E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জাজিরায় গুলি করে হত্যা,  চলছে স্বজনদের শোকের মাতম

২০১৬ মার্চ ০৬ ১৫:৫০:২৪
জাজিরায় গুলি করে হত্যা,  চলছে স্বজনদের শোকের মাতম

শরীয়তপুর প্রতিনিধি :শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের চরজয়নগর মোল্যাকান্দি গ্রামে জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে প্রতিপক্ষের গুলিতে একজন খুন হয়েছে।

জানা গেছে, দীর্ঘ দিন থেকে ওই গ্রামের জব্বার হাওলাদারের ছেলে কালাম হাওলাদার ও লালমিয়া হাওলাদারের ছেলে দাদন হাওলাদারের সাথে জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। তারা একে অপরের চাচাতো ভাই। ঘটনাস্থল জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন।

এ নিয়ে এলাকায় একাধিক শালিস বৈঠক হলেও কোন মীমাংসা হয়েনি। শনিবার উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় । এর জের ধরে কালাম হাওলাদার গং শনিবার সারা রাত অস্ত্র শস্ত্র যোগাড় করে রবিবার ভোর সাড়ে ৬ টার সময় দাদন হাওলাদারের বাড়ি আক্রমন করে। দাদন হাওলাদার প্রতিপক্ষের আক্রমনের পর জীবনের নিরাপত্তার জন্য তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রতিবেশী মরন খানের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় গ্রহন করে। সেখানে আক্রমন চালিয়ে বোমা হামলা ও গুলি বর্ষণ করে। গুলিতে দাদন খানের ভাই সোনামিয়া (৩৫) ঘটনাস্থলে নিহত হন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় নিহতের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। সোনা মিয়ার মা সুফিয়া বেগম ও বাবা লাল মিয়া হাওলাদার সোনা মিয়ার লাশের উপর আছরে পরে আহাজারি করছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। পরিবারের সদস্যরা খুনিদের ফাঁসির দাবি করেছেন।

সোনা মিয়া হাওলাদারের পারবিারিক সূত্রে জানা যায়, তিনি ঢাকায় একটি প্রাইভেট কারের চালক ছিলেন। বাড়িতে ভাইদের সাথে দ্বন্দ্বের কথা শুনে শনিবার রাতে লঞ্চে করে রবিবার ভোরে এসে বাড়িতে পৌঁছে। এর কিছুক্ষণ পরইে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সোনা মিয়া তিন পূত্র ও ১ জন কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন্ তিনি স্ত্রী আকলিমা ও সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় থাকতেন।

স্থানীয় আলী আকবর মোল্যা জানান , শনিবার রাতে কালাম হাওলাদারের আত্মীয় একই গ্রামের বাশার মোল্যার বাড়িতে কয়েকটি গ্রামের সন্ত্রাসীদের জমায়েত করে তাদের রাতভর খিচুড়ি খাওয়ানো হয়। সেখানে সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে গান বাজনারও ব্যবস্থা করা হয়। । বাশার মোল্যার ছেলে স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসী নাগিব মোল্যা তার সহযোগি জুয়েল ও পান্নু খানকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী গাজীপুর গ্রামের কয়েকজন সন্ত্রাসীকে ভাড়া করে এনে তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের মজুদ করে । ওই আগ্নেয়াস্ত্র দিয়েই নাগিব নিজের হাতে সোনা মিয়াকে খুন করে।

খোকন মোল্যা বলেন, আমি রবিবার ফজরের নামাজ শেষ করে মুনাজাত করছিলাম। এসময় শুনি উপুর্যপুরি ককটেল ও গুলির শব্দ। আমি তারাতারি মসজিদ থেকে বেড়িয়ে হামলাকারিদের শান্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ করি। মাত্র কিছুক্ষণ আগে ঢাকা থেকে আসা সোনা মিয়া আমার পাশেই দাড়ানো ছিল। কোন বুঝে উঠার আগেই নাগিব মোল্যা তার হাতে থাা শর্ট গান দিয়ে সোনা মিয়ার মাথা লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকলে মুহুর্তেই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর ওর লাশটিও তারা নিয়ে যেতে চাইলে আমি সোনা মিয়ার লাশ ছিনিয়ে রাখি।

নিহত সোনা মিয়ার ভাই দাদন হাওলাদার বলেন, আমার সাথে কালাম হাওলাদারের জমি জমা নিয়ে দ্বন্দ চলে আসছিলো। বাশার মোল্যা ও তার ছেলে নাগিব মোল্যা, মানকি হাওলাদার ও শিতল হাওলাদার এই দ্বন্দ জিইয়ে রেখে ফয়দা লুটছিল। তারা আমার থেকে জমি জোর করে নিতে চাইলে আমি কয়েকবার শালিস বৈঠকের ব্যবস্থা করি। জাজিরা থানায় বসেও একবার শালিস হয়। কিন্তু কোন ফয়সালা হয়নি। রবিবার ভোরে ওরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমাদের উপর হামলা করে। আমরা বাড়িতে থাকতে না পেরে জীবন বাাঁচানোর তাগিদে পাশের মরন খানের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেই্ সেখানে ওরা আমার ভাইকে হত্যা করে। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।

জাজিরা থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। নিহতের স্বজনেরা থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জেনেছি। ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে একটি বন্দুকের ব্যবহৃত কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আসামীদের আটকের সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে।


(কেএনআই/এস/ফেব্রুয়ারি০৬,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test