E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাদারীপুরে স্কুলছাত্রী হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধনে পুলিশের হামলা

২০১৫ আগস্ট ১৬ ১৮:০৩:৪০
মাদারীপুরে স্কুলছাত্রী হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধনে পুলিশের হামলা

মাদারীপুর প্রতিনিধি: মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুরে দুই স্কুলছাত্রী হত্যা, রাজন হত্যাসহ সারা দেশে শিশু হত্যার প্রতিবাদে রবিবার বেলা ১১টার দিকে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হলে পুলিশ ব্যানার কেড়ে নিয়ে মানববন্ধন ভেঙ্গে দেয়।

এসময় আয়োজককে আটক করে নিয়ে যাবার সময় মিডিয়াকর্মী ও শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের বাঁধার মুখে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

এছাড়াও ঘটনার চারদিন হলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত মূল আসামী রানাকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

সরেজমিন, পুলিশ, আয়োজক ও অংশগ্রহণকারী সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই স্কুলছাত্রী হত্যা, রাজন হত্যাসহ সারা দেশে শিশু হত্যার প্রতিবাদে স্থানীয় এ এইচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজের কর্তৃপক্ষ মাদারীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে। কর্মসূচীতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, আইনজীবী, নিহতের পরিবার, আত্মীয়-স্বজনসহ অনেকেই মানববন্ধনে অংশগ্রহণের জন্য আসে।

মানববন্ধন শুরু হলে মাদারীপুর মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এ ব্যাপারে কোন অনুমতি নেয়া হয়নি বলে বাঁধা দেয়। এসময় মানববন্ধনের ব্যানার কেড়ে নেয়া হয়। প্রশাসনের কাছ থেকে কোন অনুমতি ছাড়াই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করার অভিযোগ এনে এ এইচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ গাউস-উর-রহমানকে আটক করে থানায় নিয়ে যাবার চেষ্টা করা হয়। এই ঘটনায় উপস্থিত মিডিয়াকর্মী ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের বাঁধার মুখে পড়ে পুলিশ। এক পর্যায় গাউস-উর-রহমানকে ছেড়ে দেয়া হয় এবং কোন মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা যাবেনা বলে জানানো হয়।

এছাড়া পুলিশের এই আচরণ দেখে মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী ছোট ছোট শিশুরা ভয় পেয়ে যায়। এসময় তারা দ্রুত সরে যায়। অনেক শিশুই দৌড়ে তাদের অভিভাবকদের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।

সিমা বেগম, রাহিমা বেগমসহ কয়েকজন অভিভাবক জানান, পুলিশের এমন আচরণ করা ঠিক হয়নি। কারণ এই মানববন্ধনে ছোট ছোট শিশুরা অংশগ্রহণ করেছিলো। তারা পুলিশের এই আচরণ দেখে ভয় পেয়েছে।

উপস্থিত কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, প্রায় দেড় থেকে দুই শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থী এই মানববন্ধন কর্মসূচীতে অংশ নেয়। এসময় শিশুদের হাতে লাল-কালো রংয়ের প্লাকার্ড-ফেস্টুন ছিলো। তাদের এই প্রতিবাদ হচ্ছে হত্যার সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার জন্য। সাথে দোষীদের শাস্তি। অথচ সেখানেও আইনের রক্ষাকারীদের বাঁধা। শুধু যে বাঁধা তা নয়, টেনে-হিঁচড়ে এক প্রকার কমান্ড স্টাইলে সন্ত্রাসী ধরার মতো আয়োজক অধ্যক্ষ গাউস-উর-রহমানকে ধরে নিয়ে যাওয়া চেষ্টা করে পুলিশ। পুলিশের এমন আচরণ সন্দেহজনক। তবে এমন করাটা ঠিক হয়নি। শহরে অনেক মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি প্রশাসনকে না জানিয়ে হয়ে থাকে। সেখানে তো এমন আচরণ চোখে পড়ে না। তাহলে এই ভালো কাজের জন্য কেন এমন আচরণ আমাদের এই প্রশ্ন পুলিশ প্রশাসনের কাছে।

