কুমিল্লা প্রতিনিধি : রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হকের সঙ্গে কনে হনুফা আক্তার রিক্তার বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা হয়েছে ৫ লাখ ১ টাকা। বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেছেন চান্দিনার গল্লাই ইউনিয়নের মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রার মাওলানা কাজী মো. সিদ্দিকুর রহমান। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়।

এর আগে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে গাঁয়ে গোলাপী শেরওয়ানি, মাথায় সোনালী পাগড়ি ও পায়ে রাজকীয় নাগরা পরে কনে বাড়িতে পৌঁছেছেন রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক। ৭০০ বরযাত্রীর বিশাল গাড়িবহর নিয়ে কনে রিক্তার পিত্রালয়ে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মিরাখলা গ্রামে পৌঁছান তিনি।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা থেকে এসে বরযাত্রী বহর কুমিল্লার দাউদকান্দি ঈদগাহ মাঠে শুক্রবারের জুমার নামাজ শেষে কনে বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হয়।

বিকেল পৌনে ৩টায় মিরাখলা গ্রামের পাশে তালতলা বাজারে পৌঁছার পর বরযাত্রীদের ৫০টিরও বেশি বিভিন্ন মডেলের গাড়ি পার্কিং করা হয়। পরে শুধু বরবাহী গাড়িটি পৌঁছে কনে বাড়ির বিয়ের গেটে।

এ সময় গেটে উপস্থিত তরুণীরা ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে বরকে বরণ করে নেয়। এ সময় ব্যাপক আনন্দে সরগরম হয়ে উঠে গোটা বিয়ে বাড়ি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খায় বিয়ে বাড়িতে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এ বিয়ের আয়োজন নিয়ে বর, কনের স্বজন এবং কুমিল্লা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উৎফুল্ল। এতে বরযাত্রী ছিলেন নৌ-মন্ত্রী শাহজাহান খানসহ ৬ জন মন্ত্রী এবং অর্ধ শতাধিক এমপি।

বিয়ে বাড়িতে ভিআইপিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক কাজ করছে ছয় স্তরের নিরাপত্তা বাহিনী। সেগুলোর মধ্যে বিশেষ ডিউটি পুলিশ, পুলিশের মোবাইল টিম, ডিএসবি, ট্রাফিক পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ ও সাদা পোশাকের কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য দায়িত্বে থাকবে।

চান্দিনা থানার ওসি গোলাম মোর্শেদ জানান, নিরাপত্তা ব্যবস্থার সার্বিক তত্ত্বাবধান করবেন কুমিল্লার (উত্তর) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, কুমিল্লা সদর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম।

বিয়ে বাড়ির প্রায় ৩০০ গজ সামনে প্রথম গেইটে তল্লাশির পর অতিথিদের বিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। আমন্ত্রিত অতিথি ছাড়া উৎসুক কোনও ব্যক্তি বিয়ে বাড়িতে প্রবেশের সুযোগ পায়নি।

বরের সঙ্গে স্পিকার, মন্ত্রী, সচিব, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রেলমন্ত্রীর পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, কুমিল্লা মহানগরী, চৌদ্দগ্রাম ও ঢাকার অতিথিরা মিলে সাত শতাধিক বরযাত্রী ছিলেন।

বাড়ির সামনে তিনটি তোরণ করা হয়েছে। কনের বাড়িতে উভয় পক্ষ মিলে দেড় হাজার মানুষের খাবার আয়োজন করা হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, বিয়েতে কোনো প্রকার গিফ্ট সামগ্রী বা নগদ অর্থ গ্রহণ করা হবেনা।

বিয়ে বাড়িতে শুধুমাত্র বরের সু-সজ্জিত গাড়ি প্রবেশ করেছে। মন্ত্রীকে বহনকারী তার ব্যক্তিগত গাড়িটিই বরের গাড়ি হিসেবে সাজানো হয়েছে। বিয়ে বাড়িতে প্রবেশ গেইটের পাশেই ওই গাড়িটি পার্কিং করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিয়ে বাড়িতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছে কুমিল্লা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১। এছাড়া জেনারেটরেরও ব্যবস্থা রয়েছে।

কনের খালাত বোনের স্বামী কুমিল্লা উত্তর জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মো. লুৎফুর রেজা খোকন জানান, বিয়েতে বরযাত্রী হিসেবে অর্ধ শতাধিক মন্ত্রী ও এমপি আসতে পারেন। সবমিলিয়ে মোট দেড় হাজার অতিথি আপ্যায়নে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। দেশি মুরগি, খাশির তৈরি কাচ্চি বিরিয়ানি, খাসি দিয়ে তৈরি জালি কাবাব, শাহী জর্দা, আলু বোখারার চাটনী, বোরহানী, কোমল পানীয়, বোতলজাত বিশুদ্ধ পানি। খাবার তৈরির জন্য ৫০টি খাসি, ৪শ মুরগিসহ অন্যান্য উপকরণ ইতোমধ্যে বিয়ে বাড়িতে পৌঁছে গেছে। রান্নার জন্য ১৪টি চুলাও তৈরি করা হয়েছে। কুমিল্লা ক্লাবের বাবুর্চি মিল্টন রোজারিও শুক্রবার রাতে খাবার তৈরির কাজ শুরু করেছেন। খাবারের পর অতিথিদের জন্য ঢাকা থেকে আনা হয়েছে মুখরোচক শাহী পান। এছাড়া কফির ব্যবস্থাও রয়েছে।

জামাই রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের জন্য কনেপক্ষ রান্না করেছে বিশেষ খাবার। ১৬ কেজি ওজনের আস্ত খাসির রোস্ট রয়েছে খাবারের তালিকায়।

হনুফা আক্তার রিক্তার বড়ভাই আলাউদ্দিন মুন্সি বলেন, এলাকার নামকরা বাবুর্চি কুমিল্লা ক্লাবের মিল্টন রোজারিও তৈরি করেছেন জামাইয়ের খাবার।

মিল্টন রোজারিও জানান, বিশাল আকারের ডিসে জামাইয়ের খাবার পরিবেশন করা হবে। চারপাশে থাকবে ১০টি ইলিশ মাছ, ১০টি আস্ত মুরগীর রোস্ট এবং মাঝে থাকবে ১৬ কেজি ওজনের খাসির রোস্ট।

>>রেলমন্ত্রীর বিয়ে আজ


(ওএস/এটিআর/অক্টোবর ৩১, ২০১৪)