E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গলাচিপায় ঐতিহ্যবাহী দয়াময়ী মাঘে সপ্তমী মেলা উৎসব

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ০৩ ১৬:২৭:৫৭
গলাচিপায় ঐতিহ্যবাহী দয়াময়ী মাঘে সপ্তমী মেলা উৎসব

গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চিকনিকান্দী ইউনিয়নের সুতাবাড়িয়া গ্রামে  বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর পাড়ে দুইশত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী দয়াময়ী মাঘে সপ্তমী মেলা হাজার হাজার দর্শনার্থীদের কোলাহলপূর্ণ উৎসব মুখর ও মনোরম পরিবেশের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার ভোর ৬ টা থেকে কালী পুজা ও শিব পুজা পালনের মধ্য দিয়ে এ মেলার কার্যক্রম শুরু হয়। ভোর থেকে সন্ধা পর্যন্ত ঢাক-ঢোল, শঙ্খ সহ বিভিন্ন বাদ্য-বাজনা ও দর্শনার্থীদের মুহুর্মুহ কলরবে মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গন। মেলায় অনেক শিশুর বাৎসরিক মাথা মুন্ডু করা হয়। এছাড়া মেলার কালী মন্দিরে পাঠা বলিদান ও শিব মন্দিরে ধুপ, চিনি ও মিষ্টি সামগ্রী দেয়া হয়। মেলায় রঙ বেরঙের আকর্ষণীয় বিভিন্ন খেলনার দোকান, পল্লীবাসীদের স্বহস্তে তৈরিকৃত বুনন শিল্পের সামগ্রী, গৃহস্থলীর ব্যবহার্য তৈজস পত্রের পণ্য সামগ্রী, মাটির তৈরি বাসন-কোসনের হরেক রকম দোকান, মিষ্টির দোকান, ফল-ফলাদির দোকান ও বিভিন্ন আইটেমের খাবারের দোকান দেখা যায়। মেলায় হাজার হাজার দর্শনার্থীদের আগমনের মধ্য দিয়ে মেলাটি তার বিচিত্র রূপ বৈশিষ্ট্য ধারণ করে শত বছরের ঐতিহ্যের দৃষ্টান্ত হিসেবে আজও স্বগৌরবে প্রাণবন্ত উৎসব মুখর পরিবেশে ঠাঁয় দাড়িয়ে আছে।

দেশ-বিদেশ থেকে অনেক দর্শনার্থীরা এখানে এসে তাদের নয়ন জুড়ায় ও আত্মার তুষ্টি লাভ করেন। গভীর রাত পর্যন্ত মেলায় বিভিন্ন দোকানে ক্রেতাদের কেনাকাটা চলবে বলে মেলা কমিটির সভাপতি জানান। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, অর্থের অভাবে মেলার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। মেলাটির বৃহত্তম আঙ্গিনার অনেক জায়গা আজ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জায়গার অভাবে দুইশত বছরের ঐতিহ্যবাহী এ মেলা এক সময়ে কালের বিবর্তনে বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। এমতাবস্থায় সরকারি প্রশাসনিক ও আর্থিক সাহায্যের একান্ত প্রয়োজন। এককালীন ও বাৎসরিক সরকারি অনুদান পেলে মেলার আঙ্গিনার বিস্তৃতি ও মন্দির পুনঃসংস্কারের মধ্য দিয়ে মেলাটি আবার ফিরে পাবে তার পূর্ণ উদ্যম, উৎসাহ-উদ্দীপনা, দুইশত বছরের পুরনো লৌকিক ও ধর্মীয় কৃষ্টি সংস্কৃতির ঐতিহ্য যা মেলাটিকে নব যৌবনে সিক্ত করে প্রাণোচ্ছল ও প্রাণস্পন্দনের সম্মিলনে সঞ্জিবনী শক্তির সঞ্চার সাধন করবে বলে এলাকাবাসীর ঐকান্তিক বিশ্বাস।

এ ব্যাপারে মেলার পুরোহিত নিখিল গাঙ্গুলী (৬০) এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতি বছরের মত এবারও মেলা শুরু হয়েছে, তবে নদী ভাঙ্গনের ফলে স্থান সংকুলন না হওয়ায় মেলায় আগত মানুষদের দাঁড়িয়ে থেকে বেশ দুর্ভোগ সহ্য করে মেলার আনন্দ উপভোগ করতে হচ্ছে। মেলা কমিটির সভাপতি বিমল সমদ্দার বলেন, অনেক বছরের পুরনো মেলা নদী ভাঙ্গনের কারণে মেলার আঙ্গিনা দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। এলাকার বর্তমান ইউপি সদস্য দেবাল দাস বলেন, দয়াময়ী মেলার আঙ্গিনা ভাঙ্গনের কবলে পড়ে এর আসল চেহারা হারিয়ে গেছে। সাবেক ইউপি সদস্য বাবু নিতাই কুমার দাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নদী ভাঙ্গনে ছোট হয়ে যাওয়া মেলাটি আবার তার আসল স্বরূপ ফিরে পাবে, যদি সরকার বিশেষ আর্থিক অনুদান ও সাহায্য সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান এরশাদ হোসেন বাদল বলেন, দয়াময়ী কালী মন্দিরের সংস্কার কাজ অতীব জরুরী বিধায় আমি সাধারণ মানুষদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সামান্য কিছু অর্থ যোগাড় করে মন্দিরের সংস্কার ও এ বছরের মেলা উদযাপনের কোন রকম ব্যবস্থা করতে পেরেছি মাত্র। কিন্তু মেলাটি তার পুরনো ঐতিহ্য ধারণ করে স্বমহিমায় পুনর্জাগরণ লাভ করে চিরদিন টিকে থাকতে পারে সেজন্য সরকারের সার্বিক সহযোগিতা ও সদয় বিবেচনা প্রার্থনা করছি। তিনি আরও বলেন, মেলাটি যাতে সুন্দর সাবলীল, অবাধ, শান্তিপূর্ণ, ভাব গাম্ভীর্য, সুশৃঙ্খল, অনাবিল আনন্দ ও উৎসব মুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় সেজন্য আমাদের এমপি জননেতা আলহাজ্ব আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনের নির্দেশে সব ধরণের প্রশাসনিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে করে সর্ব সাধারণ জাতি, ধর্ম, বর্ণ ভুলে গিয়ে নিরাপদে মেলায় যোগদান করে মেলার আনন্দ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতে পারবে বলে আশা রাখি। মেলাটি এ অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি তথা বিশেষ ভাবে শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীদের কাছে বিপুল আনন্দের খোরাক।

ইহলৌকিক ও পরলৌকিক ভাবদর্শন, দেব-দেবীর গুণ কীর্তণের সমন্বয়ে এ যেন এক মিলন মেলা। মানুষের জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভাল- যথা ধর্ম তথা জয়- মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে বয়সের মধ্যে নয়- এ হচ্ছে এ মেলার শ্বাশত মর্মবাণী- ঐতিহ্যময় ধর্ম ও লৌকিক সাংস্কৃতিক উৎসবের অফুরন্ত উৎস। এসময়ে মেলায় উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা কলেজের সাবেক ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ সদস্য মু. মামুন আজাদ, মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক যুগল দেবনাথ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক অবনী শীল, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য বিবেক দেবনাথ, সমাজ সেবক বাবু আইচ প্রমুখ।

(এসডি/এএস/ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test