E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হুমায়ূনতীর্থ ভক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত

২০১৬ জুলাই ১৯ ১৬:১৬:৪০
হুমায়ূনতীর্থ ভক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত

রাজীবুল হাসান, নুহাশপল্লী (গাজীপুর) থেকে প্রকৃতিকান্না বৃষ্টি। আজও আকাশ কেঁদে ওঠছে হুমায়ূন আহমেদের ভালোবাসায় । সেইদিনের মতো, যেদিন স্যার চিরবিদায় নিয়েছিল পৃথিবী থেকে। চার বছর পর আবার আজও প্রকৃতি অঝোরে কেঁদে স্মরণ করল প্রিয় লেখককে। সবুজে সবুজময় শালবনের ভেতর বাংলা সাহ্যিতের কিংবদন্তি হুমায়ূন আহমেদের প্রিয় নুহাশপল্লী।

চারদিক হিমু, মিসির আলী, শুভ্র আর রূপাদের ভীড়। প্রিয় লীলাবতী দিঘির স্বচ্ছ জল, ভূতবিলাস, বৃষ্টিবিলাস, ওষুধি বাগান, লিচুতলা সবকিছু সেই আগের মতোই আছে। শুধু নেই বাংলা সাহিত্যের ভিন্ন ভুবনের কারিগর হুমায়ূন আহমেদ।

বৃষ্টিমুখর মঙ্গলবার নন্দিত এই কথাসাহিত্যিকের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছে তার পরিবার,প্রকাশক,অভিনেতা ও ভক্তগণ। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সংগঠন প্রয়াত এ লেখকের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছে। প্রিয় লেখকের ৪র্থ প্রয়াণ দিবসে নুহাশপল্লীর সমাধিস্থল ফুলে ফুলে ভরে ওঠে হিমু, মিসির আলী, শুভ্র ও রূপাদের শ্রদ্ধায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাজীপুরের পিরুজালী গ্রামের নুহাশপল্লীতে বাড়তে থাকে ভক্তদের ভীড়। সকাল থেকেই তার সমাধিস্থল ঘিরে চলতে থাকে বিশেষ দোয়া প্রার্থনা, কোরআন পাঠ।

প্রথমে হুমায়ূন আহমেদের ভাই জনপ্রিয় লেখক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, লেখক ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব, বোন সুফিয়া হায়দার, মমতাজ শহীদ ও রোখসানা আহমেদ তাদের সন্তানদের নিয়ে কবর জিয়ারত করেন। বলেন,সকাল থেকে টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে,আমি খুব খুশি হয়েছি কারণ হুমায়ূন ছিলেন বৃষ্টি প্রিয় মানুষ। পরে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী অভিনেত্রী ও গায়িকা মেহের আফরোজ শাওন তাদের দুই পুত্র নিষাদ ও নিনিতকে সঙ্গে নিয়ে সমাধিস্থলে গিয়ে দোয়া করেন । সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান নুহাশপল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। সবার সাথে নিষাদ ও নিনিত এ সময় বাবার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। শাওন এ সময় সাংবাদিকদের বলেন, হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নের মধ্যে ছিল সামগ্রিক বাংলাদেশ,তার পর ছিল নিজস্ব স্বপ্ন। সবচেয়ে বেশি মিস করি সেই বলিষ্ঠ কন্ঠ।

হুমায়ূন স্মৃতি যাদুঘর সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন,প্রাথমিকভাবে হুমায়ূন স্মৃতি যাদুঘরটি স্থান ঠিক করা হয়েছে ওনার প্রিয় নুহাশপল্লীতে। যাতে হুমায়ূন বক্তরা নুহাশে এসেই ওনার প্রিয় ব্যবহৃত জিনিসগুলো দেখতে পারেন,খুব সহজে জানতে পারেন হুমায়ূন সম্পর্কে । আবেগি কন্ঠে বলে ওঠেন,সবখানেই হুমায়ূন আহমেদের উপস্থিতি টের পাই। সবখানেই হুমায়ূন আছেন, থাকবেন। বাবার কবরে ফুলেল শুভেচ্ছার পর নিষাত ও নিনিত দুটি খেজুর গাছ রোপন করে। এ সময় শাওনের পাশে ছিলেন তার বাবা মোহাম্মদ আলী,মা জুহুরা আলীসহ আরো অনেকে।

হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার ভক্তদের সংগঠন ‘হিমু পরিবার’ দেশের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। তাদের কর্মসূচির মধ্যে ছিল- সকালে হুমায়ূন আহমেদের সমাধিতে হলুদ পাঞ্জাবি ও নীল শাড়ি পরে শ্রদ্ধা নিবেদন, ক্যান্সার সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, সেমিনার, রক্তদান কর্মসূচি, হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা। এ ছাড়াও নূহাশপল্লী ও আশপাশের এলাকায় বিনামূল্যে রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করেছে হিমু পরিবার। এর পরে হুমায়ূন আহমেদ সৃষ্ট চরিত্র হিমুর মতো হলুদ পাঞ্জাবি এবং রূপার মতো নীল শাড়ি পরা তরুণ-তরুণীকে দেখা গেল সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাতে। এ সময় তারা ক্যান্সার সচেতনতামূলক প্রচারপত্র বিলি করেন।

নুহাশপল্লীর ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এলাকার প্রায় ৫শ এতিমদের স্যারের প্রিয় খাবার ভাত, গরুর মাংস এবং খেসারির ডাল দিয়ে দুপুরে খাওয়ানো হয়েছে। এতে আশপাশের এতিমখানা ও মাদ্রাসার প্রায় ৫০০ এতিম ও স্থানীয় শতাধিক মুসল্লি অংশ নেন।




(আরএইচ/এস/জুলাই ১৯,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test