E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ধার দেয়া টাকা ফেরত পেতে হালখাতা

২০২৪ জানুয়ারি ১৩ ১৬:৫১:১৬
ধার দেয়া টাকা ফেরত পেতে হালখাতা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : যুগ যুগ ধরে দোকানের বাকীর টাকা তুলতে হালখাতার আয়োজন করা হলেও কুড়িগ্রামে ঘটেছে এক ব্যতিক্রমি ঘটনা। জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীরঝাড় এমএম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল আউয়াল ধার দেয়া টাকা তুলতে করেছেন হালখাতার আয়োজন। আর এ হালখাতায় সারা দিয়েছেন টাকা ধার নেয়া পরিচিতজনসহ বন্ধুরাও।

যে কেউ দেখে যে কোন অনুষ্ঠান মনে করলেও এটি আসলে ধারের টাকা উত্তোলনে হালখাতার আয়োজন। পরিচিতজন ও বন্ধুদের বিনা শর্তে ধার দেয়া টাকা উত্তোলনে এই আয়োজন করেছেন তিনি।

শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার কুড়িগ্রাম-সোনাহাট সড়কের অন্ধারীরঝাড় বাজারে ছামিয়ানা টাঙ্গিয়ে টেবিল চেয়ার নিয়ে বসে আছেন টাকা ধার দেয়া মহাজন শিক্ষক আব্দুল আউয়াল সরকার। এই হালখাতায় টাকা ধার নেয়া ব্যক্তিরা এসে শিক্ষকের হাতে টাকা তুলে দিয়ে পরিশোধ করে সারছেন দায়। আর খাতায় তালিকা করে টাকা গুণে নিয়ে হাতে তুলে দিচ্ছেন বিরিয়ানীর প্যাকেটও।

অভুতপুর্ব আয়োজনের মাধ্যমে পরপোকারী আব্দুল আউয়াল সরকারের কাছে ধার নেয়া টাকা ফেরত দিতে পেরে খুশি সুপিরচিতজন ও বন্ধুরা। তারা জানান, বর্তমান সময়ে ধার নেয়া টাকা কেউ ফেরত দিতে চান না। তার এই ধারের হালখাতার মাধ্যমে বিপদে-আপদে ধার নেয়ার প্রচলনটি টিকে থাকবে বলে মনে করছেন তারা।

হালখাতা করতে আসা যোবাইদুল ইসলাম নামের একজন বলেন, আমি গত ৬ মাস আগে আমার মেয়ের ভর্তির বিষয়ে তার কাছ থেকে ৬ হাজার ৫শ টাকা ধার নিয়েছি। পরে সমস্যার কারণে টাকা দিতে পারি নাই।

নির্বাচনের আগে আমার বাসায় হালখাতার চিঠি দিয়েছেন তিনি। আজ এসে টাকা পরিশোধ করলাম। টাকা পাইলে দিতে হবে এটা ঠিক। কিন্তু হালখাতার মাধ্যমে ধার করা টাকা আদায়ের ঘটনা আমার জীবনে প্রথম দেখলাম। পাওনা টাকা দিতে পেরে আমারও ভালো লাগছে।

এ বিষয়ে শিক্ষার আব্দুল আউয়াল সরকার বলেন, দীর্ঘ দিনের ধার দেয়া টাকা আমি আমার বন্ধু বান্ধবের কাছে লজ্জায় চাইতে পারি না। তাই এক বন্ধুর দোকানে হালখাতা খেতে গিয়ে এই হালখাতার চিন্তা আমার মাথায় আসে। পরে হালখাতার আয়োজন করে টাকা তুলেছি। একজনের বিপদ একজন পাশে দাঁড়াবে এটাই স্বাভাবিক। এই চিন্তা থেকেই আমি টাকা ধার দিতাম। তবে আমার কাছে টাকা থাকলে, কেউ চাইলে আমি না করতে পারি না, এটা আমার বড় সমস্যা।

তিনি আরও বলেন, টাকা মানুষকে ধার দেই এ কারণে আমার মা আমাকে অনেক গালাগালি করতেন। আমিও অনেক বার প্রতিজ্ঞা করেছি আর কাউকে টাকা ধার দিবো না। তবে প্রতিজ্ঞা রাখতে পারি না।

শিক্ষক আব্দুল আউয়াল বলেন, কিছু লোক আছে ২ দিনের কথা বলে টাকা ধার নিয়ে দীর্ঘ সময়েও দেয় না।

এভাবেই দেখা গেছে আমার সাড়ে তিন লাখ টাকা বন্ধু বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের কাছে পড়ে আছে। যাইহোক অর্থেক টাকা তুলতে পেরেছি। আসা করছি বাকি টাকাটাও উঠবে। অনেকে ঢাকায় আছে তাই তারা হালখাতায় আসতে পারে নাই। তারা আমাকে ফোন করেছে এসে টাকা দিয়ে দিবে।

জানা গেছে, গত ৩ বছর যাবৎ ৩৯ জনকে তাদের অনুরোধে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা ধার দেন শিক্ষক আব্দুল আউয়াল সরকার। দুই সপ্তাহ আগে ধারের টাকা আদায়ে হালখাতার জন্য চিঠি দেন তাদের। এর মধ্যে প্রায় ২০ জন হালখাতার মাধ্যমে দেড় লাখ টাকা পরিশোধ করেন। শিক্ষক আব্দুল আউয়াল সরকার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার জয়মনির হাট ইউনিয়নের হাইকুমারীপাতি গ্রামের মৃত আব্দুস ছামাদের ছেলে।

(পিএস/এএস/জানুয়ারি ১৩, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test