E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভৈরব উপজেলা ভেটেনারী সার্জনের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারীসহ অসংখ্য অভিযোগ

২০২৩ আগস্ট ২৬ ১৭:২৬:২৪
ভৈরব উপজেলা ভেটেনারী সার্জনের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারীসহ অসংখ্য অভিযোগ

মিলাদ হোসেন অপু, ভৈরব : কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভেটেনারী সার্জন ডা. সাইফুল আজমের বিরুদ্ধে খামারী ও সাধারণ কৃষকদের চিকিৎসা সেবা না দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও অফিস সহকারী কাম কম্পাউন্ডার শাহীনুর আক্তারের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে বলেও একাধিকবার অভিযোগ উঠেছে। 

এ ৎদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ডা. সাইফুল আজম বলছেন খামারী ফিরোজ মিয়ার কারসাজিতে এসব অভিযোগ সাজানো হয়েছে।

এ বিষয়ে আয়ান ডেইরী ফার্মের স্বত্ত্বাধিকারী ফিরোজ মিয়া বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে ডা. সাইফুল আজমের গাফিলতিতে আমার ৭টি গরু মারা গেছে। তার চিকিৎসা না পেয়ে ১ বছরে অসুস্থ হয়ে আমার ৭টি গরু মারা যাওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। ডা. সাইফুল আজমের সাথে অফিস সহকারী কাম কম্পাউন্ডার শাহীনুর আক্তারের অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। আমার খামারে গিয়ে অনেকদিন অফিস সহকারী কাম কম্পাউন্ডার শাহীনুর আক্তার ও ভেটেনারী সার্জন ডা. সাইফুল আজম সময় কাটিয়েছেন। তখন আমিও গরুর চিকিৎসা পেতাম।

এ বিষয়ে খামারী আব্দুর রউফ, হাসিম মিয়া, পলি বেগম, মজিবুর খা, কাশেম মিয়াসহ বিভিন্ন খামারীরা জানান, উপজেলার গোছামারা ও মধ্যেরচর গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে লাম্পি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে শতাধিক গরু। এ রোগে ২টি গরু মারা গেছে। প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১০৩টি গরু।

খামারীরা আরো অভিযোগ করে জানান, সরকারি কোন সুযোগ সুবিধাতো দূরের কথা ডাক্তারদের কোন দেখাই পাই না। ডাক্তার সাইফুল আজমকে ফোনে কখনো পাওয়া যায়না। অসুস্থ গরু ছাগল হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তিনি কখনো অসুস্থ পশুর ধারে কাছেও যাননা। ভৈরব উপজেলার দূরদূরান্ত এলাকা থেকে অসুস্থ পশুকে হাসপাতালে নিয়ে আসাও সম্ভব হয় না। ফলে চিকিৎসা না পেয়ে পশু মারা যায়।

গোছামারা ও মধ্যেরচর গ্রামের বেশ কয়েকজন কৃষক ও খামারীর অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে সরকারি দপ্তরে তাদের রোগাক্রান্ত গরু-বাছুর নিয়ে গেলে তাদের সাথে অসাধাচারণ করে থাকে। এমনকি মুমূর্ষু গরু-ছাগল হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তিনি কখনো নিজে গিয়ে অসুস্থ গরু, ছাগলকে চিকিৎসা দেন না। এছাড়াও তাকে কখনো ফোনেও পাওয়া যায় না।

আয়ান ডেইরী ফার্মের মালিক ফিরোজ মিয়ার লিখিত অভিযোগে জানা যায়, গত ১ বছর পূর্বে আয়ান ডেইরী ফার্মে ডা. সাইফুল আজম তার ২টি গরু রাখেন লালন পালনের জন্য। যে কোন কারণেই গরু ২টি তিনি নিয়ে যান। এরপর থেকে ১ বছর যাবত আমাকে কোন সহযোগিতা করছেনা। বিগত ৩ মাস পূর্বে তাহার অফিসের সহকারী কাম কম্পাউন্ডার শাহীনুরের সাথে অনৈতিক কাজ করতে গিয়ে কমলপুর এলাকাবাসীর হাতে আটক হয়ে লাঞ্ছিত হয়। এ ব্যাপারে আমার কাছে সহযোগিতা চাইলে আমি অপারগতা প্রকাশ করি। সেই থেকে আমার কোন গরু অসুস্থ হলে তিনি চিকিৎসা করেন না। চিকিৎসা না পেয়ে আমার খামার ধ্বংসের মুখে পড়েছে। প্রতিকার পেতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছি।

