E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সৌদি আরবে কর্মরত নির্যাতিত নারীকে বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টার অভিযোগ

২০২৪ জানুয়ারি ১৪ ০০:২৪:৩৪
সৌদি আরবে কর্মরত নির্যাতিত নারীকে বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টার অভিযোগ

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সৌদি আরবে কর্মরত এক নির্যাতিত নারীকে   উদ্ধারের নামে পাকিস্তানি বাসিন্দার মাধ্যমে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টাকারি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিকড়ি গ্রামের কবীর হোসেন সরদার ওরফে পলাশের বিরুদ্ধে ওই নারীর কাছ পুলিশের সহায়তায় দেড় লাখ টাকা আদায়ের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক তকবির হুসাইনের মাধ্যমে এ টাকা আদায়ের চেষ্টা করা হয়।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খলিলনগর গ্রামের দুই সন্তানের জননী এক নারী জানান, সংসারে অভাবের কারণে তার স্বামী তাকে ২০২১ সালের ৪ ডিসেম্বর মেসার্স জাবের ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে সৌদি আরবে পাঠান। সৌদি আরবের হাতালাল পাকার থানার দালালা গ্রামের কাবিলার নামে এক ব্যক্তির বাসায় কাজ দেওয়া হয় তাকে। গৃহকর্তা তার মূল পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে নেন। সেখানে একদিন যেতে না যেতে তার উপর চলতো অমানুষিক যৌন নির্যাতন।

একপর্যায়ে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্বামীকে বলা হয়। স্বামীর চাচাতো ভাই সোহাগ হোসেনের পরামর্শে রিয়াদে কাঠের মিস্ত্রী হিসাবে কর্মরত সদর উপজেলার শিকড়ি গ্রামের হাফিজুর সরদারের ছেলে কবীর হোসেন ওরফে পলাশ তার(নারী) সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। তাকে পালিয়ে আসতে সহযোগিতা করার নিশ্চয়তা দেন পলাশ। একদিন কৌশলে কাবিলার বাড়ি থেকে পালিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর পলাশের পাঠানো একটি প্রাইভেটকারে তাকে তুলে নেওয়া হয়। গাড়ির ভিতরে থাকা এক পাকিস্তানি যুবক তাকে একটি স্থানে নামিয়ে কাছে থাকা মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা নিয়ে পলাশের বাসায় আটকে রাখে। সেখানে তাকে ১০ দিন ধরে ধর্ষণ করে ওই পাকিস্তানি। বিষয়টি পলাশকে জানানো হলে সে বলে যে, ওই পাকিস্তানির কথা মতো তাকে চলতে হবে। একপর্যায়ে সেখানকার এক বাংলাদেশী নারী তাকে (ভিকটিম) পাচারের হাত থেকে জীবনে বাঁচতে হলে পালিয়ে রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশী দূতাবাসে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পথ খরচের জন্য তাকে দেন ১২০ রিয়াল। একপর্যায়ে ২০ রিয়াল খরচ করে ওই নারী বাংলাদেশী দূতাবাসে পৌঁছান। সেখানে পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে না পারায় তাকে সাত মাস কারাভোগ করতে হয়।

ওই নারীর স্বামী জানান, স্ত্রীর বিপদ বুঝে তাকে সরকারি খরচে ফিরিয়ে আনার জন্য গত বছরের ১৯ জুলাই সাতক্ষীরা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে আবেদন করেন। একই সাথে রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিকের মাধ্যমে মাধ্যমে সাতক্ষীরার মানবাধিকার কর্মী রঘুনাথ খাঁ’র শরনাপন্ন হন তিনি। কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের পরামর্শে ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট এর মাধ্যমে স্ত্রীর জন্য বিমানের টিকিট বাবদ খরচ পাঠানো হয়। গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে চড়ে দেশে ফেরেন তার স্ত্রী।

নির্যাতিত ওই নারী আরো জানান, তিনি দেশে ফেরার কয়েক দিনপর দেশে ফেরে পলাশ। একপর্যায়ে তাকে কুপ্রস্তাব দিতে থাকে সে। কুপ্রস্তাবে রাজী না হলে তার পুলিশ ও পুলিশের সোর্সকে ব্যবহার করে তার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা আদায় করে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। বিষয়টি তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মেহেদী হাসান দোলন, যশোর ও সাতক্ষীরার এক মানবাধিকার কর্মীকে অবহিত করেন।

গত বৃহষ্পতিবার সদর থানার উপপরিদর্শক হুসাইন মোবাইল ফোনে পলাশের পাওনা টাকা নিয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে থানায় আসতে বলেন। সকাল ১১টায় তিনি স্ত্রী ও নবম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে থানায় যান। থানা ভবনের দোতলায় ডেকে কোন প্রমাণ ছাড়াই জোরপূর্বক দেড় লাখ টাকা পলাশকে দিতে বলেন উপপরিদর্শক তকিবর । এ সময় পলাশের সঙ্গে পুলিশের অরো দুই সোর্স উপস্থিত ছিলো । টাকা না দিলে তাদের যেতে দেওয়া হবে না বলায় বিষয়টি এক মানবাধিকার কর্মীকে জাননো হয়। এরপরপরই পলাশ ও দুই পুলিশের সোর্স তাদেরকে বলে যে, বেশি বাড়াবাড়ি করলে গাজা ও ইয়াবা দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হবে। মানবাধিকার কর্মী যাবেন একথা জানতে পেরে তাদেরকে চলে যেতে বলে তকিবর রহমান ও পলাশ নীচে নেমে আসেন। এরই মধ্যে ওই মানবাধিকার কর্মী থানায় যেয়ে জানতে চাইলে তকিবর রহমান ও পলাশের সঙ্গে তার বচসা হয়। বিষয়টি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ পরিদর্শক নজরুল ইসলামকে জানালে তকিবর রহমান টাকা দিতে বলার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

এদিকে স্থানীয় একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানান, পলাশ এ পর্যন্ত পাঁচটি বিয়ে করেছে। সম্প্রতি এক মাস আগে সে বৈকারীতে আরো একটি বিয়ে করেছে। তার বিরুদ্ধে বিয়ে করে ও বিদেশে কাজ দেওয়ার নাম করে নারী পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কবীর হোসেন পলাশ তার বিরুদ্ধে কোন নারীকে পাকিস্তানি বা অন্য কোন ব্যক্তির কাছে বিক্রির চেষ্টা ও ওই নারীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ওই নারীকে বিপদ থেকে বাঁচানোর জন্য প্রাইভেটকার ভাড়া, তার বাসায় নিয়ে খাওয়ানো ও দেশে পাঠানোর জন্য তিনি দেড় লাখ টাকা খরচ করেছেন। তার কাছে এর কোন প্রমাণ না থাকলেও তিনি দাবিদার।

সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক তকিবর রহমান বলেন, ওই নারীর কাছে পাওনা টাকার বিষয়ে কোন কথা বলার অধিকার তার (এ প্রতিবেদকের) নেই। টাকা কেন দিতে বলা হয়েছে তার কোন উত্তর দেবেন না তিনি।

সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, তিনি বিষয়টি নিয়ে তকিবর হুসাইনের কাছে জানতে চাইলে ওই নারীর কাছে দেড় াখ টাকা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে উভয়পক্ষকে স্থানীয়ভাবে মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শের কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

(আরকে/এএস/জানুয়ারি ১৪, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test