E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মায়ের সেবাসহ ৩ শর্তে সাজাপ্রাপ্ত আসামি থাকবেন পরিবারে

২০২০ নভেম্বর ০৮ ১৪:৫৪:৩৯
মায়ের সেবাসহ ৩ শর্তে সাজাপ্রাপ্ত আসামি থাকবেন পরিবারে

স্টাফ রিপোর্টার : ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা মায়ের সেবা ও পরিবারের সঙ্গে বসবাস করাসহ তিন শর্তে মাদক মাদক মামলায় দণ্ডিত আসামির সাজা বহাল রেখে প্রবেশন প্রদান করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি মতি মাতবরের করা এক রিভিশন মামলার শুনানি নিয়ে রবিবার (৮ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি জাফর আহমেদ-এর একক বেঞ্চ এ রায় দিয়ে আসামিকে জেলে না পাঠিয়ে পরিবারের সঙ্গে থাকার প্রবেশন প্রদান করে রায় ঘোষণা করেন।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন আসামিকে প্রবেশন দিয়ে হাইকোর্টের যুগান্তকারী রায় এটি। তারা জানান, মাদক মামলায় ৫ বছর দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মতি মাতবর জেলে নয়, থাকবেন পরিবারের সঙ্গে। তবে মানতে হবে কয়েকটি শর্ত। দেড় বছর ধরে তিনি থাকবেন প্রবেশন অফিসারের অধীনে।

যে শর্ত মানতে হবে, ৭৫ বছরের বৃদ্ধা মায়ের যত্ন নিতে হবে। দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হবে। আইন অনুসারে নির্ধারিত বয়সের আগে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবেন না। এসব শর্ত না মানলে তাকে জেলে যেতে হবে।

আদালতে এদিন আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী মো. রুহুল আমীন এবং মো. আসাদ উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো.এনামুল হক মোল্লা।

রায়ের পর আইনজীবী শিশির মুহাম্মদ মনির সাংবাদিকদের বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলার আসামি মতি মাতবরের ৫ বছরের সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন মামলার রায়ে আসামির সাজা বহাল রেখে প্রবেশন দিয়েছেন আদালত। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রবেশন আইনে হাইকোর্টের দেওয়া দ্বিতীয় রায়। তবে বিশেষ আইনে এটি প্রথম রায়। যা অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক এবং যুগান্তকারী।

তিনি আরও বলেন, হাইকোর্ট বলেছেন জেলে নয়, দণ্ডিত আসামিকে পরিবারের সঙ্গে থাকার শর্তে ৫ বছরের দণ্ড স্থগিত করে রায় রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে প্রবেশনের সুযোগ চেয়ে করা আবেদন গ্রহণ করে আসামির রিভিশন খারিজ করে দিয়েছেন।

শিশির মনির বলেন, আদালত দেড় বছরের জন্য প্রবেশন মঞ্জুর করে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন। আসামিকে তার পারিবারিক বন্ধন বজায় রাখতে হবে। মায়ের সেবা করতে হবে। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া ও দেখাশোনা নিশ্চিত করতে হবে। আইন অনুযায়ী বয়স না হওয়া পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে দিতে পারবেন না।

এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবা অফিসার মো. আজিজুর রহমান মাসুদ। আসামিকে তাৎক্ষণিকভাবে তার তত্ত্বাবধানে দিয়ে দেওয়া হয় বলেও জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

তারা জানান, আসামি মতি মাতবরের কাছে ৪১১ এবং অপর একজন আসামির কাছ থেকে ৭০০ পিস ইয়াবা উদ্ধারের অভিযোগে ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বরে ঢাকার কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। এ মামলার বিচার শেষে ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত তাদেরকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

এ রায়ের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে আবেদনের পর একই বছর তা খারিজ করে দেন মহানগর দায়রা জজ আদালত। পরে আসামি মতি মাতবর ২০১৭ সালের ১ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন আবেদন করেন।

রিভিশনের শুনানিতে আসামিপক্ষ এ মামলায় প্রবেশন অধ্যাদেশ, ১৯৬০ এর ধারা ৫ অনুযায়ী আদেশ দেয়া যেতে পারে বলে উল্লেখ করে আইনজীবীরা বলেন, যেহেতু তার এটিই প্রথম অপরাধ এবং আর কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার রেকর্ড নেই। তিনি ভবিষ্যতে কোনো অপরাধ করবেন মর্মে ধারণা করার মতো কোনো তথ্য নেই। সে কারণে তিনি প্রবেশন আইনে সুযোগ পেতে পারেন।

এ আবেদনের শুনানি নিয়ে চলতি বছরের ৭ অক্টোবর ১০ দিনের মধ্যে আসামির নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং টিন নম্বর খুলে দিতে অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতি, ঢাকাকে নির্দেশ দেন। এ আদেশের আলোকে পদক্ষেপ নিয়ে ২১ অক্টোবর ঢাকা জেলার প্রবেশন অফিসার হাইকোর্টকে অবহিত করেন।

পরে আদালত আসামির বিষয়ে আরও একটি (এন্টিসিডেন্ট রিপোর্ট) প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। এ আদেশ অনুসারে প্রবেশন কর্মকর্তা ২ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেই প্রতিবেদনে আসামির স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে ভালো মন্তব্য করা হয়।

উল্লেখ্য, মতি মাতবর ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর গ্রেফতারের পর দীর্ঘ ২০ মাস কারাভোগ করেন।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ০৮, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test