E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আজ নাটোরের ছাতনী গণহত্যা দিবস

২০১৫ জুন ০৪ ১১:২৭:৩১
আজ নাটোরের ছাতনী গণহত্যা দিবস

নাটোর প্রতিনিধি : ৪ জুন (বৃহস্পতিবার) নাটোরের ছাতনী গণহত্যা দিবস। ৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা ছাতনীতে রাতভর বাড়ি বাড়ি অগ্নিসংযোগ করে ও ব্যাপক গণধর্ষণ চালায়।

পুরুষদের ধরে এনে হাত বেঁধে ছাতনী স্লুইচ গেটে নিয়ে গলা কেটে ও বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। এক রাতে প্রায় ৪শ’ জনকে হত্যা করা হয়। সেদিনের সেই পৈশাচিকতার কথা আজও ভোলেনি নাটোরবাসী। তাই এই দিনটি তারা গভীরভাবে স্মরণ করে।

নাটোর রেলওয়ে স্টেশন থেকে তিন কিলোমিটার পশ্চিমে ছাতনী গ্রাম। ১৯৭১ সালের ৪ জুন রাতে বিপুল সংখ্যক পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা অবাঙালি হাফেজ আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে নিরীহ গ্রামবাসীদের ধরে এনে ছাতনী স্লুইচ গেটে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

সেদিনের সেই হত্যাযজ্ঞের বর্নণা দেন নাটোর সদর ইউনিটের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছাতনী গ্রামের নূরুল ইসলাম। তিনি জানান, ৪ জুন পাক হানাদান বাহিনী নাটোর রেল স্টেশন থেকে বিরাট একটি বহর নিয়ে অবাঙালি হাফেজ আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে ছাতনী ইউনিয়নের আমহাটী, শিবপুর, তেলকুপি, পন্ডিতগ্রাম, হাড়িগাছা, গোকুলনগর, দত্তের বাগান, চাতনী, ভাবনী এলাকা ঘিরে ফেলে। ঘুমন্ত গ্রামবাসীকে ধরে রশি দিয়ে পিছমোড়া করে বেঁধে ছাতনী স্লুইচ গেটে এনে গলা কেটে, গুলি করে, বেনোয়েট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। পরে মুখসহ সারা শরীরে অ্যাসিড ঢেলে দেয়। প্রায় চারশ’ জনকে এখানে হত্যা করা হয়।

ছাতনীর গণহত্যার স্থানে শহীদদের স্মরণে নির্মাণ করা হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। সেখানে দাঁড়িয়ে দফায় দফায় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ আর নারী ধর্ষণের কথা জানালেন ছাতনী গ্রামের হাফিজ উদ্দিন।

তিনি জানান, হত্যা নির্যাতন, লুটপাট আর নারী ধর্ষণ চালায় পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার বাহিনী। এ হত্যাকাণ্ডের ২৬ দিন পর দিনের বেলায় ভানীগ্রামে কোরআন শরীফ পড়া অবস্থায় নারীদের ধরে সেখানেই ধর্ষণ করে রাজাকাররা। সেই রাজাকারদের মধ্যে আমহাটী গ্রামের ভেদাই রাজাকার আজও বেঁচে আছে। তার বিচার আজও হয়নি।
সেদিনের নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার ভাবনী গ্রামের শহীদ কিয়ামদ্দিনের ছেলে আবুল কাসেম জানান, তখন তার বয়স ১২ থেকে তের বছর হবে। তিনি ৪ জুন ভোরে একটি ধান খেতের আইলে অনেক নারীকে বিবস্ত্র অবস্থায় দেখেছেন। তাদের গণধর্ষণ করা হয়েছে।

ভাবনী গ্রামের শহীদ সুলতান পাটোয়ারীর ছেলে জয়নাল আবেদীন জানান, বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে সারা দেশের মত নাটোরেও সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা ভাবনী গ্রামের সম্ভান্ত পরিবারের সদস্য প্রয়াত শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর নেতৃত্বে এলাকার নারী-পুরুষ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়। এই কারণে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা হত্যার নেশায় মেতে উঠে।

ছাতনী স্লুইচ গেটের পাশে ভাবনী শংকর গোবিন্দ চৌধুরী সড়কের পাশে শহীদ মনির উদ্দিন সরকার ও শহীদ মহির উদ্দিন সরকারের পরিবারের সদস্যদের দান করা ১১ শতক জমির উপর প্রয়াত শংকর গোবিন্দ চৌধুরী নির্মাণ করেন একটি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ। সেখানে প্রবেশ পথে লিখা আছে শহীদদের নাম।

নাটোর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ছাতনী শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ ও শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপিত মনির উদ্দিন সরকার দুলাল জানান, শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর জামাতা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শৈরেন্দ্র চক্রবর্তীর সহায়তায় জেলা পরিষদের অর্থ সাহায্যে ও এলাকাবাসীর সহায়তায় স্মৃতিস্তম্ভটির অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, এই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে এসে দাঁড়ালে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্ম জানতে পারবে স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকহানাদার ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদরদের নৃশংসতার কথা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নাটোরের জেলা পরিষদের প্রশাসক সাজেদুর রহমান খান জানান, হত্যাকাণ্ডের স্থানে একটি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই টাকায় মাটি ভরাট, শহীদদের নাম ঠিকানাসহ স্লুইচ গেটের প্রবেশপথ, সীমানা প্রাচীর ও শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে তিনি জানান। সামান্য কিছু কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। চলতি জুনে আরও পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। এই টাকায় অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে তিনি জানান।
(ওএস/পিবি/ জুন ০৪,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test