E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘আদালতের আদেশ নিয়ে খেলছে বিজিএমইএ’

২০১৮ মার্চ ২৭ ১৪:৫৯:১৬
‘আদালতের আদেশ নিয়ে খেলছে বিজিএমইএ’

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএ আইনজীবীকে কঠোর ভাষায় তিরস্কার করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। বিজিএমইএ আর কতবার এমন আবেদন নিয়ে আসবে, তা জানতে চেয়ে তিনি বলেছেন, সংস্থাটি আদালতের আদেশ নিয়ে খেলছে।

উত্তরায় নতুন ভবন না হওয়া অবধি এক বছরের জন্য হাতিরঝিল ভবন ব্যবহারের আবেদন নিয়ে আপিল বিভাগে যাওয়া সংস্থাটির আইনজীবীকে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা ইউ আর প্লেয়িং উইথ কোর্ট অর্ডার (আপনারা আদালতের আদেশ নিয়ে খেলছেন)। এটা সো আনফরচ্যুনেট (এটা খুবই অপ্রত্যাশিত)।’

বিজিএমইএর সময় চেয়ে আবেদনের ওপর শুনানি হয় রবিবার। আজ মঙ্গলবার ছিল আদেশের দিন। এ সময় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বিজিএমইএর প্রতি এই ভাষায় বিরক্তি প্রকাশ করেন।

১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর ভবনটির উদ্বোধন করা হয়। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল ভবনটি ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এরপর এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে সংস্থাটির নানা আইনি চেষ্টা শেষে ২০১৭ সালের ৫ মার্চ ভবনটি ভেঙে ফেলার চূড়ান্ত আদেশ হয়। এরপর তিন বছর সময় চেয়ে বিজিএমইএর আবেদন খারিজ হয় ১২ মার্চ।

এই আদেশের পর রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএকে ভবন তৈরির জন্য জায়গা দেয় সরকার এবং সেখানে ভবন নির্মাণ শুরু হয়েছে। বিজিএমইএ চাইছে এই ভবনটি নির্মাণ হয়ে গেলে হাতিরঝিলের ভবন থেকে তারা সেখানে যাবে।

পোশাক শিল্প মালিকদের এই আবেদন নিয়ে আপিল বিভাগে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। সঙ্গে ছিলেন ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম।

এই ভবনটি বিজিএমইএ নিজ খরচে না ভাঙলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) সেটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল আপিল বিভাগ। সেখানে তাদের প্রতিনিধিও শুনানি করেন। রাজউকের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

বিজিএমইএর সময়ের আবেদনের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত না জানিয়ে তারা ভবন ভাঙতে আর সময় চাইবে না এ সংক্রান্ত মুচলেকা চেয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

বিজিএমইএর আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকীকে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা তো বারবার আসেন। ইউ আর প্লেয়িং উইথ কোর্ট অর্ডার। এটা সো আনফরচ্যুনেট (আপনারা আদালতের আদেশ নিয়ে লেখছেন। এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক)।’

‘আপনার নিজেরও তো বিষয়টি নিয়ে আদালতে দাঁড়াতে দ্বিধা হওয়ার কথা। আমাদের লজ্জা লাগে। আদালতের প্রেসটিজ (সম্মান) চলে যাবে আর আপনি আপনার ক্লায়েন্টের (মক্কেলদের) জন্য আসবেন, এটা হতে পারে না।’

‘আদালতের আদেশ পালন করা কি দরকার ছিল না? সময় কতবার নিয়েছেন, এরপর আবার বলবেন (সময় চাইতে), আবার আসবেন? বারবার আসতেই থাকবেন? এ পর্যন্ত কতবার সময় চেয়েছেন?’।

বিজিএমইএর আইনজীবী বলেন, ‘এ পর্যন্ত তিনবার সময় চাওয়া হয়েছে।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ওই সময়ের মধ্যে ভবন ভাঙতে এ পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?’

কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা তো স্পেস খুঁজছি, কী পদক্ষেপ নিয়েছি সেটা আবেদনে আমরা উল্লেখ করেছি।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘যে স্টেপ নিয়েছেন তাতে তো মনে হচ্ছে পাঁচ বছরসময় লেগে যাবে। আবারও সময় চাইতে আসবেন?’।

কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘সমস্যায় পড়লে তো আদালতে আসতে হয়। ক্লায়েন্টের জন্যই তো আমাকে সময়ের আবেদন করতে হয়। এটা তো আমার প্রফেশনাল ডিউটি (পেশাগত দায়িত্ব)।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘প্রফেশনাল ডিউটি সেকেন্ডারি। প্রথম হচ্ছে আদালতের ডিউটি। আপনারা (বিজিএমইএ) খুব বুদ্ধিমান। কারণ, এক সাথে কোথাও এত বড় স্পেস পাবেন না। আর তখন কোর্টে আসবেন সময়ের জন্য। এই বুদ্ধি নিয়েই তো থাকেন।’

‘বিজিএমিইএর অফিস কত স্কয়ার ফিট?’- প্রধান বিচারপতির এমন প্রশ্নে আইনজীবী জানান, ৬০ হাজার বর্গফুট।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘৬০ হাজারের স্কয়ার ফিটের ভবন পাবেন কোথাও? কোর্ট কি অর্ডার বাস্তবায়নের কথা বলে দেবে? কোর্ট শুধু আদেশ দেবে। আর আদেশ পালন না হলে কনটেম্পট (আদালত অবমাননার) রুল দিবে। আপনারা শেষ এক বছরে কি স্টেপ নিয়েছেন?’।

কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘১১০ কাঠা জমি আমরা পারচেস (ক্রয়) করেছি।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এভাবে তো পাঁচ বছর লাগবে। কারণ, এখনও বলছেন পাইলিং হচ্ছে। কয়দিন পর বলবেন বেজমেন্ট হচ্ছে।’

কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘না মাই লর্ড, বেশি সময় লাগবে না।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘তাহলে আপনাদের আন্ডারটেকিং (মুচলেকা) দিতে হবে যে, আর সময় চাইবেন না। তাহলে আমরা বিবেচনা করতে পারি।’

তখন কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘তাহলে সময় দেন।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘তাহলে নট টু ডে (আজ আদেশ নয়) রাখলাম।’

এরপর আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে প্রধান বিচারপতি জানতে চান, ভবন ভাঙতে কেন রাজউক এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

জবাব আসে, ‘আমি এবার সরকার থেকে কোনো নির্দেশনা পাইনি। আগে পেয়েছিলাম তখন রাজউকের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলাম।’

তখন বিজিএমইএ ভবন নিয়ে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ দাঁড়িয়ে বলেন, ‘রাজউক আদালতের আদেশ পালনে প্রস্তুত আছে।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘অনেক ভবন রাতারাতি ভাঙা হয়েছে। তাদেরকে তো সময় দেওয়া হয়নি। গোলাপ শাহ মাজারের ওখানে সড়ক করা হয়েছে। তখন কি তাদের সরতে সময় দেওয়া হয়েছিল?’।

‘এখানে সময় দেওয়া আনফেয়ার (অনুচিত)। এভাবে সময় দিলে আদালতের আর কোনো অর্ডার এক্সিকিউট (আদেশ কার্যকর) হবে না।’ এরপর আদালতে অন্য মামলার ওপর শুনানি শুরু হয়।

(ওএস/এসপি/মার্চ ২৭, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test