E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

রাজারহাটে ৫ ঘণ্টায় ১৫ বাড়ি বিলিন, মাথা গোঁজার ঠাঁই পাচ্ছে না ভাঙন কবলিতরা

২০২৫ আগস্ট ১৯ ১৭:৩৯:৪৪
রাজারহাটে ৫ ঘণ্টায় ১৫ বাড়ি বিলিন, মাথা গোঁজার ঠাঁই পাচ্ছে না ভাঙন কবলিতরা

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট : ‘নদীর তীরে আমাগো বাড়ি, জমি জিরাত নাই। কেউ আমাগো জায়গা দিতাছে না। বাড়িঘর খুইল্ল্যা অন্যের জমির আইলে মাল ছামান রাখছি। কেউ আমাগো খোঁজখবর নিচ্ছে না।’ সাংবাদিক দেখে ছুটে এলেন মধ্য বয়সী ফুলমতি বেগম। প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ জন মানুষ একত্রিত হয়ে নদী তীরবর্তী বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে। চিৎকার, চেঁচামেচি আর রাক্ষুসী তিস্তা নদীর তীব্র স্রোতের কলকল শব্দে জায়গাটিতে এক ধরণের আতংক বিরাজ করছিল। হতদরিদ্র ফুলমতি সন্তানকে সাথে নিয়ে মাথায় ও কাঁধে করে বাড়ির জিনিসপত্র অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে আর আক্ষেপ করে জানালো কথাগুলো।

প্রচন্ড গড়মের মধ্যে গাছের নীচে দম নিচ্ছিলেন খলিল মিয়া। কথা বলতে গিয়ে বুক ফেঁটে যাচ্ছিল তার। জন্মের পর থেকেই বাপ-দাদার ভিটার মধ্যে বাড়িঘর করে ছিলেন। একদিকে ভাঙলে আরেক দিকে চলে যেতেন। এবার তার সব সম্পত্তি নদী খেয়ে গেছে। ফলে ভিটার মায়া ত্যাগ করে এবার জেলা ছেড়ে অন্য জেলায় চলে যেতে হচ্ছে। দম নিয়ে খলিল মিয়া বললেন, ‘দুই ছেলে শাহীন আর ছামিউলের সাথে রাতভর আসবাবপত্র, ঘর টানছি। এমন দ্রুত ভাঙছিল যে, দম নেওয়ার ফুসরত ছিল না। এখন তিন বাপবেটা মিলে পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট জেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নে ৭০ হাজার টাকায় জমি কবলা নিছি। এখন থেকে সেখানেই থাকবো।’

তিনি আরও জানালেন, আমরা যারা কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর অপর পাড়ে চর গতিয়াসামে ছিলাম, তাদের অধিকাংশ মানুষ একই ইউনিয়নের সরিষাবাড়ি বাঁধে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানেও জায়গা মিলছে না। ফলে যাদের সামর্থ আছে তারা পাশর্^বর্তী রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার চর ঢ়ুষমারা ও চর গণাইয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে, কেউ কেউ লালমনিরহাট জেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নে আশ্রয় নিয়েছে।

চর গতিয়াসামের ভাঙন কবলিত বক্তার মিয়া জানান, ‘সোমবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নদী ভাঙনের ফলে গত ৫ ঘন্টায় ১৫টি বাড়ি বিলিন হয়ে গেছে। বাড়িগুলির মধ্যে রয়েছে, বক্তার আলী, রফিকুল খাঁ, আফতাব খাঁ, তোফাজ্জল, সিরাজ, মোন্নাফ, শাকারুল, মমিনুল, উমর আলী, সাইফুল, ছামিরুল, সাইদুল, ফারুক, শাহিন ও খলিল।’

তিস্তা নদী ঘেঁষে অবস্থান নেয়া চর খিতাব খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহবুব রশীদ বলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া আমাদের কোন রক্ষা হবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জিও ব্যাগ ফেলে এবারের মত স্কুলটি রক্ষা করা গেলেও পরের বন্যায় কি হবে তা বলা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে এই এলাকায় প্রায় দেড়শ বাড়িঘর ভাঙনের ফলে লোকজন এলাকা ছেড়ে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরেছেন। বর্তমানে স্কুলে ৮৬জন শিক্ষার্থী থাকলেও এখন স্কুলে শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। ভাঙনের আতংকে অনেক শিক্ষার্থী স্কুল বিমুখ হয়েছে।’

রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার সহিদুল ইসলাম জানান, ‘গত ৪ দিনে তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙনে প্রায় ৭০টি বাড়ি বিলিন হয়ে গেছে। আমরা পরশুদিন ২৫টি বাড়ির তালিকা করে উপজেলা পরিষদে আবেদন করেছি। এখন পর্যন্ত খিতাব খাঁয়ে ৪টি ও চর গতিয়াসামে ৬টি বাড়িতে অর্থ ও ঢেউটিন বিতরণ করা হয়েছে। বাকীরা এখন হা-হুতাশ করছে। ওই এলাকায় আরও দেড়শ বাড়ি নদী তীরবর্তীতে অবস্থান করছে।’

রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) আশাদুল হক জানান, ‘আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত ৬৩টি বাড়ী ভাঙনের তথ্য রয়েছে। আমরা আগামিকাল প্রতিটি ভাঙন কবলিত পরিবারকে মাথা পিছু ৩০ কেজি করে চাল সহায়তা দিবো। এছাড়াও যারা খাদ্য সংকটে ভুগছেন বা অন্য কোন সহায়তা লাগলে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াবো।’

(পিএস/এসপি/আগস্ট ১৯, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ আগস্ট ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test