E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কে হচ্ছেন ফিফার কর্ণধার?

২০১৫ জুন ০৩ ২০:২৭:৫৫
কে হচ্ছেন ফিফার কর্ণধার?

স্পোর্টস ডেস্ক, ঢাকা : জাতিসংঘের চেয়েও বড় প্রতিষ্ঠান মনে করা হয় ফুটবলের আন্তর্জাতিক সংস্থা ফিফাকে। কারণ জাতিসংঘের সদস্য দেশ হলো ১৯৩টি আর ফিফার সদস্য দেশ ২০৯টি। এমন একটি সংস্থার প্রেসিডেন্ট কতবড় ক্ষমতাধর হতে পারেন, একবার ভেবে দেখুন! সেপ ব্লাটারের পদত্যাগের পর এই হট সিটে কে বসতে যাচ্ছেন, এটাই হলো এখনকার কোটি টাকার প্রশ্ন।

নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও কেলেংকারি দায়ে ফিফা সভাপতির পদ থেকে মঙ্গলবার আকস্মিক পদত্যাগের ঘোষণা দেন ব্ল্যাটার। একই সঙ্গে জানিয়ে দেন ফিফা কংগ্রেসের জরুরি অধিবেশন ডেকে নতুন সভাপতি নির্বাচিত করার কথা। আগামী ডিসেম্বর থেকে পরের বছরের মার্চের মধ্যে এই জরুরি অধিবেশন বসার সম্ভাবনা রয়েছে। সে পর্যন্ত আপাতত প্রেসিডেন্ট থাকছেন ব্লাটার নিজেই। এই সময়ের মধ্যে ফিফার কিছু সংস্কার অভিযান চালাবেন বলেও ঘোষণা দেন তিনি।

১৯৯৮ সালে ফিফার ৮ম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন সেপ ব্লাটার। এরপর চারবার ফিফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি এবং টানা ১৭ বছর বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করার পর অবশেষে সরে দাঁড়ালেন ৭৯ বছর বয়সী এই সুইস ভদ্রলোক।

সেফ ব্ল্যাটারের উত্তরসূরি হিসেবে কে ফিফা প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসবেন, তা নিয়েই এখন ফুটবল বিশ্বে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। সভাপতি পদের জন্য বেশ কয়েকজনকেই ফেবারিট মনে করা হচ্ছে। তাদের নিয়েই এই প্রতিবেদন-

মিশেল প্লাতিনি: ফিফা সভাপতি পদে সেফ ব্লাটারের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার দৌড়ে উয়েফা প্রেসিডেন্ট মিশেল প্লাতিনি সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। ইউরোপিয়ান ফুটবলে প্লাতিনির আধিপত্যের কারণে তাকে এই পদের জন্য ফেভারিট মনে করা হচ্ছে। ফিফা সভাপতি নির্বাচনের আগ থেকেই দুর্নীতির দায় নিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য ব্লাটারকে আহ্বান জানান প্লাতিনি। এমনকি সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরও ফুটবলের স্বার্থে ব্ল্যাটারকে সড়ে দাঁড়ানোর প্রস্তাব দেন তিনি।

ফুটবলার হিসেবে যেমন গ্রেট, তেমনি সংগঠন হিসেবেও বেশ নাম কুড়িয়েছেন ফরাসি এই ভদ্রলোক। তার হাত ধরেই ১৯৮৪ সালে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ঘরে তোলে ফ্রান্স। দেশের হয়ে ৭২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেতিনি। খেলা ছাড়ার পরই ফুটবল প্রশাসকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হন। তার নেতৃত্বেই ইউরোপে আধুনিক ফুটবলের বিপ্লব সূচিত হয়েছে।

জিকো: প্লাতিনির পর সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসছে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কিংবদন্তী জিকোর নাম। ব্ল্যাটারের পদত্যাগের পরপরই ফিফার সভাপতি পদে লড়াই করার ইচ্ছাটা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। তিনিও প্লাতিনির মতোই বিখ্যাত। ব্রাজিলের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে জিকোর। খেলা ছাড়ার পর যেমন কোচ ছিলেন, তেমনি ছিলেন ক্রীড়া প্রশাসকও। ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন নিজ ব্রাজিলে। কোচ ছিলেন জাপান, তুরস্ক, রাশিয়া, গ্রিস আর ইরাকের। জিকো ফিফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ফুটবলেরই সবচেয়ে বেশি লাভ হবে বলে মনে করছেন বোদ্ধারা।

