E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাত পোহালেই দিনাজপুরে ২১  ইউনিয়নের ভোটগ্রহন

২০১৬ মে ২৭ ১৪:১১:৩০
রাত পোহালেই দিনাজপুরে ২১  ইউনিয়নের ভোটগ্রহন

একরাম তালুকদার, দিনাজপুর থেকে : রাত পোহালেই পঞ্চম দফার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। পঞ্চম দফার এই নির্বাচনে আগামীকাল শনিবার দিনাজপুরের সদর ও বীরগঞ্জ উপজেলার মোট ২১টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা। আর শান্তিপুর্ণভাবে ভোটগ্রহন অনুষ্ঠানে সবরকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রশাসন।

দিনাজপুর জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার জানান, শনিবার দিনাজপুর সদর ও বীরগঞ্জ উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে মোট ৪ লাখ ২৩ হাজার ৩৬৬ জন ভোটারের ভোটগ্রহনের জন্য ২০৯টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে মোট ২ লাখ ১৬ হাজার ৩০ জন ভোটারের জন্য ৯৪টি কেন্দ্র এবং বীরগঞ্জ উপজেলার ২ লাখ ৭ হাজার ৩৩৬ জন ভোটারের জন্য ১১৫টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

দুটি উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ১০৪ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ২৩৮ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৮২২ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এর মধ্যে দিনাজপুর সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪১ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১০৩ জন এবং সাধারন সদস্য পদে রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ৩৪৯ জন। বীরগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৬৩ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৩৫ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৪৭৩ জন প্রার্থী রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আরও জানান, এই দুটি উপজেলায় ভোটগ্রহনের জন্য ইতোমধ্যেই সবরকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও ভোটগ্রহনের দায়িত্বরতরা ব্যালট পেপার, ব্যালটবাক্সসহ অন্যান্য নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিয়ে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রতিটি কেন্দ্রে পৌছে যাবে বলে জানান তিনি।

এদিকে ইতিমধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারনা শেষ হলেও এখন প্রার্থী ও সমর্থকরা পাড়ায় পাড়ায় ও বাড়ী বাড়ী গিয়ে চালাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারনা। ভোটের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত প্রার্থী ও সমর্থকরা যে কোন উপায়ে সমর্থন আদায়ের চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন।

প্রথমবারের মতো স্থানীয় পর্যায়ের এই নির্বাচন দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ায় দিনাজপুর সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এবং ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি’র মধ্যে চলছে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতা। গত ইউনিয়ন পরিষদ দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত না হলেও ১০টি ইউনিয়নেই চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীরা। মুলতঃ বিএনপি’র দখলেই ছিলো ১০টি ইউনিয়ন। দলীয়ভাবে সুসংগঠিত না থাকলেও এবারও তারা চেষ্টা চালাচ্ছেন ১০টি ইউনিয়নই তাদের দখল ধরে রাখতে। আর আওয়ামীলীগ চেষ্ঠা চালাচ্ছেন এবার ১০টি ইউনিয়নেই নৌকা মার্কার প্রার্থীদের বিজয়ী করতে। আর এক্ষেত্রে বিগত ৮ বছরে সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে এলাকার নির্বাচিত সাংসদ জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম যে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ চালিয়েছে-এই ইমেজকে কাজে লাগিয়েই এবার আওয়ামীলীগ ১০টি ইউনিয়নেই তাদের প্রার্থীদের জয়ী করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। অপরদিকে বিএনপি আমলে মন্ত্রী খুরশীদ জাহান হকের নেতৃত্বে উন্নয়ন কাজের বর্ণনা দিয়েই বিএনপি তাদের প্রার্থীদের আবারও বিজয়ী করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

আওয়ামলীগ নেতারা মনে করছেন, সদরের ১০টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বিএনপি থাকলেও মুলতঃ হুইপ ইকবালুর রহিমের নেতুত্বে উন্নয়ন কাজগুলো পরিচালনা করছেন আওয়ামীলীগ নেতারাই। তাই এই ১০টি ইউনিয়নে এবার চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা জয়ী হলে আগামীতে তারা সহজভাবে উন্নয়ন কাজগুলো চালিয়ে যেতে পারবেন। আর এই প্রচারনাই চালাচ্ছেন আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা। সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক বিশ্বজিৎ ঘোষ কাঞ্চন আশা প্রকাশ করে জানান, গত ৮ বছরে এলাকার নির্বাচিত সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দিরসহ সব প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক উন্নয়নকাজ করেছেন এবং চালিয়ে যাচ্ছেন। এই উন্নয়নের ধারাকে আরও তরান্বিত করতে ভোটাররা আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থীদেরকেই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।

এদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, যে যা-ই বলুক ভোটাররা আবারও বিএনপি’র প্রার্থীদেরকেই চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করবেন। এ ক্ষেত্রে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহনের দাবী জানান তারা।

অপরদিকে বীরগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের আশা সরকারের উন্নয়নের কারণে নির্বাচনে ভোট পেয়ে জয়ী হবেন তারা। এলাকায় শক্ত সাংগঠনিক অবস্থান থাকলেও তাদের বিজয়ের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থী। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়নের ১১জন বিদ্রোহী প্রার্থী এখন পর্যন্ত মাঠে রয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপজেলার আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি রবিন্দ্রনাথ গোবিন বর্মন, সাধারণ সম্পাদক দেবেশ চন্দ্র রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক গোপাল দেব শর্মা।

আওয়ামীলীগের পক্ষে কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবু হোসাইন বিপুসহ জেলা-উপজেলার শতাধিক নেতাকর্মী নৌকার মার্কার পক্ষে মাঠে নেমেছেন। তবে একটি অংশ বিদ্রোহীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন ভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে দলীয় প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন।

আর দলের একটি অংশ বিদ্রোহীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণে অনেক বিদ্রোহী প্রার্থীর জয়ের সম্ভবনা দেখা দিয়েছে বলে সাধারণ ভোটাররা জানিয়েছেন। তবে কোন্দল মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে মাঠে নামলে ১১টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের দলীয় চেয়ারম্যান বিজয়ী হওয়ার সম্ভবনা ছিল বলে তার জানান।

অপরদিকে বিএনপির ১১টি ইউনিয়নে প্রার্থী রয়েছে। এরমধ্যে মরিচা ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল কাদের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। নিজপাড়া, মোহনপুর এবং পাল্টাপুর ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীদের অবস্থা অনেকটা ভালো এবং জয়ের সম্ভবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। তবে দলের প্রার্থীরা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে রয়েছেন শঙ্কায়।

নির্বাচনে ৫টি ইউনিয়নের জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রচারণার ক্ষেত্রে অনেকটা কৌশলী অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তাদের প্রচারের ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রণী ভুমিকা পালন করতে দেখা গেছে। শতগ্রাম ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ডা. কেএম কুতুব উদ্দিন, ভোগনগর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান পান্না এবং সাতোর ইউনিয়নে খোদা বখ্স শক্ত অবস্থানে রয়েছে বলে দলীয় সুত্রে জানান গেছে।

নির্বাচনে জাতীয় পার্টির পক্ষে শতগ্রাম এবং মরিচা ইউনিয়নে এবং ইসলামী শাসনতন্ত্রের পক্ষে সুজালপুর, ভোগনগর, শিবরামপুর, ওয়র্কার্স পার্টির মোহনপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রয়েছে।

বীরগঞ্জ থানার ওসি মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ১১৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ২৪টি অধিক ঝুকিপূর্ণ, ৩০টি কম ঝুকিপূর্ণ ও ৬১টি সাধারন কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে একজন প্রিজাইটিং অফিসারের অধিনে পুলিশ অফিসার সঙ্গীয় ফোর্স ও ১৩জন আনসার সহ ৫০জন কর্মকর্তা সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টায় পর্যন্ত বিরতীহীন ভাবে ভোট গ্রহন করবেন। একই সাথে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে পুলিশ ও বিজিবি টহল বাহিনী মোতায়েন রাখা হয়েছে। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১৬টি পুলিশের টহল বাহিনী ও ১১টি বিজিবি’র টহল বাহিনী সহ মোট ২৭টি টহল বাহিনী সাথে ১১জন করে ম্যাজিষ্ট্রেট সার্বক্ষনিক ভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তদুপরি দুরবতী ইউনিয়ন সমুহের ভোট কেন্দ্র গুলোতে ২টি করে টহল বাহিনী সার্বক্ষনিক টহল দিবেন। আইন-শৃংঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত তাৎক্ষনিক ভাবে জেল ও জরিমানা আদায় করবেন।





(এটি/এস/মে২৭,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test