E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরা সিটি কলেজ

জেলে যাওয়া ও চাকরি যাওয়ার আতঙ্কে শিক্ষক কর্মচারিরা

২০২৪ জানুয়ারি ২০ ১৬:২৫:৪০
জেলে যাওয়া ও চাকরি যাওয়ার আতঙ্কে শিক্ষক কর্মচারিরা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : একদিন দুর্নীতি দমন কমিশন, অন্যদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার জন্য বগলদাবা করে কাগজপত্র বয়ে বেড়াচ্ছেন সিটি কলেজের সাবেক ও বর্তমান অধ্যক্ষ, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ। ঘরে বসে নেই সাবেক এক সভাপতি। এই বুঝি থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ে এমন আশঙ্কায় তিনি সাবেক ও বর্তমান অধ্যক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে চলেছেন।

এ ছাড়া পূর্বে দুদকের দায়েরকৃত দূর্ণীতির মামলায় আসামী হয়ে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীরিক্ষা প্রতিবেদনে বেতন ফেরতপূর্বক এমপওি বাতিলের সুপারিশে আতঙ্কিত রয়েছেন জামায়ত নেতা জাহাঙ্গীর আলমসহ অনকে।একইসাথে কলেজে ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচ মাস চাকুরি করে এক মাসের টাকা ফেরৎ দিয়ে নিয়ম বহির্ভুতভাবে এমপিওভুক্ত হওয়া রুনা লায়লা রয়েছেন চরম আতঙ্কে। এরমধ্যেও প্রায় ২০টি শূন্য পদে এমপিওভুক্তির জন্য অপেক্ষমান ননএমপওি শিক্ষকদের পাশ কাটিয়ে অন্যদের নিকট থেকে চাকরি দেওয়ার নামে অগ্রিম নেওয়া টাকা ফেরতের জন্য দেন দরবার এবং সর্বোপরি চরম নৈরাজ্যকর পরস্থিতিতে আশংকাজনকভাবে শিক্ষার্থী কমে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদের বেতন বন্ধ হওয়ায় আশঙ্কায় চরম অস্থিরতা তৈরী হয়ছেে সাতক্ষীরা সিটি কলেজে। এরই মধ্যে আহবায়ক কমিটি গঠণের ২৪ ঘণ্টা না যেতেই তা বাতিল করে দেওয়ায় বিভিন্ন মহলের দড়ি টানাটানিতে তা গড়াতে পারে হাইকোর্টে।

বৃহস্পতবিার শেখ রাসেলের জন্মদিন পালন উপলক্ষে কলেজটিতে যেয়ে উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষক কর্মচারীর সাথে আলাপকালে এধরণরে হাজারো তথ্য বেরিয়ে আসে। তবে শিক্ষক কর্মচারীদের কেউ পত্রকিায় তাদরে নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। একজন শিক্ষক বলনে, চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে বর্তমানে কলেজটির শিক্ষার্থীর জন্যই সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে।

তিনি এইচএসসি ও ডিগ্রি পর্যায়ের একটি বিভাগের নাম উল্লখে করে বলেন, সেখানেো বর্তমানে শিক্ষার্থী রয়েছে সাতজন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষক রয়েছেন নয়জন। এই নয়জন শিক্ষক সাতজন শিক্ষার্থীকে পড়িয়ে প্রতিমাসে তিন লক্ষাধিক টাকা বেতন তুলছেন। বিষয়টি মন্ত্রণালয় জানতে পারলে সকলের বেতন বন্ধ হবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের শিক্ষার্থী বাড়ানোসহ এব্যাপারে কোন মাথাব্যথা নইে। সেখানে টাকা দেওয়ার বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। আরো একাধিক বিভাগে এই একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে তনিি নিশ্চিত করেন।

অপর একজন শিক্ষক বলেন, ননএমপওি শিক্ষক হিসেবে একযুগেরও বেশী সময় আগে তিনি কলজেটিতে যোগদান করেন। কয়কে বছর পর তার সাবজেক্টে একটি পদ শূন্য হয়। জনবল কাঠামো অনুযায়ী সিনিয়র হিসাবেে তার ঐ পদে স্বাভাবিক নিয়মেই এমপিও হওয়ার কথা। তারপরও চাপ প্রয়োগ করে কলেজ পরিচালনা পরিষদের তৎকালীন সভাপতি তিন লাখ টাকা এবং অধ্যক্ষ সাড়ে তিন লাখ টাকা গ্রহণ করেন। পরে অপর একজন বেশী টাকা দেওয়ায় তথ্য ও কাগজপত্র জালিয়াতি করে সেই ব্যক্তিকে সিনিয়র দেখিয়ে এমপিও করানো হয়। তাকে পরবর্তীতে এমপিও করানো হবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে সভাপতি ও অধ্যক্ষের নেওয়া সাড়ে ৬ লাখ টাকা ফেরৎ দেওয়া হয়নি। ক্রন্দনরত অবস্থায় তিনি বলেন, তার বিভাগে আবারো একটি পদশূন্য হয়েছে। শুনেছি বর্তমান অধ্যক্ষ নতুন একজনের নিকট থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, নতুন চাকরি করার আর বয়স নইে। তাছাড়া প্রথমবার এমপিও হওয়ায় সুযোগ তৈরীর সময় সাড়ে ৬ লাখ টাকা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তিনি তার সহায় সম্পত্তি খুইয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে টাকা দিয়েছেন। এখন তার এমপিওভুক্তি না হলে আত্মহত্যা করা ছাড়া তার আর কোন উপায় থাকবে না বলে তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।