প্রিন্স আলি আল হুসেইন: সেপ ব্লাটারের সঙ্গে সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জর্দানের প্রিন্স আলি আল হুসেইন। কিন্তু নির্বাচনে ১৩৩-৭৩ ভোটে ব্ল্যাটারের কাছে হেরে যান তিনি। ৩৯ বছর বয়সী এই ফুটবলপ্রেমী ব্ল্যাটার সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়ার পর আবারও নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। তাকেও ফিফা সভাপতি পদের জন্য অন্যতম ফেভারিট মনে করা হচ্ছে।

লুইস ফিগো: রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার সাবেক তারকা ফিফা সভাপতি নির্বাচনে সেফ ব্ল্যাটারের বিপক্ষে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। যদিও নির্বাচনের অল্প কয়েকদি আগে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান। ব্ল্যাটার পুনঃনির্বাচিত হওয়ার পর তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘জিতেছেন ব্ল্যাটার, হেরেছে ফুটবল।’ তবে ব্ল্যাটার পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পর তার উত্তরসূরি হিসেবে এই সাবেক পর্তুগিজ তারকাকেও অন্যতম ফেবারিট ভাবা হচ্ছে।

জেরোমে শেম্প্যান: ফিফা সভাপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন জেরোমে শেম্প্যান। তবে নির্বাহী কমিটির ন্যুনতম পাঁচজনের সমর্থন পেতে ব্যর্থ হওয়ার সভাপতি নির্বাচনের লড়াই করার জন্য অযোগ্য বিবেচিত হন তিনি। ফরাসি ব্যক্তিত্ব শেম্প্যান এর আগে ফিফার ডেপুটি জেনারেল সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন। উয়েফার কঠোর সমালোচক শেম্প্যান সেফ ব্ল্যাটারের উত্তরসূরি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন।

ডেভিড জিল: সেপ ব্লাটার সভাপতি পদে পুনঃনির্বাচিত হওয়ার পর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক প্রধান নির্বাহী ফিফার নির্বাহী কমিটির পদে বসতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার কাছে পেশাদার জীবনের সম্মানটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মিস্টার ব্ল্যাটার সভাপতি পদে থাকলে ফুটবলের ভালো কোনো কিছুর সম্ভাবনাই দেখছি না। তাই আমি এই পদ গ্রহণ করতে পারছি না।’ তবে ব্ল্যাটার পদত্যাগের ঘোষনা দেওয়ার পর ফিফার প্রেসিডেন্ট পদে তিনিও একজন শক্তিমান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে থাকতে পারেন।

মাইকেল ফন প্রাগ: নেদারল্যান্ডে মাইকেল ফন প্রাগ দেশটির ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে রযেছেন। ফিফা সভাপতি নির্বাচনে দাঁড়ালেও ব্ল্যাটারের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রিন্স আলি আল হুসাইনকে সমর্থন জানাতে নির্বাচন থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন তিনি। এবার যখন আবার প্রেসিডেন্টের পদ উন্মুক্ত হয়ে গেলো, তখন তিনিও আবার প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে পারেন।

এছাড়া ফিফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আরও যে কজন প্রার্থী হতে পারেন, তারা হলেন ফিফার বর্তমান সেক্রেটারী জেরোমে ভালকে, জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট উলফগ্যাং নিয়েরশব্যাচ, ইতালির ডোমেনিকো স্কালা, উত্তর আয়ারল্যান্ডের ফুটবল প্রধান জিম বয়সে, কনকাকাফ প্রেসিডেন্ট আলফ্রেডো হাওয়াইত, এএফসি প্রেসিডেন্ট শেখ সালমান বিন ইব্রাহিম আল খলিফা, টটেনহ্যাম হটস্পারের সাবেক ফুটবলার ডেভিড জিনোলা এবং আর্জেন্টাইন কিংবদন্তী দিয়েগো ম্যারাডোনার নামও শোনা যাচ্ছে।

(ওএস/পি/জুন ০৩, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test