E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গুগল-ফেসবুক-ইউটিউবকে করের আওতায় আনার নির্দেশ

২০১৮ এপ্রিল ১২ ১৭:১৮:৪৫
গুগল-ফেসবুক-ইউটিউবকে করের আওতায় আনার নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার : জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং ভিডিও দেখার জনপ্রিয় সাইট ইউটিউবসহ ইন্টারনেটভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে করের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলো বিগত ১০ বছরে কী পরিমাণ অর্থ আয় করেছে এবং এ বিষয়ে তদন্তের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ সংক্রান্ত দায়ের করা রিটের ওপর শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর গুগল, ফেসবুক, ইউটিউবসহ ইন্টারনেটভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে করের আওতায় আনার নির্দেশ দেন আদালত।

গত সোমবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের ছয়জন আইনজীবী। রিটে একই সঙ্গে ডোমেইন এবং লাইসেন্স ক্রয় বাবদ কত টাকা আয় করেন তারা এবং বাংলাদেশ সরকারকে কত টাকা কর দেন তাও জানতে চাওয়া হয়।

এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরির নির্দেশনাও চাওয়া হয় রিটে।

রিটের বিবাদীরা হলেন- অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রথম আলোর সম্পাদক এবং বাংলাদেশ নিউজ পেপারস ওনারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মতিউর রহমানসহ, গুগল, ফেসবুক, ইয়াহু এবং ইউটিউব কর্তৃপক্ষ।

রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবিন পল্লব জানান, জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ভিডিও দেখার জনপ্রিয় সাইট ইউটিউবসহ ইন্টারনেটভিত্তিক সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব ফাঁকির বিরুদ্ধে রিট দায়ের করা হয়েছে।

রিট আবেদনে ইন্টারনেটভিত্তিক সব প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনা, প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে পরিচালনার জন্য নীতিমালা প্রস্তুত করা, প্রতিষ্ঠানগুলো কী পরিমাণ টাকা নিচ্ছে, তা দেখার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং সেই কমিটি দিয়ে বিগত ১০ বছরে কী পরিমাণ অর্থ নেয়া হয়েছে তা নির্ধারণ করার নির্দেশনা চাওয়া হয়।

রিট আবেদন করা আইনজীবীরা হলেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাউসার, অ্যাডভোকেট আবু জাফর মো. সালেহ, অ্যাডভোকেট অপূর্ব কুমার বিশ্বাস, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাজ্জাদুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মাজেদুল কাদের।

পরে ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের বলেন, রিটে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক ও বাংলাদেশ নিউজ পেপারস ওনারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মতিউর রহমানসহ, গুগল, ফেসবুক, ইয়াহু ও ইউটিউব কর্তৃপক্ষকে বিবাদী করা হয়েছে।

এর আগে ৭ এপ্রিল সার্চ ইঞ্জিন গুগল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ ইন্টারনেটভিত্তিক সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব ফাঁকির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনবিআরের চেয়ারম্যান, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সচিব, প্রথম আলোর সম্পাদক ও বাংলাদেশ নিউজ পেপারস ওনারস অ্যাসোসিয়েশন সভাপতিকে এ নোটিশ পাঠানো হয়। এছাড়া গুগল, ফেসবুক, ইয়াহু ও ইউটিউব কর্তৃপক্ষকেও নোটিশটি পাঠানো হয়। রিট সংশ্লিষ্ট ছয় আইনজীবী ওই নোটিশ পাঠান।

নোটিশে বলা হয় ‘প্রযুক্তির যুগে গুগল, ফেসবুক এখন প্রাত্যহিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এখন সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন দেখতে আগ্রহী। দিন দিন এর ব্যবহার বাড়ছে। বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও। এ সুযোগে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে দেশ থেকে কোটি কোটি ডলার নিয়ে যাচ্ছে ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট বিশ্বের নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু সরকারকে এক টাকাও রাজস্ব দিচ্ছে না। প্রতি বছর কত টাকা বিজ্ঞাপন বাবদ বিদেশে পাচার হচ্ছে, তার সঠিক কোনও হিসাব নেই সরকারের কোনও প্রতিষ্ঠানের কাছে। কারণ, বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের অর্থ পরিশোধ করছে ক্রেডিট কার্ড ও অন্যান্য অনলাইন প্রযুক্তির মাধ্যমে।’

নোটিশপ্রাপ্তদের কয়েকটি প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছিল। সেগুলো হলো গুগল, ইয়াহু, অ্যামাজন, ইউটিউব, ফেসবুককে দেওয়া সব বিল থেকে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী প্রযোজ্য রাজস্ব কর কর্তন করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করাসহ রাজস্ব কর আদায়ের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারির অনুরোধ।

এছাড়া সরকারকে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি তদন্ত করাসহ বিগত ১০ বছরে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব ওই ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পেতো সেই হিসাব করে সংশিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে তা আদায়ের ব্যবস্থা করতে বলা হয় নোটিশে। পাশাপাশি গুগল, ইয়াহু, অ্যামাজন, ইউটিউব, ফেসবুককে তাদের গত ১০ বছরের বকেয়া রাজস্ব বাংলাদেশ সরকারের কোষাগারে ফেরত পাঠানোর জন্যও নোটিশে বলা হয়।

পরে ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘যাদের নোটিশ পাঠানো হয়েছে তাদের নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এর জবাব দিতে হবে। অন্যথায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে।’

কিন্তু কোনও জবাব না পাওয়ায় আদালতে রিট দায়ের করা হলো।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ১২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test