ভৈরবপুর উত্তর পাড়ার কলেজ পড়–য়া ছাত্র সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ শৈভিক এর সাথে কথা হলে সে জানায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, কোন জায়গা যেন পতিত না থাকে। বাড়ির আঙ্গিনায়ও শাক সবজি লাগানো ও পশু পালন করার পরামর্শ দেন তিনি। তার এই বক্তব্যে আমি উদ্বুদ্ধ হয়ে গত ২ বছর যাবত কবুতর, মুরগী, হাঁস ও ছাগল পালন করে আসছি। আমি এসব প্রাণির বিভিন্ন রোগের জন্য প্রায় সময়ই উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যায়। কিন্তু দুঃখজনক অদ্যবধি পর্যন্ত আমি এই হাসপাতালে কাউকে পাইনি। ইভেন্ট কোন পরামর্শ করবো এমন কোন লোকও পাইনি। যার কারণে আমার অনেক গুলি হাঁস, মুরগী ও কবুতর বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। এছাড়া উপজেলা কৃষি অফিসে গিয়ে শাক সবজি ও ফলের গাছ লাগানোর পর পরামর্শের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসেও কাউকে পায়নি।

অফিস সহকারী কাম কম্পাউন্ডার শাহীনুর আক্তার বলেন, আমার বিষয়ে মিথ্যা অভিযোগ রটানো হচ্ছে। ভেটেনারী সার্জন ডা. সাইফুল আজমের সাথে আয়ান ডেইরী ফার্মের মালিক ফিরোজ মিয়ার ব্যক্তিগত সমস্যা রয়েছে। তাই ফিরোজ আমার নাম ব্যবহার করে আমার মানহানি করছেন।

এ প্রসঙ্গে ভৈরব উপজেলা ভেটেনারী সার্জন ডা. সাইফুল আজম জানান, এটা খুবই দুঃখজনক যে, শৈভিক আমাকে পাইনি। কিন্তু আমার জানামতে আমরা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন খামারী ও অন্যান্য পশু, পাখির চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমার বিরুদ্ধে পরকিয়া নিয়ে যে অভিযোগ করা হয়েছে সেটি ভিত্তিহীন ও সাজানো ঘটনা। আয়ান ডেইরী ফার্মের মালিক ফিরোজ মিয়া আমার বিরুদ্ধে অহেতুক কুৎসা রটাচ্ছেন। আমি এসব বিষয়ের আইনগত ব্যবস্থা নিবো।

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনিরুজ্জামান জানান, আমার অফিসে কর্মকর্তা পাওয়া যায় না অভিযোগটি মিথ্যা। কারণ আমার অফিসের স্টাফরা কোন কাজে বাহিরে গেলে মুভমেন্ট বইয়ে এন্ট্রি করা থাকে। ডা. সাইফুল আজমের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অফিস সহকারী কাম কম্পাউন্ডার শাহীনুর আক্তারকে ইতিমধ্যে অন্যত্র বদলী করা হয়েছে। তবে কোন অভিযোগের ভিত্তিতে বদলী করা হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ জানান, প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তারা সেবাগ্রহীতাদের সেবা প্রদান করে না এমন অভিযোগ আসলেই দুঃখজনক। তবে আমি যতটা জেনেছি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ডা. সাইফুল আজমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগকারী ফিরোজকে একাধিকবার দেখা করার জন্য বললেও তিনি আমার অফিসে আসেনি।

(এমএ/এসপি/আগস্ট ২৬, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test