E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাজৈরের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম শহীদ মহানন্দ সরকারের ৫৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

২০২৩ ফেব্রুয়ারি ০১ ১৩:৫৫:১১
রাজৈরের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম শহীদ মহানন্দ সরকারের ৫৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বিপুল কুমার দাস, রাজৈর : ১৯৬৯ এর অগ্নিঝরা গণঅভ্যুত্থানে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার মধ্যে পুলিশের গুলিতে প্রথম শহীদ হন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার উল্লবাড়ী  অষ্টম শ্রেণির সাহসী ছাত্র মহানন্দ সরকার।

জানা যায়, ১৯৬৯ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী অগ্নিঝরা দিনে মহানন্দ সরকার বৃহওর ফরিদপুর জেলার বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে টোল অফিস (পুলিশ ফাঁড়ি) ঘেরাও করার সময় পাকিস্তানি পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে শহীদ হন। তখন তিনি ছিলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার উল্লবাড়ী ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। কিশোর এ বীরের গৌরবগাথা স্মৃতি ধরে রাখার জন্য দীর্ঘ ৫৩ বছর পর তার নিজ গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের পলিতা গ্রামে সরকারি অর্থায়ণে নির্মাণ করা হয়েছে মহানন্দ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ। এতে আনন্দিত ও উচ্চসিত এলাকাবাসী। বর্তমান সরকারের কাছে শহীদ পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীর দাবী শহীদ মহানন্দ সরকারকে মরনোত্তর রাষ্ট্রীয় সম্মাণ দেওয়ার। বিগত বছরগুলোতে ১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মহানন্দ সরকারের পৈত্রিক নিবাস রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের পলিতা গ্রামের বাড়িতে এ উপলক্ষ্যে মহানন্দ সরকারের আত্মীয়স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশিদের আর্থিক সহায়তায় কিছু ইট বালু দিয়ে স্মৃতিসৌধ তৈরি করে তাতে ফুল দিয়ে এলাকাবাসী শ্রদ্ধা নিবেদন করতেন এবং স্মরণ সভা, পদাবলী কীর্তন ও কবিগানের আয়োজন করে আসছিলেন। বর্তমান সরকার স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জলিরপাড় জে.কে.এম.বি মল্লিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রয়াত প্রাক্তণ শিক্ষক ও প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা জগদীশ চন্দ্র বিশ্বাসের স্মৃতির পাতা থেকে।

শহীদ মহানন্দ সরকারের সহপাঠী ঢাকা সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড.অরুণ কুমার গোস্বামী জানান, ১৯৬৯ এর গণআন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতা জলিরপাড়ে আন্দোলন শুরু করেন। কিন্তু তৎকালীন জলিরপাড় ইউপি চেয়ারম্যান নিত্যরঞ্জণ মজুমদার, প্রভাবশালী মুসলিমলীগ নেতা নওয়াব আলী মিয়া ও মুকুন্দ বালা তাদের আন্দোলন করতে বাঁধা দেন। এর প্রতিবাদে ১ ফেব্রুয়ারী জলিরপাড় স্কুলের শিক্ষক ও কমিউনিস্ট নেতা সত্যেন্দ্রনাথ বারুরীর নেতৃত্বে ছাত্র সমাজ বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়। এদিন সকাল থেকে মাদারীপুরের খালিয়া, উল্লাহবাড়ী, মুকসুদপুরের বেদগ্রাম, ননীক্ষীর, গোহালা, বানিয়ারচর থেকে প্রায় ২ হাজার ছাত্র জনতা জলিরপাড় বাজারে এসে জমায়েত হন। তাদের সঙ্গে ছিলেন খালিয়া রাজারাম ইনস্টিটিউশনের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মহানন্দ সরকার।

দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা তোমার আমার ঠিকানা-পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার কর করতে হবে-ইত্যাদি শ্লোগান দিয়ে মিছিল শুরু করলে পুলিশ তাদের বাঁধা দেয়। ছাত্ররা পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে মিছিল করতে গেলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও লাঠিচার্জ করে। এ নিয়ে ছাত্র পুলিশের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছাত্ররা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পুলিশ জলিরপাড় টোল অফিসে আশ্রয় নেয়। দুপুরে ছাত্ররা আবার সংগঠিত হয়ে মিছিল বের করে টোল অফিস (পুলিশ ফাড়ি) এর পুলিশের ওপর হামলা চালায়। মহানন্দ সরকার অফিসের জানালা ভেঙ্গে ফেললে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ শুরু করে।

এ সময় মহানন্দ সরকার গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন। পুলিশের গুলিতে উড়ে যায় নান্টু সরকারের ডান হাত। ঐ দিন গুলিবিদ্ধ হন অন্তত ১৫ জন। এ ঘটনার পর এলাকাবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়েন।

উত্তেজিত জনতা পুলিশের গানবোট পুড়িয়ে দেয় এবং পুলিশের উপর হামলা চালায়। আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আনতে গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ আসলে আ.রাজ্জাক মুন্সি, আঃ লতিফ কাজী, মনোহর বৈরাগী ও মিহির বৈরাগীকে গ্রেফতার করে। এতে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। পুলিশের গুলিতে নিহত মহানন্দ সরকারের লাশ পোস্ট মর্টেমের জন্য গোপালগঞ্জ মর্গে নিয়ে যায় পুলিশ। পোস্ট মর্টেম শেষেও মহানন্দের লাশ তার আত্মীয়স্বজনের নিকট ফেরত দেয়নি পুলিশ।মহানন্দ সরকার ছিলেন বৃহওর ফরিদপুর জেলার মধ্যে প্রথম শহীদ ছাত্র। বর্তমান সরকার অর্ধ শতাব্দি পরে শহীদ মহানন্দ সরকারের নামে তার পৈত্রিক বাড়ী খালিয়া ইউনিয়নের পলিতা গ্রামে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করায় খুশি এলাকাবাসী। তার সম্মানে যেমন স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করা হয়েছে, তেমনিভাবে তাকে মরনোত্তর রাষ্ট্রীয় সম্মাণে ভূষিত করা হলে শহীদ মহানন্দ সরকারের আত্মার শান্তির পাশাপাশি বৃহত্তর ফরিদপুরবাসীর মধ্যে মহাজাগরণের সৃষ্টি হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন মাদারীপুরের রাজৈরের জনগন।

(বিডি/এএস/ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test