E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

শরীয়তপুরে মেয়রসহ ১২ জন পলাতক

২০১৫ জুলাই ১৩ ১৭:২২:০০
শরীয়তপুরে মেয়রসহ ১২ জন পলাতক

শরীয়তপুর প্রতিনিধি :সরকারের অনুমতি ছারা বিদ্যালয়ের জমি বিক্রির টাকা আত্মসাতের দায়ে দূর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক দায়েরকৃত মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুর রব মুন্সিসহ  ১২ জন।

আদালতের নির্দেশ অমান্য করে নির্ধারিত তারিখে হাজির না হওয়ায় শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিশেষ সিনিয়র জজ গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছেন প্রত্যেকের বিরুদ্ধে। এরপর ১৩ জুলাই সোমবার আদালতের পূর্ব নির্ধারিত ধার্য্য তারিখেও কেউ হাজির না হয়ে প্রত্যেকেই ফেরারী আসামী হিসেবে পলাতক রয়েছেন।

দূদদকের দায়েরকৃত মামলাকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে ও আদালতের গ্রেফতারী পরোয়ানার বিরুদ্ধে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন এই নেতার দলীয় অনুসারীরা। দূর্নীতিবাজ নেতাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া না হলে পরবর্তীতে আরো কর্মসূচি পালনের কথাও বলা হয়েছে । তবে পুলিশ সুপার বলছেন আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

অনেকগুলো রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি রয়েছে আব্দুর রব মুন্সির। দীর্ঘ ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবন ও প্রায় তিন যুগের শিক্ষকতা জীবনে তেমন দূর্নামের কালিমা পরেনি তার চরিত্রে। সবার কাছে একজন আদর্শ রাজনৈতিক নেতা এবং সফল প্রধান শিক্ষক হিসেবেই ছিল তার সুখ্যাতি। জীবনের ঊষা লগ্ন থেকেই বাম রাজনীতির কান্ডারী হয়ে নিজেকে আত্ম প্রকাশ করাতে সক্ষম হলেও ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য মাঝে মধ্যে দৌড় ঝাপ করেছেন বুর্জুয়া রাজনীতির সান্নিধ্য লাভে। কিন্ত বিধি বরাবরই থেকেছে বাম দিকের সাড়িতে। ললাটে জুটেছে দূর্ভাগ্যের চন্দন তিলক। করতে হয়েছিল অতি সাধারণ ধরনের জীবন যাপন। অনেক দেরিতে একবিংশ শতকের প্রথমভাগে এসে শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদ লাভ এবং ২০০৮ সালে শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়ে তিনি নেমে পরলেন ভাগ্য পরিবর্তনের কঠিন যুদ্ধে। রাতারাতি তার প্রয়োজন হতে শুরু করলো কোটি কোটি টাকার। ২০০৯ সালের প্রথম প্রহরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধিন আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করলে খুলে যায় আব্দুর রব মুন্সির আকাংখা পূরনের ভাগ্য দুয়ার। এক পর্যায়ে তিনি পুরোপুরি অবৈধ পন্থায় দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশী সময় নিজের কর্মক্ষেত্র, নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান বাজার মূল্য অন্তত ৮ কোটি টাকার প্রায় ১২ বিঘা জমি বিক্রি করে কাগজে কলমে মাত্র দেড় কোটি টাকা দেখিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করে ফেঁসে গেলেন দূদকের মামলায়।