আয়োজক এ এইচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ গাউস-উর-রহমান বলেন, মাদারীপুরে আলোচিত দুই স্কুলছাত্রী হত্যা, রাজন হত্যাসহ সারাদেশে শিশু হত্যার বিচারের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। কিন্তু এ সময় সদর থানার এসআই শ্যামলেন্দু ঘোষের নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্স অতর্কিতভাবে মানববন্ধনের বাঁধা দিয়ে ব্যানার টেনে নিয়ে যায়। পুলিশ এ সময় আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে টেনে-হিঁচড়ে গাড়িতে উঠানোর চেষ্টা করে। পরে মিডিয়াকর্মী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বাঁধার মুখে রেখে যেতে বাধ্য হয়। পুলিশের এই বাধাঁকে রহস্যজনক বলে দাবী করছি। আমি এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী নিহত সুমাইয়া আক্তারের বাবা বেল্লাল শিকদার ও অপর নিহত হ্যাপীর মা মুক্তা বেগম জানান, আসামী পক্ষের লোকজন বাড়িতে গিয়ে নানা ধরণের হুমকি দিচ্ছে।

এসময় তারা মানববন্ধন ভেঙ্গে দেয়ার ব্যাপারে বলেন, এখানে বিচারের দাবীতে শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন হচ্ছিল। কিন্তু পুলিশ কেন এমন আচরণ করলো আমাদের জানা নেই। তবে আমরা এর সঠিক বিচার চাই।

এ ব্যাপারে কর্তব্যরত মডেল থানার এসআই শ্যামলেন্দু ঘোষ জানান, থানার থেকে কোন অনুমতি নেয়া হয়নি। বিধায় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে মানববন্ধন কর্মসূচী বাঁধা দেয়া হয়েছে। অনুমতি নিয়ে আসলে তারা মানববন্ধন করতে পারে। অধ্যক্ষকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেনি। শুধু তাকে মানববন্ধন না করার কথা বলেছি।

এদিকে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন জানান, হত্যাকান্ডের তদন্ত চলছে। যে কারণে কেউ মানববন্ধন বা অন্য কর্মসূচী নিতে হলে অবশ্যই পুলিশের অনুমতি নিতে হবে। ঐ স্কুল এন্ড কলেজের কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমাদের জানায়নি। তাই তাদের মানববন্ধন করতে দেয়া হয়নি। তবে অনুমতি চাইলে, বিষয়টি ভেবে দেখা যাবে। ক্ষেত্রে বিশেষ আমরা তাদের পাহাড়ারও ব্যবস্থা নিবো। তাছাড়া মানববন্ধনে ছোট ছোট শিশুরা অংশ নিয়েছে। তাই এখানে যেন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেই নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কর্মসূচী করতে দেয়া হয়নি।

এসময় মুল আসামী রানা গ্রেফতারের ব্যাপারে বলেন, আশা করছি দ্রুত রানাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। তাছাড়া গ্রেফতার ৩ আসামীর কাছে থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে তা এখন বলা যাচ্ছে না।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পারভেজ রায়হান বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে কেউ শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করলে পুলিশ বাঁধা দিতে পারে না। তাছাড়া বিষয়টি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। দুই জন শিক্ষার্থীকে নৃংশসভাবে হত্যা করা হলো, সেই হত্যার বিচার দাবী করা দোষের নয়। আমরা পুলিশের বিষয়টি শুনেছি। তবে মানববন্ধন করার আগে সংশ্লিষ্টরা আমাকে জানাইনি। পুলিশ এব্যাপারে এখানে এসেছে সেটাও আমাদের জানায়নি। আসলে দুপক্ষেরই আমাদের আগে থেকেই বিষয়টি জানালে ভালো হতো।

তিনি আরো বলেন, জেলা প্রশাসক কাজের জন্য অফিসের বাহিরে আছেন। তিনি আসলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

উল্লেখ্য, মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণীর দুই ছাত্রী মস্তফাপুর গ্রামের বিল্লাল শিকদারের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার ও একই গ্রামের হবি খানের মেয়ে হ্যাপী আক্তারকে ১৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার বিকেলে হত্যা করা হয়। পরিবারের অভিযোগ, তাদের ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

এই ঘটনায় মাদারীপুর মডেল থানা পুলিশ মস্তফাপুর গ্রামের কামাল শিকদারের ছেলে রকিব শিকদার, কুদ্দুস শিকদারের ছেলে শিপন শিকদার ও আক্তার দর্জির ছেলে রফিকুল দর্জিকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়াও বাকি আসামিরা হলো রানা, উজ্জ্বল, মেহেদী ও সাজিদ।

(এএসএ/এলপিবি/আগস্ট ১৬, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test