আন্তর্জাতিক ডেস্ক :  ইউক্রেনের রাশিয়া সীমান্ত লাগোয়া অঞ্চলে ২৯৮ জন আরোহী নিয়ে মালয়েশিয়ার একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ‘ভূপাতিত’ হয়েছে। এতে সব আরোহীসহ তিন শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো।

বৃহস্পতিবার রাতে রাশিয়ার বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানায়, মিসাইল হামলায় ফ্লাইট ‘এমএইচ১৭’ উড়োজাহাজটি ‘ভূপাতিত’ হয়েছে।

ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অ্যান্টন হেরাশচেঙ্কোর উদ্ধৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, উড়োজাহাজটিতে থাকা ২৯৮ আরোহীর সবাই নিহত হয়েছেন। একইসঙ্গে ভূপাতিত হওয়ার ঘটনাস্থলে কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তিও নিহত হয়েছেন।

মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বরাতে সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবরে উড়োজাহাজটিতে ২৮০ জন যাত্রী থাকার কথা বলা হলেও ওই যাত্রীদের সঙ্গে থাকা তিন সদ্যজাত শিশুর কথা আড়ালে পড়ে যায়। অর্থাৎ ২৮০টি পাসপোর্টধারী যাত্রী থাকলেও ‍তাদের সঙ্গে আরও তিন জন সদ্যজাত আরোহী ছিল প্লেনটিতে।

মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হুইব গোর্তার জানান, আরোহী ২৮০ জনের মধ্যে ২৩৩ জনের জাতীয়তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকি ৪৭ জনের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

জাতীয়তা নিশ্চিত হওয়া ২৩৩ জনের মধ্যে ১৫৪ জনই হলেন ডাচ নাগরিক। আর বাকি ২৭ জন অস্ট্রেলিয়ান, ২৩ জন মালয়েশিয়ান, ১১ জন ইন্দোনেশিয়ান, ছয় জন ব্রিটিশ, চার জন জার্মান, ৪ বেলজিয়ান, ৩ জন ফিলিপিনো ও একজন কানাডিয়ান। এছাড়া, ১৫ জন ক্রু-ই মালয়েশিয়ান নাগরিক ছিলেন।

তবে, প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ২৩ জন নাগরিক ওই উড়োজাহাজে ছিলেন বলে জানানো হলেও পরবর্তীতে এ খবর মার্কিন সংবাদ মাধ্যমগুলোতেও চোখে পড়েনি।

এছাড়া, উড়োজাহাজটিতে কোনো বাংলাদেশি ছিলেন কিনা তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।

স্থানীয় সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানায়, নেদারল্যান্ডের রাজধানী আমস্টার্ডাম থেকে কুয়ালালামপুরগামী মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটি বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক সময় ১৪টা ১৫ মিনিটে ইউক্রেনের শাখতেরেস্ক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। রুশ সীমান্ত থেকে স্থানটির দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার।

ভূপাতিত হওয়ার সময় উড়োজাহাজটিতে ২৯৫ জন আরোহী ছিলো বলে নিশ্চিত করে ইন্টারফ্যাক্স।

মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষও তাৎক্ষণিকভাবে টুইটারে জানায়, এমএইচ১৭ উড়োজাহাজটির সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ইউক্রেনের আকাশসীমায় থাকা অবস্থায় উড়োজাহাজটির সঙ্গে তাদের সর্বশেষ যোগাযোগ হয়েছিলো

ইন্টারফ্যাক্স জানায়, মাটি থেকে ছোঁড়া উড়োজাহাজ বিধ্বংসী ‘বিইউকে’ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভূপাতিত হয়েছে উড়োজাহাজটি। তবে ইউক্রেন সহ পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমগুলোর ধারণা, প্লেন থেকে ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্রেও বিধ্বস্ত হতে পারে উড়োজাহাজটি।

সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইউক্রেন থেকে রাশিয়ায় প্রবেশের প্রাক্কালে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০ হাজার মিটার উচ্চতায় উড়োজাহাজটিতে আঘাত হানে ক্ষেপণাস্ত্র।

পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, যে স্থানে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে সেখানে আগে থেকেই ইউক্রেনের রুশপন্থি বিদ্রোহীদের তৎপরতা চলছে। সোমবার ওই এলাকায় একইভাবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে একটি ইউক্রেনীয় পরিবহন উড়োজাহাজ ভূপাতিত করে বিদ্রোহীরা। এছাড়া বৃহস্পতিবারও ইউক্রেনের একটি যুদ্ধবিমানকে একইভাবে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে ভূপাতিত করে রুশ জঙ্গিবিমান।

মালয়েশীয় এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি আমস্টার্ডাম থেকে আন্তর্জাতিক সময় বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ১৪ মিনিটে উড়াল দেয়। মালয়েশিয়া সময় পরের দিন অর্থাৎ শুক্রবার ভোর ৬টা ৯ মিনিটে এটি কুয়ালালামপুরে পৌঁছার কথা ছিলো।

এ ঘটনার পর বিবৃতিতে মালয়েশিয়ান প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক তাৎক্ষণিকভাবে জানান, তিনি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার খবরে ‘স্তম্ভিত’।

এরপর সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, এ কথা নিশ্চিত উড়োজাহাজটিকে ভূপাতিত করা হয়েছে, এখন এর সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করাই মালয়েশীয় সরকারের প্রধান কাজ।

নাজিব জানান, তিনি ইউক্রেনিয়ান প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেঙ্কোর সঙ্গে কথা বলেছেন, পোরোশেঙ্কো থাকে এ ঘটনার পূর্ণ ও নিগূঢ় তদন্তে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গেও কথা বলেছেন এবং তারা এ ঘটনা তদন্তে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের ঘটনাস্থলে প্রবেশের ব্যাপারে একমত হয়েছেন, এছাড়া এখনও ওই উড়োজাহাজটির ব্ল্যাক বক্সের (ফ্লাইট রেকর্ডার) কাছে কেউ পৌঁছাতে পারেনি বলে জানতে পেরেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে এ ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে ব্রিফ করার পর নিজের প্রতিক্রিয়ায় একে ‘ভয়ানক বিয়োগাত্মক ঘটনা’ বলে আখ্যা দেন তিনি।

এছাড়া, এ ঘটনার ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও ফোনালাপ করেন ওবামা।

ওবামা-পুতিন ফোনালাপের খবর নিশ্চিত করার পাশাপাশি ক্রেমলিন নিশ্চিত করেছে, পুতিন মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রীকেও ফোন করে সমবেদনা প্রকাশ করেছেন এবং ঘটনার তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

অপরদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পেরাসাঙ্কো এটিকে ‘মহাবিপর্যয়’ আখ্যা দিয়ে ঘটনার স্বাধীন তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি বিবৃতিতে দাবি করেছেন, এর আগেও সম্প্রতি দু’টো উড়োজাহাজ ভূপাতিত করার ঘটনা ঘটেছে। ওই দু’টো ঘটনাই ঘটিয়েছে রুশপন্থিরা।

তবে, ইউক্রেনের রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা আলেক্সান্দার বোরোদাই দাবি করেছেন, এ ঘটনা ইউক্রেন সরকার ঘটিয়েছে।

বোরোদাইয়ের সঙ্গে একমত পোষণ করে পুতিনও দাবি করেছেন, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনাভিযান চলাকালে এ ঘটনা ঘটিয়েছে ইউক্রেন সরকার।

>>প্লেনটি ভূপাতিত, কোনো বিপদ সংকেত দেয়নি

>>২৯৫ যাত্রীসহ মালয়েশিয়ার বিমান ইউক্রেনে বিধ্বস্ত

(ওএস/অ/জুলাই ১৮, ২০১৪)