দূদকের মামলার বিবরণ ও স্থানীয় সূত্রগুলো থেকে জানা যায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার শরীয়তপুর পৌরসভাধীন উত্তর মধ্যপাড়া মৌজার আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩ একর ৭১ শতাংশ (প্রায় ১২ বিঘা) জমি রয়েছে। ১৯৭০ সালে আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীনতা লাভের পর ওই সম্পত্তির মূল মালিকদের কেউ আর সম্পত্তি ভোগ করতে আসেনি। ১৯৭২-৭৩ সাল থেকে উল্লেখিত ভূমি আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজস্ব সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। অত্র বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আব্দুর রব মুন্সী (বর্তমান জেলা অওয়ামীলীগের সভাপতি, শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র, শরীয়তপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি, শরীয়তপুর বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি, আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও আঙ্গারিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি) এবং তার আপন ভাতিজা একই বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক ও পদাধিকার বলে ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার কামাল সরকারের বা শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের কোন রকম অনুমতি ছারাই দুইটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় একটি ভূয়া রেজুলেশন দেখিয়ে তাদের পছন্দের লোকের কাছে ৩ একর ৭১ শতাংশ জমির সমূদয় পানির দামে বিক্রি করে। অন্তত ৮ কোটি টাকা বর্তমান বাজার মূল্যের এই জমি মাত্র দেড় কোটি (এক কোটি পঞ্চাঁশ লক্ষ) টাকায় বিক্রি দেখিয়ে সেই টাকাও ২ বছর পর্যন্ত বিদ্যালয়ের নিজম্ব ব্যাংক হিসাব নাম্বারে জমা করেননি।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, উত্তর মধ্যপাড়া মৌজায় রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাসত্ব আইন ১৯৫০ (এসএ রেকর্ড) অনুয়ায়ী ৪৩৮ নং খতিয়ানের ২০ নং দাগে ২ এর ২৮ শতাংশ ভুমি বাড়ি, ২১ দাগে ২৬ শতাংশ ভুমি বাড়ি, ২৭ দাগে ৩২ শতাংশ ভূমি বাড়ি ও ২৮ নং দাগে ৮৫ শতাংশ ভূমি ভিটা আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের রেকর্ডভূক্ত সম্পত্তি । জমি বিক্রির কিছু দিন পূর্বে এই সম্পত্তির এসএ পর্চার উপরোক্ত শ্রেনী অনুযায়ী নাম জারি (মিউটেশন) করানো হয়। কিন্তু ৩০ ডিসেম্বর জমি বিক্রির সময় পর্চা জাল করে ২০ নং দাগের ২ একর ২৮ শতাংশ জমির শ্রেনী পরিবর্তন করে বাড়ি থেকে ছনখোলা বানানো হয়। ফলে সর্ব নিন্ম বাজারদর অনুযায়ী জমির মূল্য কমে যায় ২ কোটি ৮০ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা। উল্লেখ্য, শরীয়তপুর সদর সাব-রেজিষ্ট্রী অফিসের মৌজা ওয়ারী প্রতি শতাংশ জমির শ্রেনী ভিত্তিক গড় মূল্য নির্নয় তালিকা অনুযায়ী ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত উত্তর মধ্যপাড়া মৌজায় ১ শতাংশ বাড়ির মূল্য নির্ধারিত ছিল ১ লক্ষ ৪০ হাজার ১ শত ২৫ টাকা। পক্ষান্তরে ১ শতাংশ ছনখোলার দাম ছিল মাত্র ১৭ হাজার ১ শত ৮ টাকা। দুদুকের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে জমির সর্ব নিন্ম সরকারি মূল্য ছিল ৪ কোটি ৫৭ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু ৩ একর ৭১ শতাংশের মধ্যে ২ একর ২৮ শতাংশ জমির জাল পর্চা তৈরী করে জমি বিক্রি করা হলে সেখান থেকে প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্য ২ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা কমিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়েছে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। এখানেই সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত হয় যে, সম্পূর্ন অসৎ উদ্দেশ্য এবং মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করার জন্য বিক্রির আগে জমির শ্রেনী পরিবর্তন করে মূল্য হ্রাস করানো হয়েছে।

মামলার বিবরনে আরো জানা যায়, পছন্দের লোকের কাছে জমি বিক্রি করার জন্য অনেক ধরনের ছল চাতুরীর আশ্রয় গ্রহন করেছিল অভিযুক্ত এই চক্র। জমি বিক্রির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ঢাকাস্থ ৩৪,পুরানা পল্টনের জে.সরদার কর্পোরেশন ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, ৮৫ খালেক হাউসিং দারুসছালাম ঠিকানার মেসার্স জয় ট্রেডার্স ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা এবং গুলশান-১ এর মধ্যবাড্যা ঠিকানার শাহিন এন্টারপ্রাইজ ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকায় জমি ক্রয়ের দরপত্র জমা দেয়। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে জে. সরদার কর্পোরেশনের সত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর সরদার ও তার ভাই আব্দুস সালাম সরদারের কাছে জমি বিক্রি করা হয়। তিনজন দরদাতার মধ্য থেকে একমাত্র জমি ক্রেতা জে সর্দার কর্পোরেশন বা জাহাঙ্গীর সরদার ছারা অপর দুই দরদাতার নাম ঠিকানা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ঢাকা শহরের কোথাও হদিস মিলেনি।

