E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

উপকূলে ক্ষতিকর জালের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান

২০১৬ জানুয়ারি ১২ ১৫:৫৮:১৬
উপকূলে ক্ষতিকর জালের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : বন্ধ হয়নি পটুয়াখালীর বাউফলের তেঁতুলিয়ায় ক্ষতিকর জালের ব্যাবহার। উপকুলীয় জলাশয়ে নিষিদ্ধ হলেও তেঁতুলিয়া নদীতে এসব ক্ষতিকর জালের ব্যাবহার বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা নেই। জনবলের অভাবে অভিযান পরিচালনার সক্ষমতা নেই উপজেলা মৎস্য অফিসের।

জানা গেছে, ৪ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত উপকুলীয় ভোলা, পটুয়াখালী ও বরগুনার দ্বীপ, চরাঞ্চল ও নদীর মোহনায় বেহুন্দি জাল, কারেন্ট জাল, মশারি জাল, চটজাল, টং জালের মতো ক্ষতিকর জালের ব্যাবহার নিষিদ্ধ ও দন্ডনীয় অপরাধ ঘোসণা করে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ, বিজিবি, ও পুলিশ ছাড়াও স্থানীয় প্রশাসনের বিশেষ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু উপজেলা মৎস্য অফিসের পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় তেঁতুলিয়া নদীতে এ বিশেষ অভিযানেরর কোনই প্রভাব পড়েনি।

অফিস সহকারী সোহেল রানা জানান, ঢাকার সাভারে প্রশিক্ষণে আছেন উপজেলা মৎস্য অফিসের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শরীফ হাসান সোহাগ। গত ডিসেম্বর প্রশিক্ষণে যান এবং সেখানে কাটাবেন তিনি জুন পর্যন্ত। প্রশিক্ষণকালিন কামরুল ইসলাম নামে কলাপাড়া এলাকার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা একই দায়িত্বে থাকলেও সেখান থেকে এসে অফিস পরিচালনা সম্ভব হয় না।

এছাড়া কলাপাড়ার এলাকার ওই সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার রয়েছে সাগরসহ বিশাল এলাকা। গত নভেম্বর থেকে শুন্য রয়েছে উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তার পদ। তিন মাসের ডিপ্লোমা কোর্সের প্রশিক্ষণে ফরিদপুরে আছেন ক্ষেত্রসহকারী এনামুল হক অপু। বর্তমানে বিশেষ অভিযানের কারণে (১৮ জানুয়ারী পর্যন্ত) ডেপুটেশনে বরিশালের নেছারাবাদ থেকে সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা জুলফিকার আলী ও বানারী পাড়া থেকে ক্ষেত্রসহকারী বিনয় কুমার এসে কাজ করছেন।

নদীতে অভিযান পরিচালনার কথা জানালেও ক্ষতিকর জাল আটক কিংবা অভিযানের সফলতার কথা তুলে ধরতে পারেননি (অফিস সহকারী সোহেল রানা) তিনি। তেঁতুলিয়ায় জুন মাস পর্যন্ত চলে জাটকা অভিযান। মার্চ-এপ্রিল থাকে অভয়াশ্রম। এখন চলছে ক্ষতিকর জালের ব্যাবহারে বিশেষ অভিযান। বস্তুত এই সময়ে অফিস সহকারী ও একজন পিয়ন (এমএলএসএস) নিয়েই চলছে বাউফল উপজেলা মৎস্য অফিস।

এদিকে বিশেষ অভিযানের অষ্টম দিনে সোমবার পটুয়াখালীর তেঁতুলিয়ার কোনই প্রভাব পড়েনি জানায় জেলে ও সংশ্লিস্টরা। চরওয়াডেল, চরব্যারেট, রায়সাহেব, বগী, মমিনপুর, ধুলিয়া, বাদামতলী, তালতলী পয়েন্টে অসাধু জেলেরা ক্ষতিকর বাঁধা জাল, কারেন্ট জাল, টং জাল, মসুর জালে চাপিলা (ইলিশের বাচ্চা), ভেলিগুরা, কাঁচকি, লাল দগরি, জাটকাসহ ছোট মাছ শিকার করছেন। এসব মাছ বিক্রিও করছেন তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরওয়াডেল ও চরব্যারেটের একাধিক জেলেরা জানান, অবরোধের সময় যেমন মা ইলিশ শিকার করেছেন এবার চাপিলা, কাঁচকি, ভেলিগুরা, রেণুপোনা, জাটকাসহ ছোটমাছও শিকার করছেন অনেকে। বাঁধা ও বেহুন্দি জালে ছোট মাছ শিকার করা বন্ধে চরের সাধারন মানুষসহ জেলেরা গত ২৩ ডিসেম্বর চরওয়াডেল এলাকার নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করলেও তা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, প্রভাবশালী আর প্রশাসনের সহোযোহিতা না থাকায় কার্যকর হয়নি।

চরব্যারেটের বৌ-বাজার এলাকার মাছের আড়ৎদার শহিদুল খলিফা জানান, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে মা ইলিশ শিকার ছাড়াও এ সময়ে কাঁচকি, চাপিলা, জাটকাসহ বিভিন্ন নামে ছোট মাছ শিকারের কারণে দিনদিন তেঁতুলিয়া মাছ শুন্য হচ্ছে।

পটুয়াখালী সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক পিযুষ কান্তি হরি বলেন, ‘বৈশ্বয়িক আবহাওয়া পরিবর্তণের প্রভাব পড়ছে জলে ও স্থলে। এ সময় ক্ষতিকর জালের ব্যাবহার বন্ধ করে মৎস্য ভান্ডার সংরক্ষণে ব্যাপক গণসচেতনতা, রাজনৈতিক নের্তৃবৃন্দের পূর্ণ-সহোযোগিতাসহ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। ইলিশ শিকার ছাড়াও কাঁকড়া, কাঁচকি, চাপিলা, লাল দগ্রীসহ ছোট মাছ ও রেণু পোনা নিধণের কারণে মাছ শুন্য হচ্ছে তেঁতুলিয়া-লোহালিয়া এই দুই নদী।’

উপজেলা মৎস্য অফিসের লোকবল সঙ্কটের কথা তুলে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান (০১৭৪৬৬১২৬২৫) জানান, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রশিক্ষণে আছেন। আমাদের বিশাল জলরাশি।

আমি নিজেও অভিযানে বের হই। গত ৭ জানুয়ারি থেকে চার দিনে তেঁতুলিয়া নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযান পরিচালনা করে ১৮ লাক্ষ ১২ হাজার ৫শ’ টাকা মূল্যের ৫৫হাজার ৪শ, ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে মোট ৮৪টি কারেন্ট ও বেহুন্দি জাল আটক করা হয়েছে।’

(এমএবি/এএস/জানুয়ারি ১২, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test