E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দেশের প্রথম নারী নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের জেলায় আনন্দের জোয়ার

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ০৯ ১৭:০৭:২২
দেশের প্রথম নারী নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের জেলায় আনন্দের জোয়ার

নওগাঁ প্রতিনিধি : দেশের প্রথম নারী নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম উত্তরের শষ্যভান্ডার খ্যাত নওগাঁ জেলার কৃতি সন্তান। আদিকাল থেকেই এ জেলার মানুষ অনেক বড় বড় পদে আসীন হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন দেশ-বিদেশের মাটিতে। কেউ প্রকাশ্যে আবার কেউবা অপ্রকাশ্যে।

রাজনীতিবিদ, সরকারের মন্ত্রী পরিষদ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রদূত, সচিব, সংসদের ডেপুটি স্পীকার, নির্বাচন কমিশনার, পুলিশের মহাপরিদর্শক, জজ-ব্যারিষ্টার ছিলেন এবং এখনও রয়েছেন এ জেলারই অনেক কৃতি সন্তান। এমন কি সদ্য বিদায়ী নির্বাচন কমিশনের কমিশনারও নওগাঁরই মানুষ ব্রিগেডিয়ার মোঃ জাবেদ আলী। তাঁর আসা-যাওয়ায় নওগাঁর মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলতে না পারলেও নব নিযুক্ত নির্বাচন কমিশনার নওগাঁর আরেক কৃতি সন্তান কবিতা খানমের ক্ষেত্রে ঘটে গেল ব্যতিক্রমী ঘটনা। নির্বাচন কমিশনার পদে তাঁর নাম ঘোষণা হবার পর থেকেই মানুষ খুঁজতে থাকে কে এই কবিতা? কোথায় তাঁর জন্মস্থান? কিন্তু পরিচয় যখন মিলল, দেখা গেল তিনি আর কেউ নন। তিনি নওগাঁ শহরের উকিলপাড়ার বাসিন্দা নওগাঁ বিএমসি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সকলেরই শ্রদ্ধেয় স্যার প্রয়াত বি, হক (বজলুল হক) স্যারের কন্যা। বজলুল হক ধামইরহাট উপজেলার খড়মপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কবিতা খানমের নানা মরহুম গিয়াস উদ্দিনের বাড়ি ধামইরহাট উপজেলার চককালু গ্রামে। এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই জেলা জুড়ে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করেছে। এই আনন্দের মূল কারণ হলো, কবিতা খানম একজন স্বনামধন্য শিক্ষাবিদের কন্যা এবং দেশের সর্বপ্রথম নারী নির্বাচন কমিশনার। আর তাঁর জন্ম এই নওগাঁতেই। ফলে বিষয়টি এখন টক অব দ্য ডিষ্ট্রিক্ট-এ পরিণত হয়েছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫৭ সালের ৩০ জুন নওগাঁর উকিলপাড়া মহল্লার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন কবিতা খানম। হাতে খড়ি থেকে শুরু করে জীবনের প্রথম সার্টিফিকেট পরীক্ষা এসএসসি এই নওগাঁ থেকেই পাশ করেন তিনি। এরপরই উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের প্রয়োজনে ছাড়েন নিজ জন্মস্থান। তার পিতা মরহুম বজলুল হক ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ। মা গোলে রানী ছিলেন একজন আদর্শ গৃহিনী। বজলুল হক ছিলেন, প্রায় ২৫ বছর পর্যন্ত নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী বিএমসি কলেজের অধ্যক্ষ। ১৯৯৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ৪ ভাই, ৪ বোনের মধ্যে কবিতা পিতা-মাতার তৃতীয় সন্তান। বড় ভাই বখতিয়ার মোসতাহিদ সোবহানি প্রকৌশলী হিসেবে আমেরিকা প্রবাশী। দ্বিতীয় ফরিদা বেগম যিনি নওগাঁ সরকারী ডিগ্রী কলেজ থেকে অধ্যক্ষ হিসেবে অবসর নিয়েছেন। তৃতীয় ভাই হেলাল মোস্তাহিদ সোবহানি বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে ব্যবসায়ী কাজে স্বপরিবারে বসবাস করছেন। চতুর্থ কুরাতুল আইন সম্প্রতি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে অবসর নিয়েছেন। পঞ্চম সিহাব মোতাব্বির সুবহানি আরব আমিরাতে কর্মরত। ফৌজিয়া খানম গাইনি চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছেন। কবিতা খানম যিনি ২০১৫ সালের জুনে রাজশাহীর জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর গ্রহন করেন। অষ্টম তারিক মোস্তাহিদ সোবহানি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মেজর হিসেবে কর্মরত আছেন। ১৯৭২ সালে নওগাঁ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং একই শহরের তার পিতার কলেজ বিএমসি থেকে ১৯৭৪ সালে এইচএসসি পাশ করেন কবিতা। এরপর ১৯৮১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণীবিদ্যা বিষয়ে অনার্স ও মাষ্টার ডিগ্রী অর্জন করেন এবং ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৮৩ সালে এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেন।

১৯৮৪ সালে বিসিএস’র বিশেষ ব্যাচে উত্তীর্ণ হয়ে রাজশাহীর জেলা জজ আদালতে মুনসেফ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এ অবস্থায় দেশের বগুড়া, টাঙ্গাইল ও কুষ্টিয়ার বিভিন্ন আদালতে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ সালে যুগ্ম জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ঝিনাইদহ ও পাবনাতে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সালে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান। তিনি এ সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা ও খুলনাতে দায়িত্ব পালন করেন। খুলনাতে দায়িত্ব পালনের সময় ২০০৬ সালে তিনি জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান এবং খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তাকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর ২০০৯ সাল পর্যন্ত রাজশাহী লেবার কোর্টের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তিতে ওই সালেই তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলা দায়রা জজ হিসেবে বদলি করা হয়। তিনি সেখানে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে আবারও তাঁকে রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে বদলি করা হয়। সেখানে দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৫ সালের ৩০ জুন তিনি অবসর গ্রহন করেন। তাঁর স্বামী মশিউর রহমান চৌধুরীও জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় বিগত ২০১১ সালে মৃত্যু বরণ করেন। কবিতা খানম ১ ছেলে ও ১ মেয়ে সন্তানের জননী। ছেলে চৌধুরী আবিদ রহমান রুয়েট থেকে লেখাপড়া শেষে বর্তমানে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন হিসেবে কর্মরত আছেন। মেয়ে ডা. মুমতাহিনাহ্ ঢাকার একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে লেকচারার হিসেবে কর্মরত আছেন।

(বিএম/এএস/ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test