E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

পশুহাটে টোল আদায়ের নামে চলছে নীরব চাঁদাবাজি!

২০১৫ সেপ্টেম্বর ০৯ ১৮:৩৮:২৫
পশুহাটে টোল আদায়ের নামে চলছে নীরব চাঁদাবাজি!

নওগাঁ প্রতিনিধি : উত্তরবঙ্গের অন্যতম নওগাঁর মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া পশুরহাটে ইজারাদারের দৌরাত্ম চরম পর্যায়ে পৌঁছছে। টোল আদায়ের নামে চলছে নীরব চাঁদাবাজি।

একাধিক সূত্র জানায়, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে অতিরিক্ত অর্ধকোটি টাকা আদায়ের টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছে হাটের ইজারাদার। এতে আগামি দুইহাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের পরিমান আরো বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা ক্রেতা ও ব্যবসায়ির। এদিকে হাট বুঝে নেয়ার ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও টাঙানো হয়নি সরকারি মূল্য তালিকা।

উপজেলা নির্বাহী অফিস সুত্রে জানা গেছে, বাংলা ১৪২২ সনের জন্য চৌবাড়িয়া হাট ২ কোটি ৭৫ লাখ ৬৫ হাজার ৫শ’ টাকায় ইজারা প্রদান করা হয়েছে। রাজশাহীর বড় মঠপুকুর এলাকার আলহাজ্ব আব্দুস সামাদের ছেলে আবুল বাসার সুজন হাটটি ইজারা নিয়েছেন। সরকারিভাবে প্রতিটি গরু-মহিষের জন্য ২শ’ টাকা ও ছাগল-ভেড়ার জন্য ৭৫ টাকা হারে টোল নির্ধারন রয়েছে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করে।

ক্রেতা, ব্যবসায়ি ও স্থানীয়দের অভিযোগ, চৌবাড়িয়া পশুরহাটে ইজারাদারের লোকজন সরকার নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত দেড় থেকে প্রায় দ্বিগুন হারে টোল আদায় করছে। প্রতিটি গরু-মহিষে ৩১০ টাকা ও ছাগল-ভেড়ায় ২শ’ টাকা হারে আদায় করছেন তারা। এছাড়া লেখনির জন্য আদায় করা হচ্ছে আরো ২০ টাকা। এসবের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামেও টাকা তুলছেন ইজারাদারের লোকজন। তাদের অভিযোগ, রশিদে পশুর বিক্রি মূল্য উল্লেখ থাকলেও টোল আদায়ের ঘরে টাকার পরিমান লেখা থাকছে না।

এসব চাঁদাবাজি নির্বিঘ্ন করতে ইজারাদার হাটের চারপাশে অনুগতদের দিয়ে পাহারা বসিয়ে থাকেন। যুবকরা বাঁশের লাঠি ও লোহার রড হাতে নিয়ে হাটের চারপাশ পাহারা দেন। টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি করা হলেও ভাড়াটিয়া যুবকদের তান্ডবে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। প্রতিবাদ করলেই লাঞ্ছিত ও হাটে বিক্রি করতে নিয়ে আসা পশু আটক, কখনো বা কেড়ে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি ও ব্যবসায়ি জানান, ঈদের আগে চৌবাড়িয়াতে আর মাত্র দুইদিন পশুরহাট বসবে। এ দু’হাটে অন্তত ২৫ হাজার পশু বেচাকেনা হবে। আর এ সুযোগ কাজে লাগাতে ইজারাদার প্রতিটি পশুর খাজনা অতিরিক্ত আরো ৫০ থেকে ৬০ টাকা বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ক্রেতা ও ব্যবসায়িরা। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দুই হাট থেকে অন্তত ৬০ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায়ের টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছেন ইজারাদার।

উপজেলার খুদিয়াডাঙ্গা গ্রামের আব্দুস সামাদ, মটগাড়ী গ্রামের মকবুল হোসেন, চকশ্যামরা গ্রামের আবুল কাসেম জানান, গত শুক্রবার হাটে গরু কেনার পর তাদের নিকট থেকে প্রতিটি পশুর বিপরীতে ৩১০ টাকা করে খাজনা আদায় করা হয়েছে।

এজন্য তাদের যে রশিদগুলো দেয়া হয়েছে তাতে পশুর মূল্য উল্লেখ করা হলেও খাজনার টাকার উল্লেখ নেই। তাদের অভিযোগ, ইজারাদার ইচ্ছেমতো হাটের টোল বাড়ালেও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। টাঙানো হয়নি মূল্য তালিকা। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ইজারাদার এ চাঁদাবাজি করছে বলেও অভিযোগ ক্রেতা ও ব্যবসায়িদের।

অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে চৌবাড়িয়া হাট কমিটির সভাপতি ও ভারশোঁ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শারিকুল ইসলাম বলেন, এনিয়ে তিনি জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ দাখিল করেন। জেলা প্রশাসক তদন্ত করে রিপোর্ট দাখিলের জন্য মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেন।

ইজারাদার আবুল বাসার সুজন অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন। মূল্য তালিকা টাঙানো বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে, চৌবাড়িয়া হাটে এখন পর্যন্ত টোল আদায়ের কোনো তালিকা টাঙানো হয়নি বলে স্বীকার করেছেন ইউএনও সাইফুর রহমান খান। অতিরিক্ত টোল আদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে ইজারাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(বিএম/এএস/সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test