৮ কোটি টাকার সম্পত্তি মাত্র দেড় কোটি টাকায় বিক্রি করে সে টাকাও স্কুলের ব্যাংক হিসাব নাম্বারে জমা করা না হলে জমি বিক্রির দুই মাস পর এলাকায় বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায় । স্থানীয় লোকজন এবং বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের একটি অংশ গণমাধ্যম কর্মীদের জানালে বেড়িয়ে আসে থলের বিড়াল। এ বিষয়ে শরীয়তপুরস্থ বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীরা কয়েকটি অনুসন্ধ্যানী প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রচার করে। প্রথমে ২০১৩ সালের ১৫ মার্চ চ্যানেল-২৪ টেলিভিশনে একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। ১৭ মার্চ দৈনিক সমকাল, ১৮ মার্চ দৈনিক যুগান্তর, ১৯ মার্চ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৪ জুন দৈনিক সংবাদসহ কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন গণ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জমি বিক্রির ২ মাস ২০ দিন পর ১৮ মার্চ ২০১৩ তারিখে জমি ক্রেতা জে. সরদার কর্পোরেশনের সত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর সরদারের ৩১ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে স্বাক্ষরিত তার ঢাকার ধোলাইপড়স্থ পুবালী ব্যাংকের হিসাব নম্বর থেকে আংগারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অনুকুলে দেড় কোটি টাকা সমমূল্যের দুইটি চেক বিদ্যালয়ের নামে পরিচালিত আঙ্গারিয়া সোনালী ব্যাংকের ৪০৩ নং হিসাব নাম্বারে জমা দেয়া হয়। চেক দুটির নাম্বার হলো (১) ১৩০৮১২০, টাকার পরিমান, ৮০ লক্ষ এবং (২) ১৩০৮১২১, টাকার পরিমান ৭০ লক্ষ।

আঙ্গারিয়া সোনালী ব্যাংক ১৯ মার্চ চেক দুটি সোনালী ব্যাংকের ঢাকাস্থ প্রিন্সিপল অফিসে প্রেরণ করেন। সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপল অফিস ৩১ মার্চ ধোলাইপাড় পূবালী ব্যাংকে টাকা উত্তোলনের জন্য গেলে সেখানে দেখা যায় জাহাঙ্গীর সরদারের হিসাব নাম্বারে মাত্র ৮ হাজার ২৫৫ টাকা জমা রয়েছে এবং পুবালী ব্যাংকে সংরক্ষিত জাহাঙ্গীরের স্বাক্ষরে অসংগতি ও গড়মিল রযেছে। ফলে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক চেক দুটিকে ১ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে অসম্মান (ডিস-অনার) করে ফেরৎ পাঠান। বিদ্যারয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার কামাল ১০ এপ্রিল ২০১৩ ইং তারিখে ঢাকা থেকে ডিস-অনারকৃত চেক দুটি ফেরৎ নিয়ে যায়। এরপর শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে প্রথম দফায় শরীয়তপুর জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ২০১৩ সালের মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এবং দ্বিতীয় দফায় শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নিরীক্ষন ও পরিদর্শন বিভাগ সেপ্টেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে মন্ত্রনালয়ের দুইজন কর্মকর্তার মাধ্যমে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত মোকাবেলা করার জন্য দ্বিতীয় দফায় জমি ক্রেতার ১৩-০৬-২০১৩ তারিখের স্বাক্ষরিত দুটি চেক ১০-০৯-২০১৩ তারিখে পূনরায় বিদ্যালয়ের হিসাব নাম্বারে জমা করেন প্রধান শিক্ষক। চেক দুটির নাম্বার হলো- ১৩০৮১২৭, টাকার পরিমান- ৮০ লাখ এবং ১৩০৮১২৮, টাকার পরিমান ৭০ লাখ। এবারও আগের মত দুটি চেকই ডিস অনার হয়ে ফেরৎ আসে।

উল্লেখ্য যে, ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর জমি বিক্রির সময় জমি দাতা আনোয়ার কামাল দলিলে উল্লেখ করেছেন, আমি নগদ ১,৫০,০০,০০০ (এক কোটি পঞ্চাঁশ লক্ষ) টাকা বুঝিয়া পাইয়া সম্পত্তি থেকে নিঃস্বত্তবান হইলাম। অথচ, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ব্যাংকে যে চেক জমা দেয়া হয়েছে তাতে উল্লেখিত তারিখ হলো জমি বিক্রির এক দিন পর অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর ২০১২। এখানে পূনরায় প্রমানিত হয় যে, স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একটি প্রকান্ড জালিয়াতির মাধ্যমে ৮ কোটি টাকার সম্পত্তি দেড় কোটি টাকায় বিক্রি দেখিয়েও সে টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

