E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্বামীর কাছে পাঠানো হলো না লাবন্য ও ছেলের ছবি

২০১৫ অক্টোবর ০৫ ১৫:৪৯:০৮
স্বামীর কাছে পাঠানো হলো না লাবন্য ও ছেলের ছবি

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : ক্লিনিকের একটি কক্ষে বসে লাবন্যর মা লায়লা বেগম আহাজারি করে বলছিলেন, “ লাবন্যকে ওটিতে নেয়ার সময় লাবণ্য আমাকে বার বার বলছিলো আমার ছেলে হওয়ার সাথে তোমরা ছবি তুলে ওর বাবার কাছে ইতালীতে পাঠিয়ে দিবা। ওর বাবা তার সন্তানের মুখ দেখার জন্য ইতালীতে অপেক্ষা করছে । এখন আমার মেয়ে ও নাতি দুই জনকেইতো মেরে ফেললো, আমিতো ওর ছেলের ছবি পাঠাইতে পারলামনা, আমি এখন কি জবাব দেব মেয়ের জামাইর কাছে”।

শরীয়তপুরে নিউমেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড ক্লিনিকে চিকিৎসকের অবহেলায় । রোববার রাতে এক প্রসূতি ও তার নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়েছে । এ ঘটনায় পালং মডেল থানায় মামলা হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শরীয়তপুর জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে অবস্থিত নিউ মেট্রো ক্লিনিকে রবিবার রাত ৮ টার সময় চিকিৎসকের অবহেলা ও অপ চিকিৎসায় প্রসূতি লাবন্য আক্তার (২৫) ও তার নবজাতক শিশু পূত্রের মৃত্যু হয়েছে। লাবন্য জেলা নড়িয়া উপজেলার মশুরা গ্রামের ইতালী প্রবাসী আব্দুল জলিল মাদবরের স্ত্রী। গত শুক্রবার বিকেলে নিউ মেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড ক্লিনিকে ডাক্তার সৈয়দা সাহিনুর নাজিয়ার অধীনে ভর্তি করা হয়। ৩দিন প্রসূতিকে অবজারবেশনে রাখার পর রবিবার সন্ধ্যাায় স্বাভাবিকভাবে লাবন্যর সন্তান প্রসবের কথা ছিল।

সে অনুযায়ী রবিবার সন্ধ্যা ৭টার সময় লাবন্যকে সন্তান প্রসবের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। সন্তান প্রসবের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর মাতৃগর্ভ থেকে নবজাতকের শরীরের একাংশ বেড়িয়ে আসার পর সেখানে প্রসূতিকে একজন আয়ার দায়ীত্বে রেখে ডাক্তার সৈয়দা সাহিনুর নাজিয়া তখন অন্য রোগীর অপারেশনের জন্য চলে যান। এ সময় ঐ প্রসূতি ব্যাথার যন্ত্রনায় ছটফট করছিল। বার বার সে একটু পানি খেতে চেয়েছিল। ডাক্তারের কাছে জিজ্ঞেস করার পর সে পানি খেতে দেয়নি। লাবন্যর অবস্থা বেগতিক দেখে আয়াও অপারেশন থিয়েটার থেকে চলে যায়। একসময় ব্যথার যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে প্রর্সূতি লাবন্য রাত ৮ টায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে । মৃত্যুর খবর ছরিয়ে পরলে রোগীর আত্মীয়-স্বজন এসে ক্লিনিকে হৈ চৈ ও ভাংচুর শুরু করে ।

এ সময় আশে পাশের শত শত লোক এসে ক্লিনিকে ভিড় জমায়। ঘটনার পর থেকেই ডাক্তার, নার্স ও ক্লিনিকের অন্যান্য কর্মকতা-কর্মচারীরা গা ঢাকা দিয়েছেন। সংবাদ পেয়ে শরীয়তপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) গোলাম রাব্বানী, পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ খলিলুর রহমান সহ পালং মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে করে। রাত ১১টায় পুলিশ লাশের সুরতহাল শেষে ময়না তদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল হিমঘরে নিয়ে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্বামীর ফুফাত ভাই সালাউদ্দিন পেদা বাদী হয়ে সোমবার সকালে ডাঃ সৈয়দা সাহিনুর নাজিয়াকে আসামী করে পালং মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আসামী ডাঃ সৈয়দা সাহিনুর নাজিয়া পলাতক রয়েছে। পুলিশ তাকে গ্রেফতারের জন্য খুজছে।

এদিকে শরীয়তপুরের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ নির্মল চন্দ্র দাস এ বিষয়ে সদর হাসপাতালের গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাঃ সাজেদা আকতার কনাকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত টীম গঠন করে ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। টীমের অন্য সদস্যরা হচ্ছেন জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মুনির আহম্মেদ খান, নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ মতিউর রহমান। সোমবার দুপুর ১২টায় শরীয়তটুর সদর হাসপাতাল মর্গে মা ও শিশুর ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়। বিকেল ৫টায় জলিল মাদবরে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।

এ ব্যাপারে নিহত লাবন্য’র বোনের স্বামী সেলিম বলেন, লাবন্যর বিয়ে হয় ৮ বছর আগে। তাদের জয়ীতা নামে ৬ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। একটি পূত্র সন্তান পাবার আশায় তারা দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেয়। আরো আগেই চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানিয়েছিলেন লাবন্যর গর্ভে এবার পূত্র সন্তান জন্ম নিবে। এ নিয়ে লাবন্যদের পরিবারে খুশির জোয়ার বইছিল। কিন্তু ডাঃ সৈয়দা সাহিনুর নাজিয়া আমাদের রোগীর প্রতি কোন গুরত্ব না দিয়ে অবহেলা করে লাবন্য ও তার নবজাতক পূত্রকে মেরে ফেলেছে। আমরা ডা. নাজিয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

নিউমেট্রো ডায়াগনষ্টিক এন্ড ক্লিনিকের পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা মানুষের সেবা করার জন্য ক্লিনিক দিয়েছি। কারো জীবনের ক্ষতি হোক আমরা কখনোই কামনা করিনা। চিকিৎসকের অবহেলায় যদি রুগির মৃত্যু হয়ে থাকে তার দায়ীত্ব চিকিৎসককেই নিতে হবে। এজন্য ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ দায়ী হবেনা। এ বিষয়ে আইন অনুয়ায়ী প্রশাসন তদন্ত সাপেক্ষে যে সিদ্ধান্ত দিবে আমরা তা মাথা পেতে নেব।

শরীয়তপুর সদর পালং মডেল থানার ওসি মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে। এ ঘটনায় পালং মডেল থানায় মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শরীয়তপুরের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাক্তার নির্মল চন্দ্র দাস বলেন, এ ব্যাপারে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(কেএনআই/এএস/অক্টোবর ০৫, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test