অপর একজন শিক্ষক বলেন, ২০১৫ সালরে ২২ অক্টোবর থেকে বেসরকারি কলেজের শিক্ষক নিয়োগ এনটিআরসিএ এর অধীনে চলে যায়। তবে,যেসব শিক্ষক এই পরিপত্র জারির পূর্ব থকেে ননএমপিও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলো তাদের ক্ষেত্রেও এই নীতিমালা শিথিল করা হয়। কিন্তু কাগজপত্র জালিয়াতি করে পূর্বের নিয়োগপ্রাপ্ত দেখিয়ে পরর্বতীতে ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নতুন ২১জনকে এমপিওভুক্ত করা হয়। এছাড়াও অনার্স মাস্টার্সে আরো ২৪জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ঐ শিক্ষক বলেন, এই শিক্ষকদের প্রত্যেকের নিকট থেকে নিয়োগের সময় ১০/১২ লাখ এবং এমপিওভুক্তির সময় আরো ৪/৫ লাখ টাকা নেওয়া হয়। সবমিলিয়ে এমপিওভুক্ত এবং অনার্স মাস্টার্স এই ৪৫জন শিক্ষকের নিকট থেকে ৫/৬ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে।

অপর একজন শিক্ষক জানান, শিক্ষা মন্ত্রাণালয়ের ২০১৮ সালরে ২৮ আগষ্ট এবং ২০১৯ সালরে ১২ মার্চ জারিকৃত পরিপত্র উপেক্ষা করে অনার্স শাখায় নিয়োগপ্রাপ্ত ১২জন শিক্ষকের তথ্য জালিয়াতি করে মাউসিতে পাঠানো হয়। তাদের প্রত্যেকের নিকট থকেে প্রথম পর্যায়ে ৫ থকেে ৭ লাখ টাকা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হলে তথ্য জালিয়াতির বিষয়টি তদন্তে প্রমানতি হয় এবং এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তাদের ১২ জনের নিকট থেকে আদায় করা ৭০ লক্ষাধিক টাকা ফেরৎ না দিয়ে পরর্বতীতে তাদরেকে এমপিওভুক্ত করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু টাকা ফেরৎ বা এমপিওভুক্তি কোনটাই আজো হয়নি।

সূত্রটি আরো জানায়, নতুন এমপিওভুক্তির জন্য শূন্য পদ দেখিয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষক চেয়ে এনটিআরসি এ বরাবর তালিকাসহ আবেদনের জন্য চারবার গণবজ্ঞিপ্তি জারি হলেও সাতক্ষীরা সিটি কলেজ কোন তালিকা পাঠায়নি। বর্তমানে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষকদের প্রায় ২০টি পদ শূন্য রয়েছে। এসব পদে মোটা অংকের বানিজ্যের জন্য নাম পাঠানো হচ্ছে না বলে সূত্রটি নশ্চিতি কর।

এদিকে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু সাইদসহ ইতিপূর্বে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত চারজন শিক্ষক দুদকরে মামলায় হাজতবাসের পর কারামুক্ত হয়েছেন। শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে একজন শিক্ষক অস্থায়ী জামিনে আছেন। এরমধ্যে র্বতমানে চাকুরীরত ৪ জন সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় রয়েছেন। এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীরিক্ষা প্রতিবেদনে তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া দুইজন শিক্ষক ও একজন লাইব্রেয়িয়ানের গ্রহণ করা সমুদয় বপতন ফেরতসহ এমপিও বাতিলের নির্দেশে দেওয়া হয়। অপরদিকেও দুর্ণীতি দমন কমশিন সাতক্ষীরা সিটি কলেজের পাহাড় পরিমান দুর্ণীতির তদন্তে প্রতিমাসেই কলেজের বর্তমান ও সাবেক অধ্যক্ষ, শিক্ষক, র্কমচারী এবং বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বপালনকারি গর্ভনিং কমিটির সভাপতসিহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ডেকে পাঠাচ্ছেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও তাদেরকে বিভিন্ন সময়ে ডেকে পাঠাচ্ছপন। কিন্তু কলেজের অধ্যক্ষ, কলেজ পরিচালনা কমিটিসহ প্রভাবশালীরা বিষয়গুলো অবৈধ অর্থের বিনিময়ে ধাপাচাপা দেওয়ার এখনো চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এমন অবস্থায় কলেজটিতে নতুন করে কমপক্ষে ৫/৬ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য এবং পূর্বের দূর্ণীতি ধামাচাপা দিয়ে রাখতে নিজেদের পছন্দের কলেজ পরিচালনা পরিষদ গঠনের জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে দুর্ণীতির সাথে জড়িত মহলটি।তাদের পছন্দের কমিটি না হওয়া পর্যন্ত এ অস্থিরতা নিরসন হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে জানান বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য প্রদানকারী ব্যক্তবর্গ।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ২০, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test