E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

পদ্মার সর্বগ্রাসী ছোবলে  ১০ দিনে ৮ গ্রামের ৩ শত পরিবার গৃহহীন

২০১৫ জুলাই ২৪ ১৮:১০:৪৫
পদ্মার সর্বগ্রাসী ছোবলে  ১০ দিনে ৮ গ্রামের ৩ শত পরিবার গৃহহীন

শরীয়তপুর প্রতিনিধি: সর্বগ্রাসী পদ্মার ভয়াবহ ভাঙ্গনে গত ১০ দিনে জেলার জাজিরা উপজেলার ৮ গ্রামের অন্তত ৩ শতটি পরিবার গৃহহীন হয়ে পরেছে।

পদ্মার অব্যাহত ভাঙ্গনে দিশেহারা মানুষগুলো পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে ইউপি কমপ্লেক্স ভবন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ হাট বাজার। ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করেছেন কোন সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসেনি কেউ। প্রশাসন বলছে সহায়তা পাওয়া গেলে বিধি মোতাবেক বন্টন করা হবে।

বড়কান্দি ইউপি কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ জুলাই এর পর থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের ৮টি গ্রামে শুরু হয়েছে প্রমত্ত পদ্মার সর্বনাশা ভাঙ্গন। গত ১০ দিনে রমজান ছৈয়াল কান্দি, সরদার কান্দি, মৃধা কান্দি, হাজী তাইজ উদ্দিন মাদবর কান্দি, মীর আলী মাদবর কান্দি, নজিম উদ্দিন বেপারী কান্দি, চেরাগ আলী সরদারের কান্দি ও কোতোয়াল কান্দি গ্রামের অন্তত তিন শতটি পরিবারের বসত ভিটা, ২ শত একর ফসলী জমিসহ সকল স্থাবর সম্পত্তি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এর আগে ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ২টি জামে মসজিদ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। বড়কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নজিম উদ্দিন বেপারী কান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নওপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় তিনটি নদীতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পরেছে অন্তত ১ হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ। আরো কয়েক শত পরিবারসহ ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে বড়কান্দি ইউনিয়ন কমপ্লেক্স ভবন, বড়কান্দি ইউপি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও প্রাচীন দূর্গারহাট বাজারটি।

জানা গেছে, অন্তত ১শত ৩০ জনের বাড়িঘর সব নদীতে বিলীন হয়েছে। এছারাও মীর আলী মাদবর কান্দি গ্রামের করিম মাদবর, দ্বীন ইসলাম, সামসুল হকমাদবর, লতিফ মাদবর, সোবহান মাদবর ও তাছের ছৈয়ালের বসত ভিটাসহ অর্ধশতাধিক পরিবারের ঘর বাড়ি পদ্মা নদী গ্রাস করেছে।

দূর্গার হাট বাজার, দূর্গার হাট বাজার জামে মসজিদ, দূর্গার হাট বাজার ইয়াদ আলী হাফেজিয়া মাদরাসা, বড় কান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বড় কান্দি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম সরদারের বাড়ি ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে। যে কোন সময় এ স্থাপনাগুলো বিলীন হতে পারে রাক্ষুসী পদ্মা গর্ভে।

ভাঙ্গন কবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মো. হারুন ছৈয়াল, নুর জাহান বেগম, মোশারফ সরদার, রস নেছা বেগম, মো. জাকির হোসেন, শিক্ষাথীর্ , নজুমদ্দিন বেপারীর কান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাশিদা বেগম, আব্দুস সোবহান মাদবর ও মো. আল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙ্গনের কবলে পরে মাত্র ৭ দিন আগে শেষ হওয়া ঈদের আনন্দটুকুও আমাদের ভাগ্যে জোটেনি । অবিরাম বর্ষনের কারনে আমরা নারী-শিশু-বৃদ্ধ ও গবাদীপশু নিয়ে নিয়ে চরম বিপাকে পরেছি । আমাদের কোথাও একটু মাথা গোজার ঠাই মিলছে না।

জনপ্রতিনিধি বা সরকারের কোন লোক কোন রকম সাহায্য-সহযোগিতা তো করেইনি, আমাদের ন্যুনতম খোঁজ টুকুও নিতে আসেনি কেউ। তারা আরো জানান, দিনের থেকে রাতের ভাঙ্গন বেশী প্রবল আকার ধারণ করে। এমন ভয়াবহ ভাঙ্গন এর আগে কেউ কোন দিন দেখেননি ।

বড়কান্দি ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম সরদার বলেন, ২/১ দিনের মধ্যই আমার নিজের বসত বাড়িসহ ইউপি কার্যালয়, হাসপাতাল ও একটি বাজার বিলীন হওয়ার আশংকা রয়েছে। এখনো কোন সরকারী সাহায্য পাইনি তাই ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে এসে দাড়ানোর জন্য আমি সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল কাদের বলেন, আমি দূর্গত এরাকা পরিদর্শন করে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তাদের তালিকা প্রেরণ করেছি। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সরকারি ত্রান সহায়তা পাওয়া গেলেই তবে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে নিয়ম অনুযায়ী তা বিতরণ করা হবে।

(কেএনআই/এলপিবি/জুলাই ২৪, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test