E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরীয়তপুরে নষ্ট হয়ে গেছে শত শত বিঘা জমির মরিচ

২০১৫ মে ০৩ ১৬:২৮:৪৭
শরীয়তপুরে নষ্ট হয়ে গেছে শত শত বিঘা জমির মরিচ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের চরাঞ্চলের অন্তত ৫ হাজার কৃষকের বেঁচে থাকার অবলম্বন মরিচ ক্ষেতে মড়ক লেগে শত শত বিঘা জমির মরিচ নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে কৃষকদের দুই চোখে এখন ঘোর অন্ধকার। কৃষি বিভাগ চাষিদের আপদকালীন সময়ে  কোন রকম পরামর্শ বা সহায়তা প্রদান না করায় কর্মকর্তাদের উপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত মরিচ চাষিরা।

প্রতিবছরই শরীয়তপুরের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে ব্যাপকভাবে আবাদ করা হয় মরিচের। মরিচ এই অঞ্চলের প্রধান অর্থকরি ফসল। চলতি মৌসুমে জেলার ৬ উপজেলায় ৯ হাজার ৫ শত হেক্টর জমিতে ১৩ হাজার ৮ শত মেট্রিক টন মরিচ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। অর্জিত হয়েছে তার চেয়েও কিছু বেশি। অর্থাৎ মরিচ চাষিরা গত বছর ভাল ফলন ও বাজার দর বেশি পাওয়ায় এবছর লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে মরিচের চাষ করেছে ৯ হাজার ৫ শত ৩০ হেক্টর জমিতে।

সব কিছুই ঠিকঠাক ছিল। মরিচ গাছে সময়মত ফুল এসেছে, ফল ধরেছে। মৌসুমের পাঁচ ধাপের প্রথম ধাপ মরিচ তোলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল চাষিরা। এমন সময় চৈত্রের শেষে মৌসুমী বর্ষণে গাছের গোড়ায় অতিরিক্ত পানি জমে ফিজুরিয়াম উইক নামে একটি রোগ ক্ষেতের পর ক্ষেত আক্রমন করে। ফলে অন্তত দুই হাজার বিঘা জমির মরিচ গাছসহ মরে, পঁচে সাদা হয়ে যায়। এতে চরম লোকসানের মুখে পরেছে চাষিরা। ফলে উৎপাদনও কম হবে অন্তত ৩ হাজার মেট্রিক টন। আর এই রোগটি বেশি দেখা দিয়েছে জেলার সর্ব দক্ষিনে অবস্থিত গোসাইরহাট উপজেলাতে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে কৃষকরা মরক লাগা মরিচ ক্ষেত ভেঙ্গে ফেলছে অন্য ফসল করার জন্য, অপর দিকে অনেকে নতুন করে পচন ধরার ভয়ে অপরিপক্ক কাঁচা মরিচ তুলে ফেলছে ক্ষেত থেকে।

শরীয়তপুরের চাষিরা অগ্রহায়নাসের মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে পৌষের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত জমিতে মরিচ আবাদ করে। চৈত্র মাসের শেষ দিক থেকেই ক্ষেত থেকে পাকা মরিচ তুলতে শুরু করে। একেকটা গাছ থেকে ন্যুনতম ৫ বার মরিচ তোলা যায়। চলে জৈষ্ঠ্যের মাঝামিাঝি পর্যন্ত। এবছর যে সকল জমিতে মরক লেগেছে সে সকল চাষিরা একবারও মরিচ তুলতে পারেনি।

চাষিদের যুগ-যুগান্তরের ধারনা ও অভিজ্ঞতা ছিল চৈত্র-বৈশাখে বৃষ্টি হলে মরিচের ফলন বেশি হয়। কিন্তু এ বছর সে ধারণা সম্পূর্ণ উল্টো হয়েছে। কৃষক জানিয়েছেন অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে শত শত বিঘা জমির কর্তন উপযোগি মরিচ নষ্ট হয়ে গেলেও কৃষি বিভাগ সময় মত তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। কোন কোন কৃষকের আবাদকৃত সব ক্ষেতই নষ্ঠ হয়ে গেছে, আবার কারো এক তৃতীয়াংশ ভালো রয়েছে। ধার দেনা করে আবাদ করা মরিচ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মাথায় হাত পরেছে চাষিদের।

গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মরিচ চাষি হায়াত উল্লাহ দেওয়ান, আহসান আলী মৃধা, বাবুল মোল্যা, নাসির গাজীর স্ত্রী নিলুফা বেগম, গরীবেরচর এলাকার ঈমাম হোসাইন মাল, আলী আহমেদ দেওয়ান ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরকুমারিয়া এলাকার সুমন মাল বলেন, চরাঞ্চলে আমাদের প্রধান অর্থকরি ফসলই হলো মরিচ। আমরা রবি মৌসুমে অন্য সব ফসলের দিকে মনোযোগ কম দিয়ে বেশি করে মরিচ আবাদ করি। এবছরও অধিক লাভের আশায় গত বছরের চেয়ে বেশি জমিতে মরিচ আবাদ করেছিলাম। প্রথম বার মরিচ তোলার সময়ও হয়ে আসছিল। এমন সময় চৈত্র মাসের শেষ দিকে হঠাৎ ২/৩ বার বৃষ্টি হয়ে আমাদের বিঘার পর বিঘা মরিচ ক্ষেত মরে সাদা হয়ে গেছে। কৃষি অফিসারেরা সময় মত আমাদের কোন খোঁজ নিতে আসেনি। এক বিঘা মরিচ আবাদে আমাদের খরচ হয়েছে ৪০-৫০ হাজার টাকা। আমরা ৫ হাজার টাকাও ঘরে তুলতে পারবো না।

স্থানীয় কোদালপুর বাজারের আড়ৎ মালিক ফারুখ হোসেন সরদার বলেন, আমি প্রতি হাটে ৭০-৮০ মন মরিচ ক্রয় করি। এবার মরিচ ক্ষেতে বালাই ধরার কারনে বাজারে লাল মরিচের পরিমান কম। এক কেজি লাল মরিচ ৯০ টাকায় ক্রয় করলে এক কেজি ফটকা (পচন ধরা সাদা) মরিচ ক্রয় করছি ১৫-১৮ টাকায়। ক্ষেত নষ্ট হয়ে আবাদ কম হওয়ায় আমাদের ব্যবসাও মন্দা যাচ্ছে।

শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. কবির হোসেন বলেন, কৃষক এবছর সুষম সার ব্যবহার কম করায় এবং মৌসুমী বৃষ্টিতে মরিচ গাছের গোড়ায় অতিরিক্ত পানি জমে থাকায় ফিজুরিয়াম উইক নামক একটি রোগ মরিচ গাছে ছড়িয়ে পড়েছিল। যে সকল জমিতে বালুর পরিমান বেশি সেখানেই এই রোগটি বেশী করে ফসলকে আক্রান্ত করেছে। আমরা সাধ্যমত কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করেছি। তবে আগামীতে এই সম্পর্কে চাষিদের আগে থেকেই সচেতন করা হবে।

(কেএনআই/এএস/মে ০৩, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test