E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বন উজাড় করে পোড়ানো হচ্ছে ইট

ময়মনসিংহে অবৈধ ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যকরী পদক্ষেপ নেই

২০২৪ জানুয়ারি ২২ ১৮:৩২:৪৭
ময়মনসিংহে অবৈধ ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যকরী পদক্ষেপ নেই

নীহার রঞ্জন কুন্ডু, ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ জেলার মোট ২৩৯টি ইটভাটার মধ্যে ১৯৬টির পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। মাত্র ৪৩টি ইটভাটা বৈধ বলে অনুমোদিত। পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ও জ্বালানি হিসেবে নিষিদ্ধ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে বেশির ভাগ ইটভাটায়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের নিয়মিত অভিযানে বেশ কিছু অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিছু ভাটা মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। ছাড়পত্র না পাওয়া ভাটাগুলোর বেশির ভাগই সনাতন পদ্ধতির ১২০ ফুট চিমনি ব্যবহার করছে। কিছু চিমনি আবার জিগজাগ পদ্ধতির। এসব চিমনি ব্যবহার আইনত নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয়।

তবে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে নামমাত্র লোক দেখানো অভিযান চলে। বেশির ভাগ ভাটাই নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে চালু রয়েছে প্রশাসনের নাকের ডগায়।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে ১১টি উপজেলায় অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩৫টি, ত্রিশালে ৩৭টি, ভালুকায় ২০টি, গফরগাঁওয়ে ১৮টি, নান্দাইলে ১৮টি, ঈশ্বরগঞ্জে চারটি, গৌরীপুরে ১২টি, মুক্তাগাছায় ১৯টি, ফুলবাড়িয়ায় ১৫টি, ফুলপুরে ৮টি ও হালুয়াঘাটে ১০টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। এবং বেশীর ভাগ ইট ভাটায় লাকড়ী দিয়ে ইট পোড়ানো হয়, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পথে। প্রত্যাহ শত শত আম/ কাঠাল বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কর্তন করে বন উজার করে চলেছে।

সূত্রে জানা গেছে গফরগাঁওয়ে অবৈধ ভাবে পরিচালিত "ইট ভাটাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হইলো" এমন নোটিশ ৮টি ভাটাকে প্রদান করা হয়। অপর দিকে "ভাটার কার্যক্রম বন্ধের নোটিশ প্রদান করা হইল" এমন নোটিশ ৮টি ভাটাকে প্রদান করা হয়। এর মধ্য হতে তিন ভাটার উপর একাধিকবার অভিযান পরিচালিত হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।

অবৈধ প্রতিটি ইট ভাটার মালিকদের কারণ দর্শানো ও বন্ধের নোটিশ দেওয়া হলেও কেন তিনটি ইট ভাটায় একাধিকরার অভিযান পরিচালনা করা হলো? ৮ নং শান্তা খান ব্রিকস একলক্ষ টাকা ৯ নং বিবিএম ব্রিক্স তিন লক্ষ টাকা, ১১নং পারভেজ এন্টারপ্রাইজ তিন লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

এর আগেও দুবার জরিমানা করা হয়। অন্যান্য গুলো কেন অভিযান পরিচালনা থেকে বাদ পড়লো? একাধিক ইটভাটা সূত্রে জানা যায় প্রতিটি ভাটা থেকে সিজন শুরু হলে দের লক্ষ টাকা সমিতির মাধ্যমে দিতে হয়। সমিতির কর্তাব্যক্তিরা এ টাকা বিভিন্ন ফান্ডের নামে জমা দেন। আবার অভিযান সামলাতে ম্যানেজ করতে হয় কতিপয় কর্তাব্যক্তিদের। এসকল অনিয়মকে নিয়মে পরিনত করার জন্য কারা দায়ী! যারা সততার সাথে কাজ করবেন ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, তারাই যদি জড়িয়ে পড়েন অপকর্মে, তাহলে বুঝতে হবে তাদের সিন্ডিকেট অনেক বড় শক্তিশালী।

রবিবার (২১ জানুয়ারি) এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক দিলরুবা আহমেদ বলেন, আদালতের আদেশ অমান্য করে ২০২২ইং সালে ইটভাটার নাম পরিবর্তন করে ইট পোড়ানোর কাজ চালানো এবং আদালত অবমাননা সংক্রান্ত পিটিশন নং২৪/২৩ এবং লিভ টু আপিল নং ২২৮৮/২৩ ইং চলমান বা থাকা অবস্থায় চলছিল এ সকল ইট ভাটা।

তিনি আরো বলেন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ সংশোধন) আইন ২০১৯ অনুযায়ী বিশেষ কোন স্থাপনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, লোকালয় রেলপথ, নৌপথ স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ইট ভাটা স্থাপন করতে হবে। এই বিষয় শুলো গুরুত্ব দিয়ে অভিযান চলছে। অবৈধ ইট ভাটায় অভিযান চলবে।

তবে ত্রিশাল উপজেলার বিভিন্ন ইট ভাটার মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন প্রশাসন ম্যানেজ করেই আমরা ভাটা চালাই, এতে মাঝে মাঝে খরচ একটু বেশী হয়ে যায়- বিবিসি ব্রিক্স, জনতা ব্রিক্স ময়মনসিংহ সদরের শাপলা ব্রিক্স, মুক্তাগাছা উপজেলা আর কে বি ব্রিক্স, সারিকা ব্রিক্স, শাপলা ব্রিক্স, আদনান ব্রিক্স এগুলো রাজনৈতিক ভাবে দলীয় প্রভাবে অবৈধ ক্ষমতার জোড়ে প্রতিবছর নাম বদলী হয়ে চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইট ভাটার মালিক অজানিয়েছেন বিভিন্ন ফান্ডের নামে জেলা প্রশাসন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ভূমি অফিসের নায়েব, ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট সকল অফিসের কর্তাব্যক্তিদের নাজরানা দিয়ে ইট ভাটার ব্যবসা করতে হয়, এতে তেমন বাধার সমুক্ষীন হতে হয় না।

(এনআরকে/এসপি/জানুয়ারি ২২, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test