E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী কাল

২০২৪ মার্চ ১৯ ১৬:২২:০৭
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী কাল

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, রাজনীতিবিদ, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল বুধবার। দিনটি উপলক্ষে জিল্লুর রহমান এর জন্মভূমি ভৈরবে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো ও তাঁর পরিবার নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে বলে দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে। এবার মৃত্যুবার্ষিকী পবিত্র রমজানে হওয়ায় কর্মসূচীগুলি ছোট আকারে করা হবে। ভৈরব আওয়ামী লীগের দিনের কর্মসূচীর মধ্যে হচ্ছে সকালে দলীয় পতাকা ও কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ, কোরআন খতম, জিল্লুর রহমানের প্রতিকৃতিত্বে পুস্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল। 

জিল্লুর রহমান ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। তিনি দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি থাকাকালে ২০১৩ সালের ২০ মার্চ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ যান। ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এ যাবৎ দেশের সবকয়টি আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় মহাজোট বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। জিল্লুর রহমান কিশোরগঞ্জ-৬ আসন থেকে পঞ্চমবারের মতো সংসদ সদস্য হন এবং জাতীয় সংসদে সংসদ উপনেতা নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়। তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২০০৯ সালে বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ১২ ফেব্রুয়ারি শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯২৯ সালের ৯ মার্চ কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে জন্মগ্রহণ করেন জিল্লুর রহমান। তার স্ত্রী আইভি রহমানও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় জিল্লুর রহমান তার সহধর্মিনী ও মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভানেত্রী আইভি রহমানকে হারান। বর্তমান সংসদ সদস্য, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তার ছেলে। তানিয়া ও ময়না নামে দুইজন কন্যা সন্তান রয়েছেন।

বাড়ির পাশের ভৈরব আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় তার। এখান থেকে পাশ করে ১৯৪১ সালে তিনি ভৈরব কে.বি পাইলট মডেল হাই স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন ১৯৪৬ সালে। তারপর ঢাকা কলেজ থেকে তিনি আইএ পাশ করেন। জিল্লুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে তিনি আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

জিল্লুর রহমান ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৫৬ সালে কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছাড়াও জিল্লুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিম-লীর সদস্যসহ বিভিন্ন সময়ে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন।

১৯৬২ সালে সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন গণ-আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এই নেতা। ১৯৭০ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালে জিল্লুর রহমান প্রথম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

পরবর্তীতে তিনি আবারো ১৯৭৪, ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালে তিনি গণপরিষদ সদস্য হিসেবে সংবিধান প্রণয়নে অংশ নেন। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন ময়মনসিংহ-৩২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সাল থেকে তিনি আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়ামের দায়িত্ব পালন করেন।

৭ মে ১৯৮৬ সালের তৃতীয় ও ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন কিশোরগঞ্জ-৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সপ্তম জাতীয় সংসদে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় (এলজিআরডি) এর মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১ অক্টোবর ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন কিশোরগঞ্জ-৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

২০০৬ সালের ১১ জানুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিলে যখন শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হন তারপর থেকেই তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল ধরেন।

২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

জিল্লুর রহমান কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে ২০১৩ সালের ১০ মার্চ উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি হন। এর আগে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ফুসফুসের সংক্রমণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২০১৩ সালের ২০ মার্চ মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মারা যান তিনি।

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ভৈরব কুলিয়ারচরে ব্যাপক উন্নয়ন করে গেছেন। স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মন্দির, ব্রীজ, কালবার্ট ও রাস্তাঘাট নির্মাণসহ ভৈরব-কুলিয়ারচরের উন্নয়নে ভাবে ব্যপক কাজ করেছেন। তবে ভৈরব মানুষদের কাছে বলে যাওয়া রক্তের শেষ বিন্দু দিয়ে হলেও ভৈরবকে জেলা করার দাবীটি অপূরণ রেখে গেছেন।

(এসএস/এসপি/মার্চ ১৯, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test