E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভিজিটরের বাসায় গোপনে গর্ভপাত, অন্ত:সত্ত্বা নারীর মৃত্যু 

২০২২ আগস্ট ২৮ ২০:০৩:৩০
ভিজিটরের বাসায় গোপনে গর্ভপাত, অন্ত:সত্ত্বা নারীর মৃত্যু 

সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : রোকেয়া বেগম সালথা উপজেলা মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যের ভিজিটর হিসেবে কর্মরত। অথচ অর্থের বিনিময়ে তিনি তার ফরিদপুরের নিজ বাসায় গোপনে গর্ভপাত ঘটায় বলে অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার (২৬ আগস্ট) তার বাসায় পাঁচ মাসের অন্ত:সত্ত্বা রেহানা বেগম  (৪০) নামে এক নারীর গর্ভপাত করাতে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর থেকে রোকেয়া গা ঢাকা দিয়েছেন। এরপরেই রোকেয়ার অপকর্মের বিষয়টি সামনে এসেছে। অভিযোগ রয়েছে- রোকেয়া তার বাসায় এমন অসংখ্য গর্ভপাত ঘটিয়েছে।

ভিজিটর রোকেয়ার থাবায় নিহত রেহানা সালথা উপজেলার কানাইড় গ্রামের কৃষক আজিজুল শেখের স্ত্রী। তার ৩টি মেয়ে রয়েছে। এরমধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট মেয়েটির বয়স ৪ বছর।

শনিবার বিকালে রেহানার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে কানাইড় গ্রামে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, রেহানার মৃত্যুর ঘটনাকে পুজি করে গট্টি ইউনিয়নের কিছ লোক রোকেয়ার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়। পরে ওই নেতারা রেহানার পরিবারকে নয়ছয় বুঝিয়ে মামলা করা থেকে বিরত রেখেছেন। তবে এ বিষয়ে থানায় একটি সাধারন ডায়রি করেছেন রেহানার পরিবার।

নিহত রেহানা বেগমের বড় মেয়ে রিক্তা আকতার বলেন, আমার মা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ৪০ বছর বয়সে আবার সন্তান জন্ম দেওয়ার বিষয়টি লজ্জাবোধ করছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা হাসপাতালের ভিজিটর রোকেয়া বেগমের কাছে গেলে তিনি আমার মাকে বাচ্চা গর্ভপাত করার পরামর্শ দেয়। তার কথামত বৃহস্পতিবার ভিজিটর রোকেয়ার ফরিদপুর শহরের আলীপুর বাসায় নিয়ে গর্ভপাতের জন্য মাকে প্রথমে ওষুধ খাওয়ায়। এতে তার ব্যথা ওঠে। ব্যাথা ওঠার পর আমার মা ছটফট করতে থাকে। তখন রোকেয়া বলেন, সমস্যা নেই বাচ্চা গর্ভপাত হয়ে যাবে। এই বলে ৫ হাজার টাকাও নেয়। কিন্তু ওষুধে গর্ভপাত না হওয়ায় ওইদিন রাতে আমার মায়ের শরীরে অস্ত্রপাচার করে রোকেয়া বেগম।

তিনি আরো বলেন, এতে মায়ের শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। শুক্রবার সকালে রোকেয়া বলে টাকা লাগবে আরো ৫ হাজার, তা না হলে তোমার মাকে মেডিকেলে নিয়ে যাও তার অবস্থা খারাপ আমি কিছু করতে পারবো না। তখন আমি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসা শুরু করার আগেই সকাল ১১ টার দিকে আমার মা মারা যায়। আমরা ভিজিটর রোকেয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি। যাতে আমার মায়ের মতো আর কারো মায়ের এভাবে মৃত্যু না হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য পারভেজ মাতুব্বার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিহত রেহানা আমার প্রতিবেশি। তার পরাপর তিনটি মেয়ে হয়। এরপর আবারও গর্ভবতী হলে তিনি ডাক্টারী পরিক্ষা করে দেখেন তার পুনরায় মেয়ে সন্তান পেটে এসেছে। পরে তিনি ভিজিটর রোকেয়ার বাসায় গিয়ে ওই বাচ্চা ফেলাতে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি কিছু নেতা মিমাংসা করার কথা বলে রোকেয়ার কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে শুনেছি। রোকেয়া তার বাসায় এমন অসংখ্য গর্ভপাত ঘটিয়ে আসছে। এসব ঘটনায় আমি ভিজিটর রোকেয়ার শাস্তি দাবী করছি।

এ বিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করে ভিজিটর রোকেয়া বেগম বলেন, আগে থেকেই রেহানার ব্লিডিং হচ্ছিল। এখন আমাকে ফাঁসানোর জন্য ষড়যন্ত্র করছে ।রেহানাকে একরাত বাসায় রাখার কারন কি জানতে চাইলে তিনি উত্তর না দিয়ে ফোন রেখে দেন। আজ রবিবার তার কর্মস্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।

উপজেলা মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যর মেডিকেল অফিসার ডা. নাহিদা পারভিন বলেন, এই ঘটনা আমার জানা নেই। তবে রোকেয়া শনিবার সকালে দুই দিনের ছুটি নিয়েছে। যেহেতু ঘটনা সালথার বাইরে তাই কিছু বলতে পারছি না। তবে এ ধরনের ঘটনা দু:খজনক।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে প্রথম জানলাম। আপনারা মেডিকেল অফিসার ডা. নাহিদা পারভিনের সাথে কথা বলেন। তার অধিনেই রোকেয়া বেগম কাজ করেন।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, রেহানা বেগমের মৃত্যুর বিষয়ে তার পরিবার থানায় একটি জিডি করেছে। লাশ ময়না তদন্ত করা হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(এএনএইচ/এএস/আগস্ট ২৮, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test