E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুদের টাকা না পেয়ে ভেঙে নেওয়া সেই বসতঘরটি তৈরি করে দিলেন আরিফুল

২০২৩ সেপ্টেম্বর ২৭ ২০:২৩:১৬
সুদের টাকা না পেয়ে ভেঙে নেওয়া সেই বসতঘরটি তৈরি করে দিলেন আরিফুল

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা কেন্দুয়া : “সুদের টাকা না পেয়ে বসতঘর ভেঙে নেওয়ার অভিযোগ” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। গত ২৩ সেপ্টেম্বর শনিবার সংবাদটি প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। কেন্দুয়া থানা পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর চাপ সৃষ্টি সহ সুদের টাকার জন্য ঘর ভেঙে নেওয়া মহাজন আরিফুলের উপর। পুলিশ তাকে আটকেরও চেষ্টা করে অভিযান চালায়। পরে কোন উপায় না পেয়ে গ্রাম্য মাতব্বরগণের দ্বারস্থ হন আরিফুল। গ্রাম সালিশের সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই ভেঙে নেওয়া বসতঘরটি নতুন করে তৈরি করে দিয়ে মামলা থেকে রক্ষা পান আরিফুল ইসলাম। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার ১২ নং রোয়াইলবাড়ী আমতলা ইউনিয়ানের পাথাইরকোনা গ্রামে।

জানা যায় ওই গ্রামের হিরন মিয়া নামের এক ব্যাক্তি একই গ্রামের আরিফুলের কাছ থেকে ২০ শতাংশ সুদে ৪০ হাজার টাকা নেন। বহুদিন সুদ দেওয়ার পর মহাজনের ২৪ হাজার টাকা পরিশোধ করেন হিরন। বাকি ১৬ হাজার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় হিরনকে নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করে আসছিলেন আরিফুল। আরিফুলের টাকা ছাড়াও অন্যান্য ঋণের চাপে মা হামিদা আক্তারকে তার বসতঘরে রেখে স্ত্রী সন্তান নিয়ে অন্যত্র চলে যান হিরন। এরই মধ্যেই গত ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে হিরনের দোছালা টিনের ঘরটি ভেঙে নেন আরিফুল। তার সঙ্গে ঘর ভাঙতে যান রঞ্জু মিয়া, বাবুল মিয়া, শিপুল মিয়া, শিরিন আক্তার, ও কাঠমিস্ত্রী শাহজাহান মিয়া।

হিরনের মা হামিদা আক্তার বলেন আমি সেদিন ঘরেই ছিলাম ঘর ভাঙার সময় আরিফুলকে অনুরোধ করেছি, আমার ছেলে হিরনের বসতঘরটি ভেঙে নিবেন না। সময় সুযোগ মতো টাকা দিয়ে দিবে কিন্তু আরিফুল আমার অনুরোধ রক্ষা না করে সেদিন জোর করে আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে আমার ছেলের বসতঘরটি ভেঙে নিয়েছিল। বুধবার বিকেলে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হিরনের মা হামিদা ঘরের পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন। তার চোখে মুখে হাসির ঝিলিক।

এই প্রতিনিধিকে দেখেই তিনি বলতে থাকেন আপনি পত্রিকায় খবর তোলার পর পুলিশ আরিফুলকে খুব চাপ দিছে। পরে গ্রামের মাতব্বরগণের কাছে গেলে মাতব্বরগণ দরবার করেন। এই দরবারে আরিফুল আমার ছেলে হিরনের বসতঘর ভেঙে নেওয়ার দোষ স্বীকার করে ঘর তৈরি করে দেওয়ার কথা বললে মাতব্বারগণ তা মেনে নেয়।

তিনি বলেন মঙ্গলবার থেকে ঘর তৈরি করা শুরু করে আজকে বুধবারে ঘর তৈরি করা শেষ হয়েছে। আমার ছেলের ঘরটি যেমন ছিল, তেমন একটি ঘর তৈরি করে দেওয়ায় আমি খুব খুশি। আমার ছেলে রুবেল আর আরিফুলের বিরুদ্ধে মামলা করবে না।

মহাজন আরিফুল ইসলামের কাছে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি হিরনের কাছে টাকা পেতাম। ওই টাকা না দেওয়ায় আমি হিরনের বসতঘর ভেঙে নিয়েছিলাম। এটি আমার ভুল ছিল। তাই আমি গ্রাম্য সালিশের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে হিরনের বসতঘরটি যেমন ছিল তেমন একটি ঘর তৈরি করে দিয়েছি। ঘর তৈরি করে দিতে পেরে আমিও মনের দিক থেকে খুব শান্তি পাচ্ছি। গ্রাম্য মাতব্বর ও সাবেক ইউপি মেম্বার মোকাররম হোসেন বলেন, সুদের টাকার জন্য আরিফুল হিরনের বসতঘর ভেঙে নিয়েছিলেন। এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছিল হিরনের ভাই রুবেল। পরে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয় পুলিশ।

২৫ সেপ্টেম্বর রাতে গ্রামের মুরব্বি মঞ্জু মিয়ার সভাপতিত্ত্বে সাবেক মেম্বার এনামুল হক শাহ্ বাড়িতে সালিশ বসে। ওই সালিশে আরিফুল ভুল স্বীকার করে হিরনের ঘর তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। ওই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আরিফুল বুধবার বিকেলে হিরনের ঘরটি তৈরি করার কাজ শেষ করেন। এভাবেই দুই পক্ষের মধ্যে মিমাংসা করা হয়।

রুবেল মিয়া জানান গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে ভেঙে নেওয়া তৈরি করে দেওয়ায় আরিফুলের বিরুদ্ধে আর কোন মামলা করব না। আজকেই থানায় গিয়ে মিমাংসার জন্য লিখিত দিব।

এ ব্যাপারে কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: এনামুল হক বলেন, দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদটি বস্তুনিষ্ঠ ছিল। পুলিশ আরিফুলকে ঘর ভেঙে নেওয়ার বিষয়ে চাপসহ আটকের চেষ্টা চালালে আরিফুল গ্রাম্য মাতব্বারগণের দ্বারস্থ হন। এবং সেই সালিশের সিদ্ধান্ত মোতাবেক হিরনের বসতঘরটি তৈরি করে দেন। হিরনের ভাই রুবেল যে অভিযোগ দিয়েছিলেন ঘর তৈরি করে দেওয়ার পর তিনি আর মামলা করতে আগ্রহী না। তাই তারা আপোস মিমাংসার জন্য লিখিত দিয়েছেন।

(এসবি/এএস/সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test