E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

নাটোরে কালবৈশাখীর তাণ্ডব, ১৭ হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষতি

২০১৫ এপ্রিল ০৫ ১৮:৩০:২২
নাটোরে কালবৈশাখীর তাণ্ডব, ১৭ হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষতি

নাটোর প্রতিনিধি : কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে নাটোরে প্রায় তিন হাজার কাঁচা ঘর-বাড়ি তছনছ ও সাড়ে ১৭ হাজার হেক্টর বোরো ফসলসহ অসংখ্য গাছপালা ও অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ। ঝড়ের কবলে মহিলাসহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে একজন বজ্রপাতে এবং অপরজন গাছের ডালের আঘাতে মারা গেছে।

শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে শুরু হওয়া দমকা হাওয়া ও কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডব এবং শিলাবৃষ্টিতে জেলার বাগাতিপাড়া, গুরুদাসপুর, সিংড়া, নলডাঙ্গা, বড়াইগ্রাম ও সদর উপজেলার অন্তত তিন হাজার কাঁচা বাড়ির টিনের চালা উড়ে গেছে।

বিপুল সংখ্যক গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে এবং ভুট্টা, পিয়াজ কদম, কলাগাছ, সবজি সহ উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের তান্ডবে অন্তত ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ঝড়ের সময় গুরুদাসপুর উপজেলার পিপলা গ্রামে খোকন আলী (৩৭) নামে এক কলেজ ছাত্র এবং সিংড়া উপজেলার দেওলা গ্রামে রাবিয়া বেগম(৫৫) নামে এক মহিলা মারা যায়।

ঘন্টাব্যাপী এই ঝড়ের তাণ্ডবে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের খুটি উপড়ে পড়ায় রাতভর গোটা জেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। রবিবার সকালে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলেও জেলা অনেক স্থানে এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এদিকে রবিবার সকালে জেলা প্রশাসক মসিউর রহমানসহ বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী অফিসার ও কৃষিকর্মকর্তা ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র মতে, ঝড়ের কবলে জেলার ৭টি উপজেলায় ১৭ হাজার ৬৯২ হেক্টর বোরো ধান, ২ হাজার ২৯৫ হেক্টর ভুট্টা, ৫০ হেক্টর পিঁয়াজ কদম, ৭৬০ হেক্টর আম গাছ, ৩৮৯ হেক্টর কলা গাছ, ৯২ হেক্টর লিচু গাছ, ৬৫ হেক্টর সজিনা, ২১ হেক্টর পান বরজ, ২০ হেক্টর সবজি ক্ষেত ঝড়ে আক্রান্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমান আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা খাতুন জানান, এই উপজেলায় ঝড়ে গাছের ডালের আঘাতে রাবিয়া বেগম নামে এক মহিলার মুত্যু, ২ হাজার ৬৭টি আধাপাকা বাড়ি ঘর বিধ্বস্ত,২৩০ হেক্টর ভুট্টা ও কলাবাগান, ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ও অসংখ্য গাছপালা ভেঙ্গে গেছে। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা, শস্য ক্ষেতে ৭২ লাখ ৩৪ হাজার ৫’শ টাকা, গাছাপালায় ৫২ লাখ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নায়িরুজ্জামান জানান, ঝড়ে এই উপজেলায় ১০টি বাড়ি সম্পূর্ণ ভাবে এবং ৮০টি বাড়ি আংশিক বিধ্বস্তসহ অসংখ্য গাছপালা ভেঙ্গে গেছে এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে এর সঠিক পরিসংখ্যান এখনও হাতে পৌছায়নি।

নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার জাহান জানান, ঝড়ের কবলে এই উপজেলায় অন্তত ৫ শতাধিক বাড়িঘর লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। চাঁদপুর দাখিল মাদ্রাসা ও ঠাকুরলক্ষিকোল উচ্চ বিদ্যালয় বিধ্বস্তসহ ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৫ হাজার ৬১৫ হেক্টর বোরো ধান, ২৫ হেক্টর সজিনা, ৬’শ হেক্টর ভুট্টা, ৮০ হেক্টর কলাগাছ, ৩৫ হেক্টর পিয়াজ কদমসহ অসংখ্য গাছপালার ক্ষতি হয়েছে।

বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন জানান, এই উপজেলায় ৩০টি বাড়িঘর ও ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য গাছপালা ভেঙ্গে গেছে। তবে ফসলের তেমন একটা ক্ষতি হয়নি বলে জানান। ঝড়ে গাছের ডালে ২ জন আহত হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলহাজ্ উদ্দিন আহমেদ জানান, ঝড় ও শিলা বৃষ্টির কারনে বোরো ধান, ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসল আক্রান্ত হয়েছে। এসব ফসলের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে সার্বিক ভাবে তেমন একটা ক্ষতি হবে না। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। দু’একদিনের মধ্যে ক্ষতির পরিমান নিরুপন করা সম্ভব হবে বলে জানান।

জেলা প্রশাসক মশিউর রহমান ঝড়ের সময় দু’জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করলেও গুরুদাসপুরে খোকন আলী নামে একজন বজ্রপাতে ও সিংড়ায় রাবিয়া বেগম হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান বলে দাবি করেন। তবে ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি সঠিক তথ্য নিরুপণ করতে দু’একদিন সময় লাগবে। তথ্য সংগ্রহে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছেন।

(এমআর/এএস/এপ্রিল ০৫, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test