E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নওগাঁয় শীতের সব্জি শিম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে চঞ্চল সহ অনেকেই

২০১৫ নভেম্বর ০৫ ২০:৩১:০০
নওগাঁয় শীতের সব্জি শিম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে চঞ্চল সহ অনেকেই

নওগাঁ প্রতিনিধি :নওগাঁয় শীতের সব্জি আগাম শিম চাষ করে দিনমজুর চঞ্চলসহ অনেক কৃষকই আজ আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আর সংসারে এসেছে তাদের স্বচ্ছলতা। বর্তমানে নওগাঁ জেলায় চাষকৃত শিম এলাকার চাহিদা পূরণ করে চালান হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

শীতের এই সময় বাজারে পাওয়া সবজিগুলোর মধ্যে শিম অন্যতম । সবার কাছেই শিমের বেশ কদর রয়েছে। অনেকে বাড়িতে শিম চাষ করেও পরিবারের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করেন। এই এলাকার ঊর্বর পলিমাটি শিম চাষের জন্য উপযোগী। মৌসুম ভিত্তিক অন্যান্য আবাদের পাশাপাশি শিম চাষে বর্তমান সময়ে নওগাঁ যেন এক মডেল। অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভ তাই প্রতি বছরই বাড়ছে শিম চাষের পরিমাণ। নওগাঁর সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার সড়কের দুই পাশের মাঠে এখন শুধু সবুজ শিমের আড়ানি। নওগাঁ জেলার সদর উপজেলার হাপানিয়ার চকআতিথা গ্রাম বর্তমানে শিম চাষের গ্রাম নামে পরিচিতি লাভ করেছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় এবার ওই গ্রামে শিম চাষ কিছুটা কম হলেও ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। আবাদকৃত এই শিমের সবই আশ্বিনা, কাতিষা, রাজশাহী, রহিম ও রূপবান নামের উচ্চ ফলনশীল আগাম জাতের শিম। রহিম ও রূপবান শিমের আকার, ওজন, দাম, স্বাদ, ফলন সবই এক রকম। পার্থক্য শুধু রঙের। আশ্বিনা, কাতিষা, রাজশাহী শিম বিভিন্ন আকারের হয়। রূপবান শিম দেখতে লালচে এবং রহিম শিম দেখতে সাদা।

কৃষকরা জানান, এই গ্রামে শিমের বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয় আজ থেকে আট বছর আগে বাবুল আহমেদ নামে এক কৃষকের হাত দিয়ে। এরপর তা পুরো গ্রাম ছড়িয়ে আশপাশের অন্তত ৮টি গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এক সময় এই গ্রামের কৃষকদের চাষাবাদ চলত প্রকৃতির খেয়ালের ওপর নির্ভর করে। ঠিকমতো তিন বেলা খাবার জুটতো না অনেকের। পরিকল্পিত পদ্ধতিতে রঙিন শিম চাষ করে তারা এখন ভাগ্য বদলে ফেলেছেন। অভাবকে জয় করেছেন। কেউ কেউ রঙিন শিমে রাঙিয়েছেন তাদের অভাবী সংসার জীবনকে।
নওগাঁ সদর উপজেলার হাপানিয়া এলাকার চকআতিথা গ্রামের কৃষক বাবুল প্রথমে অল্প পরিমাণ জমিতে এই শিম চাষ করে বিপ্লব সৃষ্টি করেন। পরবর্তী সময়ে বাবুল কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ব্যাপক ভাবে শিম চাষ শুরু করেন। তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ওই গ্রামের অনেকেই এই শিম চাষ শুরু করেন। দিনমজুর চঞ্চল প্রথমে বাবুল ও পরে আপ্রকাশি কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে প্রথমে ১বিঘা জমি ইজারা নেন। সেই জমিতে শিমের আবাদ শুরু করেন। প্রথম বছরই খরচ বাদে লাভ করেন ১ লাখ টাকা। এরপর প্রতি বছর শিমের আবাদ করছেন। শিমের লাভ থেকেই বর্তমানে ৪ কাঠা জমি কিনে সেখানে ইটের বাড়ি তৈরি করেছেন। একই গ্রামের সাইদুল ইসলাম চলতি মৌসুমে ১ বিঘা জমিতে শিমের চাষ করেছেন। তিনি আসা করছেন খরচ বাদে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার শিম বিক্রি হবে। আজ ওই গ্রামে চঞ্চল ও সাইদুলের মতো ভিকু রহমান, নূর ইসলাম, মন্টু হোসেনসহ অনেকেই রঙিন শিম চাষে ভাগ্য বদলেছেন। শিম চাষ করে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন, চকআতিথা গ্রামের এক সময়ের ভূমিহীন দিন মজুর চঞ্চল হোসেন। ৮বছর আগে তিনি অন্যের জমিতে ঘর তুলে স্ত্রী- সন্তান নিয়ে কোনো রকমে দিন কাটাতেন। তিন বেলা ঠিক মতো খাবারও জুটতো না তার। কঠোর পরিশ্রমী কৃষক চঞ্চল এখন সফল শিম চাষীদের মধ্যে একজন।

শিম চাষী চঞ্চল হোসেন জানান, প্রতি মৌসুমে এক বিঘা জমিতে শিম চাষে খরচ হয় প্রায় ২৫ হাজার টাকা। মাঘ মাস পর্যন্ত পুরো মৌসুমে ৩ হাজার কেজি শিম বিক্রি করা যায়। জমি থেকে প্রতি কেজি শিম ৪০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হলেও এই মৌসুমে শিম বিক্রি করে প্রায় ১লাখ ২০ হাজার টাকা আসবে। শিম চাষী বাবুল আহম্মেদ, নূর ইসলাম, মন্টু হোসেন, সাইদুুল ইসলাম জানান, মৌসুম ভিত্তিক শিম চাষ ধান-পাট চাষের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় গ্রামের অধিকাংশ কৃষকরা বর্তমানে শিম চাষের দিকে ঝুঁকছেন। কৃষক ভিকু রহমান জানান, চারা রোপনের সময় আবহাওয়া প্রতিকূল থাকায় চলতি বছরে তিনি দুই বিঘা জমিতে শিমের আবাদ করেছেন। সর্বশেষ বিক্রি করেছেন প্রতি কেজি ৫৫ টাকা দরে। আশা করছেন, এ বছরও তিনি খরচ বাদে প্রায় ৩ লাখ টাকা লাভ করবেন।

শিম চাষ বিষয়ে সান্তাহার আপ্রকাশি কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউটের মাঠ কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম জানান, ওই গ্রামের বাবুল আহমেদ বেড়াতে এসে আমাদের গবেষণাগার আপ্রকাশি খামার বাড়িতে রঙিন শিম চাষের পরীক্ষামূলক এক খন্ড জমি দেখতে পান। পরে আমাদের কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন কৃষি ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতায় ওই গ্রামের বাবুল, দিনমজুর চঞ্চলসহ অনেকেই জমিতে পরিকল্পিত পদ্ধতিতে রঙিন শিম চাষ শুরু করেন । তাদের দেখাদেখি আজ ওই গ্রামের অনেক গরীব কৃষকরা এই শিম চাষ করে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। কম পরিশ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় বর্তমানে ওই গ্রামের কৃষকরা শিম চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।



(বিএম/এসসি/নবেম্বর০৫,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test