E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দুর্নীতিবাজ দুর্বৃত্তদের আখড়া যশোর অগ্রণী ব্যাংক

২০১৫ মে ৩১ ১৯:৫৫:৫৫
দুর্নীতিবাজ দুর্বৃত্তদের আখড়া যশোর অগ্রণী ব্যাংক

যশোর প্রতিনিধি : দুর্বৃত্তদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে অগ্রণী ব্যাংক যশোর আঞ্চলিক কার্যালয়। এই কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আয় বহির্ভূতভাবে অর্থ জমা রাখার অভিযোগও উঠেছে।

এছাড়া বেনামে হিসাব খুলে টাকা জমা রাখারও অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ জানা সত্ত্বেও শীর্ষ কর্মকর্তারা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের পুরষ্কৃত করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের অভিযোগ আছে।

অভিযোগে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২ জুলাই অগ্রণী ব্যাংকের যশোর আঞ্চলিক কার্যালয়ের সিনিয়র প্রিন্সিপ্যাল অফিসার তাপস কুমার বিশ্বাস মাসিক মুনাফা ভিত্তিতে (এমআইএস) ১৩ লাখ টাকার একটি হিসাব খোলেন যা ০১১২৩৭৯/০৬ নম্বর রিসিটে টাকা জমা করেন। আর এই টাকার লাভ্যাংশ জমা হয় ৩৪০৮৪৩২৪ নম্বর অ্যাকাউন্টে। অথচ এই টাকার উৎস তিনি জানাননি।

এছাড়া এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শহরতলী ঝুমঝুমপুরস্থ অর্ধকোটি টাকা দিয়ে ১৫ শতক জমি কিনেছেন বলে অভিযোগ আছে। ব্যাংক কর্মকর্তা তাপস কুমার বিশ্বাসের মেয়ে ঢাকা উত্তরার একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পড়াশুনা করছেন। মেয়ের মাসিক খরচ অন্তত ১৫ হাজার টাকা। ছেলে যশোর বিজিবি স্কুলে লেখাপড়া করে। তারও মাসিক খরচ কমপক্ষে ৩ হাজার টাকা। তিনি যশোর শহরে ঝুমঝুমপুরে যে বাড়িতে ভাড়া থাকেন ওই বাড়ির মাসিক ভাড়া ৫ হাজার টাকা। এর সাথে সংসার খরচ আরও অন্তত ১০ হাজার টাকা। এই ব্যাংক কর্মকর্তার আয়ের সাথে ব্যায়ের কোন মিল নেই। তার বিলাসী জীবন যাপন নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে।

সূত্র মতে, তাপস কুমার বিশ্বাস কালিয়া শাখার ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকাকালে কালিয়া, কলাবাড়িয়া, গাজিরহাট শাখায় ক্যাশ রেমিটেন্স করার জন্য নড়াইল শাখা থেকে টাকা গ্রহণ করে কোন গার্ড ছাড়াই নিজস্ব মোটর সাইকেলে তা পরিবহন করতেন যা ব্যাংকের আইন বিরুদ্ধ। অথচ টাকা পরিবহনের জন্য ভুয়া ভাউচার দাখিল করে প্রতিদিন দু’হাজার টাকা তিনি নিতেন যা পরবর্তীতে ব্যাংকের তদন্তে প্রমাণিত হয়। এ ঘটনায় ৭০টি ভুয়া ভাউচারের সত্যতা মিলেছে।

সূত্র আরও জানায়, তাপস কুমার বিশ্বাস যশোর আঞ্চলিক কার্যালয়ে যোগদানের পূর্বে নড়াইল জেলার কালিয়া শাখার ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করতেন। ওই শাখায় কর্মরত থাকাকালে সরকারের উপবৃত্তির প্রকল্প দেখভাল করতেন তিনি। এই সুযোগে যে সব স্কুলে উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হতো সেখান থেকে তিনি অনৈতিকভাবে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছেন।

এ বিষয়টি জানাজানি হলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। ওই তদন্ত রিপোর্টে তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ করা হয়। আর এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে যশোর আঞ্চলিক কার্যালয়ে বদলি করা হয় এই কর্মকর্তাকে।

এখানে বদলি হয়ে আসার পরও তিনি দম্ভোক্তি করে বেড়াচ্ছেন। কোন তদন্তেই নাকি তার বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নিতে পারবে না। তার বড় ভাই প্রদীপ কুমার বিশ্বাস অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। বড় ভাইয়ের দোহাই দিয়ে ব্যাংকার তাপস কুমার বিশ্বাস ধরা কে সরা জ্ঞান করে চলেছেন। এমনকি এখানকার কর্মকর্তারদেরও নানাভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছেন।

অভিযোগের ব্যাপারে তাপস কুমার বিশ্বাস জানান, তিনি কোন দুর্নীতির সাথে জড়িত নয়। তার বিরুদ্ধে ব্যাংকের একটি কুচক্রী মহল ষড়যন্ত্র করে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।

অভিযুক্ত তাপস কুমার বিশ্বাসের ব্যাপারে অগ্রণী ব্যাংক যশোর প্রধান শাখার ব্যবস্থাপক মৃনাল কান্তি বকশি জানান, একটি বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে বলে আমি জানি। তবে তিনি এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।

একই বিষয়ে নড়াইল আঞ্চলিক শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, মি. তাপসসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত হয়েছে। তদন্ত কমিটি ঢাকা অফিসে রিপোর্ট পাঠিয়েছে। তবে তিনি বলেন, তদন্ত রিপোর্ট ‘সুবিধার নয়’।

এদিকে, অগ্রণী ব্যাংকের যশোর আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রিন্সিপ্যাল অফিসার প্রদীপ কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে আরও ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি যশোর রেলবাজার শাখায় কর্মরত থাকা অবস্থায় সুমিত্রা মিত্র নামে এক মহিলার একটি এবিএস হিসাব খোলেন। এরপর ওই হিসাবটি তিনি বাজার শাখায় ট্রান্সফার করেন। ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী কোন ব্যক্তি হিসাব খুলতে হলে তার ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র/ভোটার আইডি কার্ড, নমিনির ছবি ও পরিচয়পত্র এবং উভয়ের সই করে আবেদন জমা দিতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে কোন নিয়মই মানা হয়নি।

অভিযোগ উঠেছে, প্রিন্সিপ্যাল অফিসার প্রদীপ কুমার বিশ্বাস তার কালো টাকা সাদা করতে এই হিসাব খোলেন। বর্তমানে বিষয়টি জানাজানি হলে এই কর্মকর্তা এখন ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এ নিয়ে কোন কথা না বলার জন্য হুমকি ধামকি দিচ্ছেন।

এভাবে চলতে থাকলে সোনালী ব্যাংকের মত অবস্থা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তারা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা, দাম্ভিকতা এবং অনৈতিকভাবে অর্থ উপার্জনের বিষয়ে সুষ্টু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। একই সাথে এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা যেন রেহাই না পায় সেদিকে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আর্কষণ করেছেন।

(জেকেএম/পিএস/মে ৩১, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test