E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘স্বাধীনতা’-শিল্পীর হাতের রক্তলেখা

২০২২ মে ২১ ১৪:২০:০৪
‘স্বাধীনতা’-শিল্পীর হাতের রক্তলেখা

পীযূষ সিকদার


এই তো কিছুদিন আগে স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপিত হলো। অনেক সুন্দর সুন্দর শিল্প মান সম্মত ছবির মেলা মিলেছিলো। এতো সুন্দর ছবির হাট আমার ভাগ্যে কমই জুটেছে। ‘স্বাধীনতা’ নামটি শুনলে সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠে। আমি ছবির একজিবিশন দেখে-চিত্রশিল্পীরা রং তুলিতে বাহারী রকম বাংলাদেশ ও স্বাধীনতাকে তুলে ধরেছেন। মেলা দেখতে দেখতে রং-এর চমৎকার ঘ্রান নাকে আসে। নিজেকে ফিরে পাই ১৯৭১-এ। উৎসবের রঙ যখন গায়ে লাগে তখন ‘স্বাধীনতা’ চিত্রকর্মটি চোখ আটকে যায়। বাঃ অপূর্ব সুন্দর ছবিতো! স্বাধীনতা অর্জনে কতখানি আত্মত্যাগ করতে হয়েছে তা এই ছবির মাধ্যমে বাঙময় হয়ে উঠে। এ সারি সারি লাশের স্তুপের সরলীকরণ উপস্থাপনা।

বাঙালির হৃদয়ের সরল অনুভূতি এবং স্বাধীনতা অর্জনে বীর বাঙালির আত্মত্যাগকেই প্রকাশ করে ছবিটি। পশ্চাৎ ভূমির বিভিন্ন রং ও রেখা পাক-হানাদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচারে এক প্রতীকী প্রতিতী ব্যজ্ঞনা তৈরি করে। আর উপরে উড়ন্ত পতাকা আমাদের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করে।

সম্পূর্ণ নিজস্ব আঙ্গিকে এক সরল উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার ৫০ বছর ‘স্বাধীনতা’ ছবিটি অসাধারণভাবে ফুঁটে উঠেছে। ছবিটি উপস্থিত সকলকে টেনেছে। ‘স্বাধীনতা’-এই ছবিটিই হয়ে উঠে বাংলাদেশ। ছবিটি এঁকেছেন আট কলেজের প্রাক্তন ছাত্র সাজেদুল ইসলাম তাতা। আলো ও আঁধারির খেলা এই ছবিতে দারুনভাবে ফুঁটে উঠেছে।

আমার কাছে মনে হয়, এই চিত্রকর্মটি হোক দেশের প্রতিটি মানুষের রং তুলিতে আঁকা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষের শ্রেষ্ঠ উপহার।

স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষ্যে ফরিদপুর ফাইন আর্টস সোসাইটির উদ্যোগে চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সেখানেই সাজেদুল ইসলাম তাতার ‘‘স্বাধীনতা’’ নামক চিত্রকর্মটি স্থান পায়। সুধী দর্শকমন্ডলি একবার হলেও স্তম্ভিত হয়ে ‘স্বাধীনতা’ চিত্রটি নিমিষে দেখে নেয়।

সাজেদুল ইসলাম তাতার অনেক চিত্রকর্মের সাথে আমার পরিচয় ঘটেছে। তাঁর শিল্পকর্মে উঠে এসেছে সোনার বাংলাদেশের রুপ বৈচিত্র। ছবিই তাঁর প্যাশন অথবা ধ্যান। তাঁর ছবির মধ্যে বাংলাদেশ নামক ভূ-খন্ডটি পরম মমতায় উঠে এসেছে। তাতা ভালবাসেন মানুষ, গ্রাম, প্রকৃতি , মেঠোপথ, আলো-আন্ধার। তাতা ভাই কবেই তুলি হাতে নিয়েছিলেন। এখন তুলি তার দেশের কথা বলে। ‘‘স্বাধীনতা’’-চিত্রকর্মটি অসাধারণ ব্যজ্ঞনায় খই হয়ে ফোটে।

‘স্বাধীনতা’-ছবিটি এক বিশেষ প্রতীক হয়ে বাংলাদেশনামক ভূ-খন্ডটিকে ছোঁয়। ছবির উপরে উড়ন্ত পতাকা ( আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি ) আমাদের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করে। এই চিত্রকর্মটির মাপ-৩০.৩৬ ইঞ্চি। মাধ্যম-ক্যানভাসে এক্রেলিক কালার।

‘‘স্বাধীনতা’’-চিত্রকর্মটি অশেষ বিশেষ। ছবিটি দেখলে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়াতেই হয়। সাজেদুল ইসলাম তাতা। ছবিই তাঁর ধ্যান জ্ঞ্যান। দিন রাত ছবি আর ছবি। চিত্রকর্ম নিয়ে থাকতেই পছন্দ করেন। সেই কবে থেকেই তো দেখছি চেহারায় মলিনতার ছাপ পড়েনি!

শিল্পের মধ্যে যার বাস তাকে দারিদ্রতা তাকে স্পর্শ করতে পারে না। ছবি আঁকতে আঁকতে কবেই যে তুলি হাতে তুলে নিয়েছেন তা তাতা ভাইয়ের মনে নেই! ঢাকা আর্ট ইনস্টিটিউটের ছাত্র ছিলেন। গদ বাধা জীবন ভালো লাগে না। তাই পড়ালেখা বাদ দিয়ে অগাধ স্বাধীনতার জীবনে তুলি ও রং হাতে নেন। সেই থেকে চিত্রকর্ম তাঁর নেশা আর পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎসবে ‘স্বাধীনতা’ চিত্রকর্ম স্থান পায়। অন্যরকম করে ভাবনার জন্য জন্য শিল্পীকে সাধুবাদ জানাই। জয় হোক শিল্পের জয় হোক শিল্পীর। ‘‘স্বাধীনতা’’ চিত্রকর্মটি প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে স্থান পাক। নতুন করে ভাবুক মানুষ ভাবনার অতলে ডুব দিয়ে। জানুকÑস্বাধীনতা কাকে বলে।

লেখক : নাট্যকার ও শিক্ষক।

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test