E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গাজীপুরে ইভিএম বাড়াচ্ছে ইসি, লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী

২০১৮ জুন ১৩ ১৫:৩২:৪৬
গাজীপুরে ইভিএম বাড়াচ্ছে ইসি, লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী

স্টাফ রিপোর্টার : খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ভোট হলেও গাজীপুরে এই যন্ত্রে ভোট নেয়া হবে ছয়টি কেন্দ্রে। ৩০ জুলাই হতে যাওয়া তিন সিটি নির্বাচনেও ব্যবহার হবে যন্ত্রটি।

নির্বাচন কমিশনের ইভিএমের ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী। তারা যন্ত্রটিকে ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় করতে চায়। এটি যে সুষ্ঠু ভোটের সহায়ক, সেটিও দেখাতে চায় তারা।

বুধবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক তফসিল ঘোষণা করে গাজীপুরে ইভিএম বাড়ানোর কথা জানান কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

গাজীপুরে ভোট হওয়ার কথা ছিল গত ১৫ মে। কিন্তু একটি রিট আবেদনের পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে ভোটে স্থগিতাদেশ দেয়া এবং পরে তা প্রত্যাহারের পর ভোটের নতুন তারিখ ঠিক হয় ২৬ জুন।

নির্বাচন কমিশন সনাতন পদ্ধতির ব্যালটের ভোটকে ঝামেলার মনে করছে। এর বদলে ইভিএম চালু করলে একজনের ভোট আরেকজনের দেয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে তারা।

ইভিএম নিয়ে বিএনপির আপত্তি থাকলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, এই যন্ত্রের ব্যবহার বাড়লেই এ নিয়ে সংশয় কেটে যাবে।

বাংলাদেশে ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে যন্ত্রটি ব্যবহারও হয়। এরপর ২০১২ সালে কুমিল্লা ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও পরীক্ষামূলকভাবে একটি কেন্দ্রে ভোট হয় ইভিএমে। তবে সে সময় যন্ত্রটিকে কারিগরি ত্রুটি পাওয়া যায়।

বুয়েটের তৈরি ওই যন্ত্রটি বাতিল করে দিয়ে নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির সহযোগিতায় ইসির নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি নতুন ইভিএম তৈরি করিয়েছে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানিও করা হয়েছে বিপুল যন্ত্র।

তবে নির্বাচন কমিশন একসঙ্গে যন্ত্রটির ব্যবহার চালু করতে চায় না। গত ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে এই যন্ত্র নিয়ে ভোট হয়। আর গত ১৫ মে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুটি কেন্দ্রে ভোট হয় ইভিএমে।

আর দুই নির্বাচনে এই তিনটি কেন্দ্রেই ফলাফল অন্য কেন্দ্রের আগেই পাওয়া গেছে। সেখানে ভোট নিয়ে কোনো ঝামেলার খবর পাওয়া যায়নি। আর ভোটাররাও কোনো সমস্যার কথা জানায়নি, বরং তারা উচ্ছ্বাস জানিয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সচিব বলেন, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ছয়টি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে।’

গাজীপুরের পর বাকি তিন নগরে ভোটে ইভিএম ব্যবহার হবে- আগেই জানিয়ে দিলেন সচিব। তবে সেখানে গাজীপুরের মতোই ছয় কেন্দ্রে নাকি আরও বেশি কেন্দ্রে যন্ত্রে ভোট নেয়া হবে, সেই প্রশ্নের জবাব মেলেনি। সচিব বলেন, ‘সেগুলোতে কী পরিমাণ ইভিএম ব্যবহার করা হবে এটি কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।’

সচিব জানান, তারা ধীরে ধীরে ইভিএমের ব্যবহার বাড়াবেন। বলেন, ‘আমরা রংপুরে একটি কেন্দ্রে এবং খুলনায় দুটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করেছি। এখন করতে যাচ্ছি ছয়টি কেন্দ্রে। ভবিষ্যতে আমাদের এই যন্ত্র বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।’

ধীরে ধীরে যন্ত্রটির ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে হেলালুদ্দীন বলেন, ‘আমরা ভোটারদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে চাই যেন তারা বুঝতে পারে, এটা দিয়ে স্বচ্ছ ও সুন্দরভাবে ভোট নেয়া যায়।’

সিটি করপোরেশন ছাড়াও সামনে স্থানীয় সরকারের যত নির্বাচন হবে, সগুলোতেই ইভিএম ব্যবহার করা হবে বলেও জানান নির্বাচন কমিশন সচিব।

২০১৬ সালের শেষ দিকে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্রপতির সংলাপেই ভোট গ্রহণে ইভিএমের প্রসঙ্গ আসে। আওয়ামী লীগ সনাতন পদ্ধতির বদলে এই যন্ত্রে ভোট নেয়ার প্রস্তাব তখনই দেয়। আর গত বছরের মাঝামাঝি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপেও এই প্রস্তাব দেয় তারা।

তবে দুটি সংলাপের পরই বিএনপির নেতারা ইভিএমের বিরোধিতা করতে থাকেন। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ইভিএমে আপত্তি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠিও দেয় দলটি।

সম্প্রতি দলের মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী ইভিএমকে সরকারের পক্ষে ভোট কারচুপিতে সিইসির নতুন কৌশল হিসেবে বর্ণনা করেন।

গাজীপুরে ইভিএমের ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি বলেন, ‘আমি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানি না। জানলে আমিও এর বিরুদ্ধে লিখিত আপত্তি জানাব।’

ইভিএম নিয়ে আপত্তি কেন- এমন প্রশ্নে বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমি প্রথম ইভিএম নিয়ে থেকে আপত্তি জানিয়ে এসেছি। আমি এটার ঘোর বিরোধী।’

আপত্তির কারণ কী- জানতে চাইলে হাসান সরকার দাবি করেন, ‘যে দেশে এই মাধ্যমটি আবিষ্কার হয়েছে, সে দেশেই এর সুষ্ঠু প্রয়োগ হয়নি। বাংলাদেশের মতো একটি দেশে এই মাধ্যমটিতে ভোট সুষ্ঠু হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটে ইভিএম কী পরিমাণে ব্যবহার হবে সে বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি নির্বাচন কমিশন।

(ওএস/এসপি/জুন ১৩, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test