এত বড় দূর্নীতির উপর শিক্ষা মন্ত্রনালয় দুই দফায় তদন্ত করার দুই বছর পার হলেও তার কোন ফলাফল এতদিনে চোখে পরেনি। কিন্তু আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন ছাত্র বিদ্যালয়ের জমি ফেরৎ পেতে দূর্নীতি দমন কমিশনের কাছে আবেদন করলে বিষয়টি এক বছর পর্যালোচনার পর ২০১৪ সালের ৬ আগষ্ট দূর্নীতি দমন কমিশনরে ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মলয় কুমার সাহা বাদী হয়ে শরীয়তপুর সদর থানায় সরকারের বিনা অনুমতিতে জমি বিক্রির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে দুইটি মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামীরা হলেন, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও শরীয়তপুর পৌর মেয়র আব্দুর রব মুন্সি, বিদ্যালয়ের সদস্য সচিব প্রধান শিক্ষক আনোয়ার কামাল , ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও শরীয়তপুর সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুস সালাম হাওলাদার , তহশিলদার মজিবুর রহমান হাওলাদার, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক আইউব আলী মল্লিক, সদস্য আঃ কুদ্দুস মোল্যা, সদস্য বেগম আলফাতুন্নেছা, বিদ্যালয়ের সহাকারি শিক্ষক সুজন সাহা, সংগীতা সাহা, সহকারী প্রধান শিক্ষক রনজিৎ কুমার সাহা ও জমি গ্রহিতা জাহাঙ্গীর আলম এবং তার ভাই আঃ সালাম সরদার।

দুদকের মামলার ১ মাস ৯ দিন পর এবং জমি বিক্রির ১ বছর ৮ মাস ১৭ দিন পর ব্রাক ব্যাংকের দুইটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৭০ লক্ষ টাকা ও ২ বছর ১৯ দিন পর আরো দুইটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৮০ লক্ষ টাকা মোট দেড় কোটি টাকা বিদ্যালয়ের হিসাব নাম্বারে জমা করা হয়। কিন্ত এতদিনে বিক্রয় লব্ধ টাকা থেকে প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা মুনাফা হতো, সেই টাকা দূর্নীতিবাজরা জমা করেনি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপসহকারী পরিচালক গাজী মো. সামসুল অরেফিন প্রায় সাড়ে ৯ মাস পর গত ২৮ মে শরীয়তপুর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে মামলার ৮ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর অভিযুক্ত আসামীদের গত ৩০ জুন আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলেও অভিযুক্তরা আদালতে হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে সময় প্রার্থনা করলে আদালত তা না নামঞ্জুর করে জেলা সিনিয়র বিশেষ জজ মো. আতাউর রহমান আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। প্রেফতারী পরোয়ানা জারির ৫ দিন পর দুদকের মামলা মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক আখ্যা করে এর থেকে অভিযুক্তদের নিস্কৃতি দিয়ে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগ, জেলা শিক্ষক সমিতিসহ আওয়ামীলীগের অনেক অংগ-সহযোগী সংগঠন শহরে ও আদালত চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। অভিযুক্ত আসামীরা এখনো পলাতক রয়েছে। একটি বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা জানা গেছে, রাজনৈতিক তদবিরের মাধ্যমে বিজ্ঞ বিচারককে জামিন প্রদানে বাধ্য করে তবেই তারা আদালত্বে আত্মসমর্পণ করবে।

শরীয়তপুর জজ কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী ও দুদকে পিপি শাহাবুদ্দিন উজ্জল বলেন, দুদক কর্তৃক অভিযোগপত্র দাখিলের পর অভিযুক্তদের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য বিজ্ঞ কোর্ট এক মাসেরও বেশী সময় দিয়েছিলেন। কিন্ত গত ৩০ জুন এক মাস পার হওয়ার পরেও তারা হাজির না হয়ে আইনজীবীদের মাধ্যমে সময় আবেদন করেছিলেন। আদালত তাদের সময় আবেদন নামঞ্জুর করে ওই দিন প্রত্যেকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ১৩ জুলাই পূনরায় মামলার ধার্য্য তারিখ নির্ধারণ করেন। এরপরেও তারা সোমবার কেউ আদালতে হাজির হননি।

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. সাঈফুল্লাহ আল মামুন বলেন, দুদকের মামলায় অভিযুক্তদের সবাই পলাতক রয়েছেন। আদালতের গ্রেফতারী পরোয়ানা কার্যকরি করার জন্য পলাতকদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।



(কেএনআই/এসসি/জুলাই১৩,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test