E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দিগন্ত জুড়ে হলুদের সমারোহ

নওগাঁয় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষার আবাদ

২০১৫ ডিসেম্বর ০৯ ১২:০০:০৮
নওগাঁয় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষার আবাদ

নওগাঁ প্রতিনিধি : চলতি রবি মৌসুমে নওগাঁ জেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। বেড়ে ওঠা গাছ আর নয়নাভিরাম সরিষার ফুল সৃষ্টি করেছে দিগন্ত গুড়ে হলুদের সমাহার। এ অবস্থায় অধিক ফলনের স্বপ্ন দেখছেন জেলার কৃষকরা। কৃষকদের মতে, সরকারীভাবে তাদের কাছ থেকে সরাসরি সরিষা কিনলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন কৃষকরা। আর কৃষি বিভাগের দাবী সরিষা চাষের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন কৃষকরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জেলার বিশেষ করে সদর, রাণীনগর, আত্রাই, মান্দা, মহাদেবপুর, পত্নীতলা, ধামইরহাট ও বদলগাছী উপজেলার মাঠগুলোতে সরিষা চাষের দৃশ্য চোখে পড়ার মত। মাঠের পর মাঠ জুড়ে শুধুই হলুদের সমারহ। সরিষার মাঠে দেখা মিলছে মৌমাছির মধু আহরণের দৃশ্য। মাঠে মাঠে সরিষার ক্ষেতে মৌমাছির গুঞ্জন পরিবেশটাকে যেন মধুময় করে তোলে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ১১টি উপজেলায় সরিষার মোট আবাদ হয়েছে ২৯ হাজার ৬শ’ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উন্নত ফলনশীল (উফশী) জাতের ২৭ হাজার ৭শ’ ৫০ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ১ হাজার ৮শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হচ্ছে। উপজেলাভিত্তিক সরিষার আবাদের পরিমাণ নওগাঁ সদর উপজেলায় উফশী জাতের ১হাজার ৮শ’ ৯০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ১শ’ ৬০ হেক্টর, রাণীনগর উপজেলায় উফশী জাতের ২ হাজার ৯শ’ হেক্টর, আত্রাই উপজেলায় উফশী জাতের ৩ হাজার ৫শ’ হেক্টর, বদলগাছি উপজেলায় উফশী জাতের ১ হাজার ২০হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৩০ হেক্টর, মহাদেবপুর উপজেলায় উফশী জাতের ১ হাজার ৭শ’ ৬০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ২০হেক্টর, পত্নীতলা উপজেলায় উফশী জাতের ৩ হাজার ১শ’ ৯৫ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৫ হেক্টর, ধামইরহাট উপজেলায় উফশী জাতের ২হাজার ৭শ’ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ১শ’ হেক্টর, সাপাহার উপজেলায় উফশী জাতের ১হাজার ৬শ’ হেক্টর, পোরশা উপজেলায় উফশী জাতের ১হাজার ২শ’ ৫০হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৫শ’ হেক্টর, মান্দা উপজেলায় উফশী জাতের ৫ হাজার হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ১হাজর হেক্টর এবং নিয়ামতপুর উপজেলায় উফশী জাতের ৩হাজার ৩৫ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৩৫ হেক্টর। কৃষি বিভাগের সূত্র অনুযায়ী বুধবার (৯ডিসেম্বর) পর্যন্ত জেলায় মোট ৯৭ শতাংশ জমিতে সরিষা বপন সম্পন্ন হয়েছে। এবার সরিষার বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা করছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তাদের হিসাব অনুযায়ী (উফশি) সরিষা প্রতি হেক্টর জমিতে ১ দশমিক ৮ মেট্রিক টন করে উৎপাদিত হবে। এতে উল্লেখিত পরিমাণ জমি থেকে ৫১ হাজার ২শ’ ৮০ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদিত হবে বলে আশা করছেন তারা।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ আত্রাই উপজেলার হাটকালুপাড়া ইউনিয়নের সন্যাসবাড়ী গ্রামের রজব আলীর ছেলে কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, বন্যায় আমন আবাদ ডুবে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য আগাম সরিষার চাষ করেছি। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এপর্যন্ত সরিষায় কোন পোকার আক্রমণ দেখা যায়নি। আমার দেড় বিঘা জমিতে কমপক্ষে ৭মন সরিষা পাবো। এই সরিষা ঠিকমতো বাজারজাত করতে পারলে আমি বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো।

রাণীনগর উপজেলার খট্টেশ্বর গ্রামের সরিষা চাষী ফজলুল হকের ছেলে সিরাজুল ইসলামের জানান, আমি এবার ৩ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। বন্যায় জমিতে পলি পড়ায় সরিষা গাছগুলি খুবই জোড়ালো দেখা যাচ্ছে। অধিক ফলন পাবো বলে আশা করছি। তবে ভাল দাম পেতে সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

উপজেলার গোনা গ্রামের কৃষক রহিম উদ্দিন জানান, এবারের বন্যায় ধানের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এ মৌসুমে ১০ বিঘা জমিতে তিনি আগাম সরিষার আবাদ করছেন। সরিষা তুলে নিয়ে ওই সব জমিতে তিনি বোরো ধান রোপন করবেন । সরিষার ফসল থেকে উর্পাজিত আয় বোরো ধান উৎপাদনে সহায়তা পাবেন বলে তিনি দাবী করেন।

নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের চুনিয়াগাড়ী গ্রামের কৃষক নকিমুদ্দীন বলেন, আমি ২ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। সরকারীভাবে ধানের মতো সরিষাও যদি সংগ্রহ করা হয় তাহলে আমরা এই সরিষা চাষে আগামীতে আরও আগ্রহী হবো।

এ ব্যাপারে নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সত্যব্রত সাহা জানান, এ বছর বন্যা পরবর্তী ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করতে কৃষকদের আগ্রহী করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বন্যা দূর্গত এলাকার কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণসহ সরিষা বীজ বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।

(বিএম/এইচআর/ডিসেম্বর ০৯, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test