E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মেঘনা নদীতে অবৈধ ড্রেজার, ফসলি জমি ও ভিটে বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে গ্রামবাসী

২০২৩ আগস্ট ২৪ ১৪:৩৯:২৭
মেঘনা নদীতে অবৈধ ড্রেজার, ফসলি জমি ও ভিটে বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে গ্রামবাসী

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে পড়েছে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম ও শতশত একর কৃষি জমি।

সরকারি কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধ পন্থায় বালু উত্তোলন করে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে জাহানারা কনস্ট্রাকশনসহ বেশকিছু ড্রেজার মালিকদের বিরুদ্ধে।

মেঘনা নদীতে যত্রতত্র ভাবে ড্রেজার মালিকরা নিজেদের পছন্দমত জায়গা থেকে লক্ষ লক্ষ ঘনফুট বালি উত্তোলন করে নদী ভাঙনের সৃষ্টি করলেও এসব প্রভাবশালী ড্রেজার মালিকদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায়না ভুক্তভোগী স্থানীয় গ্রামবাসী লোকজন।

মাঝেমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত দুই একটি ড্রেজার মালিককে আর্থিক জরিমানা ও ড্রেজার জব্দ করলেও তাতে কোন ফল পাচ্ছেনা ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। নদীতে নিয়মিত ২০ থেকে ২৫টি লোড ড্রেজারের মাধ্যমে দিন ও রাতের আঁধারে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে বালু উত্তোলন করলেও অধরাই থেকে যাচ্ছে বেশিরভাগ লোড ড্রেজার।

শুধু রায়পুরা উপজেলা নয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা ও আশুগঞ্জ উপজেলাসহ ভৈরব প্রান্তে মেঘনা নদীর মোহনায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে ড্রেজার মালিকগণ।

মেঘনা নদীর রায়পুরা উপজেলার সীমানায় লোড ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলনের ফলে রায়পুরার চরাঞ্চল পাড়াতলী ইউনিয়নের চাঁনপুর, চরমধুয়া, ও শ্রীনগর ইউনিয়ন ও মির্জাচর ইউনিয়নের মির্জাচর বাজারসহ প্রায় ৭/৮টি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এসব গ্রামগুলো ও ফসলি জমি বড় ধরনের হুমকির আশংকা রয়েছে। এছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও ইউনিয়নের কেদেরখোলা, শিবপুর, দাসকান্দি, নজরদৌলত ও ছয়ঘরহাটিসহ বেশকিছু গ্রাম ভবিষ্যতে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে এলাকাবাসী অসহায় লোকজন।

স্থানীয় ভুক্তভোগী লোকজনের ভাষ্য, রায়পুরার চরাঞ্চল মেঘনা নদী থেকে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে আশংকাজনক ভাবে বেড়েছে নদী ভাঙন। গত কয়েক বছরে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অন্তত কয়েকশত ঘরবাড়ি ও শতশত একর ফসলি জমি। শুধু বর্ষার মৌসুমেই নয় বছরের বেশিরভাগ সময়ই জাহানারার কনস্ট্রাকশনসহ অন্যন্য ড্রেজার মালিকগণ রায়পুরা ও নবীনগরের বিভিন্ন চরাঞ্চলসহ আশুগঞ্জ ও ভৈরবের মেঘনার মোহনাকে টার্গেট করে রাতের আঁধারে প্রতিদিন লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

নবীনগর উপজেলা ও রায়পুরা উপজেলার কয়েকটি স্থানে সরকারিভাবে বালু মহালের ইজার দিলেও। ড্রেজার মালিকগণ সরকারি অনুমতির বাহিরে অতিরিক্ত লোড ড্রেজার ব্যবহার করে তাদের পছন্দমতো জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করে বাল্কহেড নৌকার মাধ্যমে বিক্রির প্রবণতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা কোনভাবেই মানছেননা সরকারি নিয়মনীতি। এতে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার ও স্থানীয় মানুষজন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি করেন ভুক্তভোগীরা।

এদিকে চলতি বছরের ৩ আগস্ট, বৃহস্পতিবার বিকেলে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ১৫ ধারা অমান্য করে মেঘনা নদীর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সীমানায় বালু মহলে বালু উত্তোলন না করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমানা ভেদ করে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়ন এলাকায় মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে লোড ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের অভিযোগে একটি লোড ড্রেজার জব্দ করেন রায়পুরা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শফিকুল ইসলাম। পরে ড্রেজার মালিক সুলতান মিয়াকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদÐ প্রদান করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। বছরে এক দুইবার নামমাত্র এসব অভিযানের উপর ভরসা রাখতে পারছেনা এলাকাবাসী।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত ৩ আগস্ট রায়পুরা উপজেলা প্রশাসন নদীতে একটি লোড ড্রেজার জব্দ ও মালিককে জরিমানা করলেও কোন কর্ণপাত করছেনা তারা। অভিযানের পরদিন থেকেই দিনে ও রাতের আঁধারে ২০ থেকে ২৫টি লোড ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে জাহানারার কনস্ট্রাকশনসহ আরো কিছু ড্রেজার মালিক। তারা বলেন, রায়পুরার চরাঞ্চলের বেশকিছু জায়গা নদী ভাঙন এলাকা হিসেবে পরিচিত। এসব এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী ড্রেজার মালিকদের দৌরাত্ম থামাতে প্রশাসনের জোরালো ভূমিকা পালন করা দরকার বলে মনে করেন এলাকাবাসী লোকজন।

(এসএস/এএস/আগস্ট ২৪, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test