E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়

অর্থ নিয়ে নয় ছয়, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ

২০২৩ জুলাই ২৬ ১৭:০৮:৩০
অর্থ নিয়ে নয় ছয়, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ

জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তালেব চৌধুরীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এক টাকার জিনিস দশ টাকার রশিদ বানানো এবং বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণে আর্থিক অনিয়মসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্টের অভিযোগ এনেছেন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য মনির আহমদ।

চট্টগ্রাম জেলা অফিসার, কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ দিয়েছেন ওই অভিভাবক সদস্য। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের অভিভাবক সদস্য মনির আহমদের দেওয়া অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপিত হয় ১৯৭১ সালে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তালেব চৌধুরী প্রতিনিয়ত দুর্নীতি ও অনিয়ম করে যাচ্ছেন। তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে জিরো থেকে হিরো হয়েছেন। শিক্ষকতা ছাড়া অন্য কোন আয়ের উৎস না থাকলেও বর্তমানে অঢল অর্থ সম্পদের মালিক বনে গেছেন। এক টাকার জিনিস দশ টাকার রশিদ তৈরি করে স্কুল কমিটির সভাপতির কাছ থেকে অর্থ আদায় করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৭ সাল হতে ২০২০ সালে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ২৩শ’ থেকে ২৪’শ জন। বর্তমানে ছাত্রছাত্রী আছে মাত্র ১২শ’ মতো। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪ নং ভবনের ২য় ও ৩য় তলায় আনুমানিক ৩০ ফুট বাই ৬০ ফুট লম্বা ভবন নির্মাণ করা হয়। এতে খরচ দেখানো হয়েছে দ্বিগুণ। ১ম তলা ভবন সরকারি অনুদানে নির্মাণ করা হয়। ২য় তলা প্রায় ২৩ লক্ষ ও ৩য় তলা ২৬ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এভাবে নয়-ছয় খরচ দেখিয়ে প্রতি বছরে ১৮ লাখ টাকা থেকে ১৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। যার হিসাবও অভিযোগের কপিতে সংযুক্ত করেছেন অভিযোগদাতা।

এমনকি বর্তমান ১২শ’ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে যদি ১৮/১৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে থাকেন। তাহলে অতীতে ২৪শ’ জন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কত টাকা আত্মসাৎ করতে পারে তা অনুমানের বিষয়। চলতি মাসে ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর পরিক্ষার্থীদের ফি ছিলো ৫০০ টাকা। ৬ষ্ট শ্রেণী ও ৭ম শ্রেণীর মূল্যায়ন পরীক্ষায় ফি ছিল ৬ষ্ট শ্রেণী হতে ২০০ টাকা, ৭ম শ্রেণী থেকে ২৫০ টাকা নেওয়া। এরপরও পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের খাতা দেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই বাড়ি থেকে লিখে নিয়ে এসেছেন।

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছে মতো পরীক্ষার ফি ও ভর্তি ফি আদায় করেছেন। যা ম্যানেজিং কমিটির সাথে কোন ধরনের সমন্বয় বা আলোচনা করা হয়নি। ফলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। প্রতি বছরে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এসব ঘটনার পিছনে অন্য কেউ আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখার আবেদন করেছেন। বর্তমান যে কমিটি স্কুল পরিচালনা করছে তারা নির্বাচিত কমিটি নয়। এসব কমিটির সবাই মৌখিক ভাবে নির্বাচিত। তাই প্রধান শিক্ষক নিজের মনগড়া নিয়মনীতি বাস্তবায়ন করে বসেন। ৪৬ বছরেও কোন অডিট হয়নি। এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে তিনি প্রশাসন ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিকট সহযোগিতা চেয়েছেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তালেব চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিযোগকারী কি কারণে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিছে সেটা আমি জানি না। অভিযোগ গুলো সব ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক। মনিরের দুইজন সন্তান আমার স্কুলে ফ্রিতে পড়ালেখা করেন। তারপরও সে আমার নামে বিভিন্ন জায়গায় মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন। যদিও আমি স্কুলের উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করেছি। এটাই আমার অপরাধ। সেজন্য অভিযোগকারী অসন্তুষ্ট হয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন।’

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার প্রসার ও বিস্তারে অবদান রাখায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ কলকাতা থেকে ‘মহাত্মা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল পিস অ্যাওয়ার্ড-২০২৩ স্মারক ও সনদপত্র অর্জন করেছি। ৩৬ বছরের শিক্ষকতা জীবনে দুইবার উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছে।’

অভিযোগকারী মনির আহমদ বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম ভেঙে পড়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত আশা করছি।’

জানতে চাইলে চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় তাঁর সময় কালে করা সকল কাজ কর্মের হিসাব চেয়ে ৭ দিনের সময় বেধে একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। এখন মিটিং এ আছি বাকি কথা পরে জানাতে পারব।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র নাথ বলেন, ‘চরলক্ষ্যা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

(জেজে/এসপি/জুলাই ২৬, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test