E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হুমকির মুখে কুয়াকাটা সৈকত ঘেষা প্রাকৃতিক সবুজ দেয়াল

২০১৫ আগস্ট ১৪ ১২:৪৩:৪৪
হুমকির মুখে কুয়াকাটা সৈকত ঘেষা প্রাকৃতিক সবুজ দেয়াল

কলাপাড়া (পটুয়াখালী)প্রতিনিধি :সৈকতে হাটলেই শোনা যায় গাছ কাটার ঠুক ঠুক আওয়াজ। কোথায় কোথাও করাত চালানোর শব্দ। একটু এগিয়ে দেখা যায় সৈকতে ভেঙ্গে পড়া বিশাল বিশাল গাছ কাটা হচ্ছে কুড়াল দিয়ে। কেউ আবার করাত দিয়ে কেটে সাইজ করছে। সেই কাটা গাছ ঠেলাগাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রকাশ্যেই হচ্ছে এ গাছ কাটা ও বিক্রি।

কুয়াকাটা সৈকতের প্রায় দুই কিলোমিটার জুড়ে এই চিত্র দেখা যায় গতকাল বিকালে। এভাবেই গত এক সপ্তাহ ধরে কুয়াকাটা সৈকতে ঘূর্ণিঝড়“কোমেন”তান্ডবে ভেঙ্গে পড়া শতশত গাছ কেটে নিয়ে গেলেও বন বিভাগ কিংবা প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ মহীপুর ভূমি কর্মকর্তা জানান তাঁরা ২০/২৫ পিচ চাম্বল ও সেগুন গাছ কেটে এনেছেন।

কুয়াকাটা সৈকত ঘুরে দেখা যায়, সৈকতের জিড়ো পয়েন্টের বিশাল বিশাল নারিকেল ও চাম্বল গাছ কাটা শেষ। এখন নারিকেল ও ঝাউ বাগানের কাছে ও বালুর ঢিবিতে উপড়ে পড়া গাছগুলো প্রকাশ্যে কাটা হচ্ছে। নারিকেল,ঝাউ, তাল, সেগুন ও চাম্বলগাছ কেটে টুকরো টুকরো করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ৩০/৩৫ জন শ্রমিক এ গাছ কাটছে।

অমাবশ্যা কিংবা পূর্নিমা’র জো। এছাড়াও প্রতিটি প্রকিৃতিক দূর্যোগ হলেই সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কুয়াকাটা সৈকতের বিস্তীর্ন এলাকার গাছ উপড়ে পড়ে। সৈকত লাগোয়া কুয়াকাটা ইকোপার্ক, নারিকেল বাগান, ঝাউ বাগান, গঙ্গামতি ও খাজুরা বনাঞ্চল। দূর্যোগ হলেই এসব বনাঞ্চল থেকে গাছ ভেঙ্গে সৈকতে উপড়ে পড়ে।

কুয়াকাটায় ভ্রমনে আসা সাইফুল ইসলাম, সাহিদা বেগম জানান, প্রকৃতি ও সাগর এই দুই মিলে কুয়াকাটার সৌন্দর্য। কিন্তু এখন সাগর গিলে খাচ্ছে কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। জরুরী ভিত্তিকে সৈকত ঘেষা নাকিলে,ঝাউ ও ইকোপার্ক রক্ষার উদ্যেগ না নেয়া হলে সাগরের ভাঙ্গনে গোটা কুয়াকাটাই মরুভূমিতে পরিনত হবে।

স্থানীয়রা জানান, কুয়াকাটা সৈকতের প্রাকৃতিক দেয়াল এখন ভঙ্গুর ভবনের মতো খসে পড়ছে। সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে বালু ক্ষয়ের কারনে প্রতিটি জোয়ারের চাপেই গাছ উপড়ে পড়ে। কিন্তু তাৎক্ষনিক ভেঙ্গে পড়া গাছ বনকর্মীরা উদ্ধার না করায় সাগরের জোয়ারে ভেসে সৈকতের বিভিন্ন স্থানে জমা হয়। যা স্থানীয়রা কেটে নিয়ে ইটভাটাসহ বিভিন্ন সমিলে বিক্রি করে দিচ্ছে।
কুয়াকাটা সৈকতে গাছ কাটায় ব্যস্ত শ্রমিক আলামিন, আবদুল্লাহ জানান, তাঁরা চারশ টাকা দৈনিক চুক্তিতে এই গাছ কাটছেন। আমতলী থেকে তাঁরা এসে গত চারদিন ধরে এই গাছ কাটছেন। তাঁদের হিসাবে প্রায় ৫০ টি গাছ তারা কেটেছেন। অন্য শ্রমিকরা এভাবে চুক্তিতে গাছ কাটছে।

খাজুরা বিট কর্মকর্তা পলাশ চক্রবর্তী জানান, খাজুরা মুল বনাঞ্চলই এখন ভাঙ্গনের মুখে। কুয়াকাটা সৈকত ও বনাঞ্চল রক্ষায় ১০ একর জমিতে নতুন বনাঞ্চল করেছিলেন। কিন্তু ইতিমধ্যে চার একর বনাঞ্চলের প্রায় পাঁচ হাজার গাছ ভেঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে।

গঙ্গামতি বিট কর্মকর্তা মো. পারভেজ জানান,সাগরের ভাঙ্গনের কারনে সৈকত ঘেষা বনাঞ্চল ক্রমশ ভাঙ্গছে। কিন্তু তাঁদের জনবল কম থাকায় ভেঙ্গে পড়া গাছ তাৎক্ষনিক উদ্ধার করতে না পারায় জোয়ারে বিভিন্ন এলাকায় ভেসে যায়। যা পরবর্তীতে স্থানীয়রা কেটে নিয়ে যায়।
কুয়াকাটা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির এসআই সঞ্জয় মন্ডল জানান, সৈকতে ভেঙ্গে পড়া গাছ ভূমি অফিস ও বন বিভাগের। মহীপুর ভূমি কর্মকর্তারা গাছ কেটে নিয়েছেন।

মহীপুর ভূমি কর্মকর্তা সুরেন্দ চন্দ্র জানান, তাঁরা গত মেীসুমে ৭০ টি ও এবার ২০/২৫ টি সেগুন,জাম ও চাম্বল গাছ উদ্ধার করেছেন সৈকত থেকে। তবে সৈকতে ভেঙ্গে পড়া নারিকেল, ঝাউসহ অন্য জাতের গাছ তাঁরা আনেন নি। এগুলো স্থানীয়রা নিজ উদ্যেগে নিয়ে যাচ্ছে। কারন ওই গাছ তাঁদের কোন কাজে আসবে না। তাই বাঁধা দিচ্ছেন না। তাঁদের সংগ্রহ করা গাছ জেলাপ্রশাসকের অনুমতিতে নিলাম দেয়া হবে বলে তিনি জানান।

(এমকেআর/এসসি/আগষ্ট১৪,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test