা তাকে জীবিত উদ্ধার করে শনিবার আদালতে পাঠাই। আদালত তার পরিবারের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেন। এখন আমরা নুর ইসলামের স্ত্রী আন্না বেগমকে খুঁজছি। মিথ্যা মামলা দেয়ায় তাকেও আইনের আওতায় না হবে।

(এন/এসপি/আগস্ট ২১, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test