E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রায়পুরে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দোকান তুলতে প্রসাশনের বাধা

২০১৪ অক্টোবর ২১ ১৬:৩৫:৪৯
রায়পুরে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দোকান তুলতে প্রসাশনের বাধা

লক্ষ্মীপুর  প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে সম্প্রতি ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৫০ প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী গত ৫ দিনেও দোকান তুলতে না পেরে তাদের মাঝে চরম হতাশা, ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। ওই জমির উপর উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও হালাদার পরিবার ও সরকারের মধ্যে মামলা বিচারাধীন থাকায় গত শনিবার উপজেলার উত্তর চর-আবাবিল ইউনিয়ন তহসিলদার এ সরকারি খাস সম্পত্তিতে দোকান নির্মাণ না করার জন্য ব্যবসায়ীদেরকে লিখিত নোটিশ দিয়ে দোকান নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সোমবার ২০ অক্টোবর বিকেলে সরেজমিনে হায়দরগঞ্জ বাজারে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী আব্দুর রব, মোতাহিদ, মো. মজিদ ও লেদু মিয়া সহ কয়েকজন ব্যবসায়ী সাংবাদিকদের অভিযোগ করেন তারা জানান, হায়দরগঞ্জ বাজারের প্রায় ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ১০শতাংশ জমি স্থানীয় হাওলাদার পরিবারের কাছ থেকে প্রায় ৮০বছর আগে সরকার অধিগ্রহন করে নেন। তার কয়েক বছর পর হাওলাদার পরিবারের রছিম উদ্দিন হাওলাদার ও ওসমান গনি হাওলাদার সরকারের বিরুদ্বে আদালতে মামলা দায়ের করেন। যা বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।

এদিকে মামলা চলাকালীন অবস্থায় প্রায় ১৮ বছর আগে হাওলাদার পরিবারের কাঞ্চন, হুমায়ুন, ফারুক, ও বারেক হাওলাদার সহ কয়েকজন উত্তরসূরী স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও লক্ষীপুর জেলা আ’লীগের সহ- সভাপতি শহীদ উল্যা বি.এস.সি কে বাজারের পশ্চিম গলির প্রায় ছয় শতাংশ জমি দান করেন। ঐ জমি চেয়ারম্যান আবার ফারুক ও লেদু মিয়াসহ কয়েকজনের কাছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেন।

এভাবে ৫০ ব্যবসায়ী কয়েক বছর প্রতিষ্ঠান দিয়ে ব্যাবসা করে আসছিলেন। এর মাঝে গত ১৪ অক্টোবর রাতে বাজারের পশ্চিম গলিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ঐ ব্যবসায়ীদের ৪৯টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করেন। কিন্তু এ সুযোগে গত শনিবার চর আবাবিল ইউপির তহসিলদার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় দোকান না তোলার জন্য ১০ ব্যাবসায়ীকে লিখিত নোটিশ পাঠান। এতে ব্যবসায়ীরা দোকান তুলতে না পেরে এবং বিভিন্ন ব্যাংক বীমার ঋণ না দিতে পেরে তাদের মাঝে চরম হতাশা ক্ষোভ ও অসোন্তষ বিরাজ করছে। তারা এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রসাশনের কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন।

উত্তর চর আবাবিল ইউপির পরিষদের তহসিলদার আব্দুর সাত্তার বলেন, উপরের কর্মকর্তাদের নির্দেশে সরকারি এ খাস জমিতে দোকান নির্মাণ না করার জন্য এবং কাগজপত্র দেখাতে ১০ ব্যবসায়ীকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এত বছর নোটিশ দেননি কেন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ১৯৫৮ সাল থেকে হাওলাদার পরিবারের সাথে সরকারের মামলা চলে আসছে। বর্তমানে তা ন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন এবং ঐ সম্পত্তির উপরে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সুযোগে একটি প্রভাবশালী মহল ঐ জমি দখল করার আশংকায় ব্যবসায়ীদেরকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

উত্তর চর আবাবিল ইউপি চেয়ারম্যান ও লক্ষীপুর জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি শহীদ উল্যা বি.এস.সি বলেন, প্রায় ৭০ বছর ধরে হায়দরগঞ্জের হাওলাদার পরিবারের সাথে সরকারের মামলা চলে আসছে। বর্তমানে এ মামলা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে এবং ঐ জমির উপর আদালতের নিষেদাজ্ঞাও রয়েছে। ব্যবসায়ীদেরকে নোটিশ দেওয়ার বিষয়টি ভালোভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তহসিলদারকে।

হাওলাদার বংশের উত্তরসূরি ও হায়দরগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী দুলাল হাওলাদার বলেন, প্রায় ৪ বছর আগে বাজারের পশ্চিম গলির জমিগুলো সরকারের বিরুদ্বে মামলা জিতেছে হাওলাদার পরিবার। এখন তহসিলদার কি জন্য ব্যবসায়ীদেরকে নোটিশ দিয়ে হয়রানী করছে তা দেখা হচ্ছে।

রায়পুর সরকারি ভূমি কমিশনার (এসিল্যান্ড) শরীফুল ইসলাম বলেন, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ওই জমিতে দোকান নির্মাণ না করার জন্য ব্যবসায়ীদেরকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের আগে কেন নোটিশ দেওয়া হল না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এবং কাগজপত্র দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(এমআরএস/এএস/অক্টোবর ২১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test