E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

ভাতিজা বৌকে ধর্ষণ

গ্রাম মাতবরদের বিচারের নামে টালবাহানা, পালিয়ে গিয়ে আদালতে ধর্ষণ মামলা দায়ের

২০২৩ এপ্রিল ১৩ ১৮:১৪:৫৮
গ্রাম মাতবরদের বিচারের নামে টালবাহানা, পালিয়ে গিয়ে আদালতে ধর্ষণ মামলা দায়ের

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগরে রাতে ঘরে ঢুকে চাচা শ্বশুর কর্তৃক দুই সন্তানের জননী ভাতিজা বৌকে জোরপূর্বক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি গ্রাম্য মাতবররা বিচার করে দেওয়ার নাম করে তালবাহানা করতে থাকে। অবশেষে ঘটনার চারদিন পরে মাতবরদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গিয়ে গোপনে আদালতে মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার একডালা ইউনিয়নের উজালপুর গ্রামে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভিকটিমের দিনমজুর স্বামী জানান, গত ৫ এপ্রিল (বুধবার) তিনি দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের মসজিদে তারাবির নামাজ পড়তে যায়। এমতাবস্থায় বিদ্যুৎ চলে গেলে একই গ্রামের আবুল মোল্লার ছেলে দুই সন্তানের জনক জামাল উদ্দিন মোল্লা (ভুক্তভোগীর সম্পর্কে চাচা শ্বশুড়) মাটির বাড়ির উপরের জানালা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক তার স্ত্রীকে ধর্ষন করে। এরপর বিষয়টি গত ৬ এপ্রিল জানাজানি হলে গ্রামের মাতবর আনিছুর রহমান, নজরুল ইসলাম ও আব্দুল মালেক বিষয়টি মিটমাট করে দেয়ার আশ্বাস দেয় ভুক্তভোগী পরিবারকে। এরপর গত ৮ এপ্রিল (শনিবার) রাতে পলাতক জামাল উদ্দিনকে হাজির করে মাতবররা একটি শালিসে বসলে দুইজন মাতবর পূর্বে থেকে জামালের সঙ্গে আতাত করে বিষয়টি সমাধান না করেই উঠে চলে যায়। পরে ভুক্তভোগী পরিবার মাতবরদের নিকটে গেলে বলে জামাল পলাতক রয়েছে। একটু দেরি করো জামালকে খুজে বের করে বিষয়টি গ্রামেই সমাধান করার চেস্টা করছি। ঘটনার পর থেকে নিরীহ ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা থানায় গিয়ে অভিযোগ দিতে চাইলে বার বার ওই মাতবররা তাদেরকে গ্রামে বসে একটি মিটমাট করে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে আর থাানাায় তাদেরকে যেতে দেয়নি। অবশেষে নায্য বিচার পাওযার আশাায় ভুক্তভোগী পরিবার মাতবরদের ভয়ে গোপনে আদালতে গিয়ে গত ১০এপ্রিল (সোমবার) একটি মামলা দায়ের করেছে।

ভিকটিম জানায়, স্বামী দুই সন্তানকে সাথে নিয়ে মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে তিনিও নামায পড়ে শুয়ে পড়েন। এসময় চাচা শ্বশুর জামাল দ্বোতলার জানালা দিয়ে তার ঘরে প্রবেশ করে। তার সর্বনাশ না করার জন্য অনেক আকুতি মিনতি ও কান্না-কাটি করলেও ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করে চাচা শ্বশুর জামাল। গ্রামের মাতবররা বিচার করে দিবে বলে থানায় যেতে দেয়নি এবং কারোও কাছে ঘটনার কথা বলতেও দেয়নি। মাতবরদের বিচার করে দেয়ার নামে তালবাহানা ও তাদের চালাকি বুঝতে পেরে পালিয়ে গিয়ে আদালতে মামলা করেছেন। তিনি তার সর্বনাশকারী চাচা শ্বশুর জামালের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানান।

মাতবর আনিছুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগীর পরিবার অত্যন্ত গরীব। তাই আমরা চেস্টা করেছি গ্রামেই বসে একটি শান্তিপূর্ন সমাধান করে দিতে। কিন্তু ঘটনার পর থেকে আসামী জামাল উদ্দিন পলাতক থাকায় শালিসের মাধ্যমে তা সমাধান করা যায়নি।

স্থানীয় মেম্বার লুৎফর রহমান স্বপন বলেন, ওই গ্রামের মাতবররা খুবই খারাপ। কোন কিছু ঘটলে তারা সেটা গ্রামেই সমাধান করে। তারা কোন কিছু তাকেও জানায় না। এই ঘটনার পর ওই মাতবররা ভুক্তভোগী পরিবারকে তার কাছেও আসতে দেয়নি। কাউকে বলতেও দেয়নি। মাতবরদের কথা তাদের গ্রামের সমস্যা তারা গ্রামে বসেই সমাধান করবে। তাই ওই ভুক্তভোগী পরিবারকে সঠিক পরামর্শ দেয়া তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

রাণীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, এত বড় একটি ঘটনার কথা মেম্বার, চেয়ারম্যানসহ এলাকা কেউ তাকে জানায়নি। সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পেয়ে গত ১০এপ্রিল (সোমবার) রাতে ওই ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে পুলিশ পাঠালে তারা জানায় যে ওইদিনই তারা আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলার তদন্ত যদি থানার উপর নাস্ত করা হয় তাহলে সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে ওই ভুক্তভোগী পরিবারকে নায্য বিচার দিতে এবং এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

(বিএস/এসপি/এপ্রিল ১৩, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test