E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরীয়তপুরে সড়ক উন্নয়নের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

২০১৬ জুন ১৫ ১৫:৩৭:২৯
শরীয়তপুরে সড়ক উন্নয়নের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে শরীয়তপুর-ঢাকা মহা সড়কে শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উন্নয়ন কাজে ব্যপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ২ কিমি সড়ক উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, নয়-ছয় করে ব্যবহার অনুপযোগী ইট-বালু দিয়ে কাজ করায় কোন উপকারেই আসবে না সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর-ঢাকা মহা সড়কের জেলার জাজিরা উপজেলার কাজীর হাট থেকে মঙ্গল মাঝির ঘাট সড়কে ২ কিলো মিটার জায়গায় রাস্তার দুই পাশে ইটের সোলিং করার জন্য ৪৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে দরপত্র আহবান করা হয় চলতি বছরের ১৬ মার্চ । ৮ মে ২০১৬ তারিখে ঠিকাদারকে ৩০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার শর্তে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। কিন্তু ঠিকাদার মেসার্স তানিমা এন্টারপ্রাইজের সত্বাধাধিকারি সেলিম মিয়া সড়ক বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারিদের হাত করে কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৬ দিন পর গত ১১ জুন কাজ শুরু করে।

এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, ইট ভাটা থেকে অত্যন্ত নিম্নমানের (৪ নম্বর কোয়ালিটির) ইট ক্রয় করে তা ব্যবহার করা হচ্ছে রাস্তা উন্নয়নের কাজে। পাকা সড়কের দুই পাশে ৩ ফিট করে ইট বিছানোর কথা থাকলেও মাত্র ১ থেকে দেড় ফিট করে ইট বসানো হচ্ছে। দুই স্তরের ইট বসানোর পরে সেখানে খাটি বালু দেয়ার নিয়ম থাকলেও ব্যবহার করা হচ্ছে ধুলা মিশ্রিত ভীট বালু। চতুর ঠিকাদার প্রতিটি ইটের মাঝে অন্তত ২ ইঞ্চি ফাঁকা রেখে তা সাথে সাথে মাটি দিয়ে ঢেকে ফেলছে। এমনিভাবে নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে দ্রুত শেষ করা হচ্ছে এই সড়ক উন্নয়নের কাজ।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের সার্বক্ষনিক তদারকির কথা থাকলেও গত ১৩ ও ১৪ জুন সরেজমিন ঘুরে এলাকাবসীদের কাছ থেকে জানা গেছে, কাজ শুরুর ৫ দিন পার হলেও কাজের সাইটে সড়ক বিভাগের কোন প্রকৌশলী বা কার্যসহকারি এক মুহুর্তের জন্যও সেখানে অবস্থান করেননি। ফলে ঠিকাদার তার ইচ্ছে মত যা খুশি তা করে কাজ শেষ করছেন।

সড়কের পাশের বাসিন্দা চুন্নু চৌকিদার জানান, এই সড়কটি জেলার সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়ক। শরীয়তপুর জেলার ৬টি উপজেলা থেকে সড়ক পথে ঢাকা যাওয়ার একমাত্র রাস্তা এইটি। এই রাস্তা দিয়েই মঙ্গলমাঝির ঘাট হয়ে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে মানুষ মাওয়া হয়ে ঢাকায় গমনাগমন করেন। রাস্তাটি সরু হওয়ায় আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার সড়ক বর্ধিত করনের কাজ শুরু করেছে। সামান্য ইটের সোলিং এর জন্য প্রায় অর্ধ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। কিন্তু ঠিকাদার যেভাবে এবং যে মানের নির্মান সামগ্রী দিয়ে কাজ করছে, তাতে ৫ লাখ টাকাও খরচ হবে বলে আমাদের মনে হয়না। কাজের মান খুব খারাপ হচ্ছে। ২ দিনের বৃষ্টি হলেই সোলিং ভেঙ্গে গেছে।

জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. ফারুখ আকন বলেন, সরকারি নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে ঠিকাদার নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করছে। কারো কোন তোয়াক্কা করছেনা। এমনি ভাবে কাজ করলে অল্প দিনের মধ্যেই রাস্তা নষ্ট হয়ে যাবে। এতে করে সরকারের লাখ লাখ টাকা গচ্চা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ঠিকাদার সেলিম মিয়া বলেন, আমি দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী, অফিসের লোকদের পরামর্শ মতে কাজ করছি। আমার কাজে কোন অনিয়ম নেই। আমি খারাপ কোন উপকরণ ব্যবহার করছিনা।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মিন্টু চন্দ্র দেবনাথ বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর সরেজমিন পরিদর্শন করে কিছু অনিয়ম লক্ষ্য করা গেছে। নিম্নমানের যে সকল উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে জরুরী ভিত্তিতে তা সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছি। উপ সহকারী প্রকৌশলী ও কার্যসহকারীকে কাজের প্রতি সার্বক্ষনিক নজর রাখার জন্য বলা হয়েছে।

(কেএনআই/এএস/জুন ১৫, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test