E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

আ.লীগ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন আরো ৫ নেতা

২০২৫ আগস্ট ২৩ ১৭:৫০:৫০
আ.লীগ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন আরো ৫ নেতা

তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর পৌর আওয়ামী লীগের ওয়ার্প পর্যায়ের ৫ নেতা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। এ নিয়ে ১৮ নেতা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন।

শুক্রবার (২২ আগস্ট) রাতে ওই ৫ নেতা মুকসুদপুর উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে করে আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২১ আগষ্ট) একই উপজেলার ননীক্ষীর ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ৮ নেতা সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দেন পদত্যাগের। এছাড়া বৃহস্পতিবার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রহমান শিকদার।

পদত্যাগী নেতারা হলেন- মুকসুদপুর পৌর আওয়ামী লীগের ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর মোঃ নিয়ামত খান, ২ নং ওয়ার্ডের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ জামাল হোসেন মুন্সী, ৩ নং ওয়ার্ডের সভাপতি পরিমল সাহা, সাধারণ সম্পাদক শান্ত সাহা ও ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ শফিকুল ইসলাম।

লিখিত বক্তব্যে সাবেক পৌর কাউন্সিলর মোঃ নিয়ামত খান বলেন, ২২ আগস্ট থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের আর কোনো সম্পর্ক নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। তবে আমরা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় সবসময় অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবো। রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে ভবিষ্যতেও দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যাব।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২১ আগষ্ট) বিকালে মুকসুদপুর উপজেলার ননীক্ষীর ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ৮ নেতা ননীক্ষীর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সংবাদ সম্মেলন করে দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

পদত্যাগী ৮ নেতা হলেন, ননীক্ষির ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মনোজ মৌলিক, কাজী মিজানুর রহমান, সহ-প্রচার সম্পাদক রাসেল শেখ, সদস্য স্বপন শেখ, একই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুর আলম মিয়া, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুবল রায়, ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আক্কাস চোকদার ও ননীক্ষির ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জলিল কাজী।

সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগকারী আটজনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মনোজ মৌলিক। তিনি বলেন, আমরা ননীক্ষীর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ শাখার সকল পদ থেকে স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে পদত্যাগ করছি। আমরা আমাদের পদত্যাগপত্র দ্রুত মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেব।

ওই দিন ব্যক্তিগত কারণ টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগ করেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রহমান সিকদার।

সংবাদ সম্মেলনে আব্দুর রহমান সিকদার বলেন, গত ৫ বছর ধরে আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে ডুমরিয়া ইউনিয়ন শাখার ধর্মবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। বর্তমানে শারীরিক অসুস্থতা ও ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ২১ আগস্ট থেকে স্বেচ্ছায় পদ থেকে পদত্যাগ করার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। শিগগিরই লিখিতভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেব।

১৩ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন টুঙ্গিপাড়ার কুশলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নওশের ফকির (৬০) ও একই ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্বাস আলী (৫৫)।

২৬ জুলাই চন্দ্রদিঘলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফাহিম ভূইয়া দুধ দিয়ে গোসল করে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এছাড়া গত ১৫ জুন মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান কামাল সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগ ছাড়ার ঘোষণা দেন। এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের ১৮ নেতা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হায়দার হোসেন বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিয়ে দল থেকে পদত্যাগ করা যায় না। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পদত্যাগ করলে সেটিকে পদত্যাগ বলা যেতে পাবে। পদত্যাগের নিয়ম হলো ওয়ার্ড কমিটির নেতা ইউনিয়ন কমিটির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। ইউনিয়ন কমিটির নেতা উপজেলা কমিটির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। জেলা কমিটির নেতা কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পদত্যাগপত্র দেবেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, এপর্যন্ত এনসিপির পথসভায় হামলা, সোনাবাহিনীর গাড়ি পোড়ানো, স্বেচ্চাসেবকদল নেতা হত্যা সহ ২১টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় ২২ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় মুকসুদপুরে আওয়ামী লীগ নোতা, কর্মী, সমর্থকদের গ্রেফতার ও হয়রাণি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ত্যাগ করার এটি একটি অন্যতম কারণ। এছাড়া আওয়ামী লীগের সময়ে টিসিবি, সার ডিলার, টিআর, কাবিথা সহ বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা দিয়েছে অনেক নেতা । এরা দলের গুরুত্বপূর্ন কোন নেতা ছিলেন না। এখন সুযোগ সুবিধা না পেয়ে বিএনপিতে ঢোকার জন্য এরা আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করছেন। এরকম দুই, একশ’ নেতা চলে গেলে মুকসুদপুর আওয়ামী লীগের কোন ক্ষতি হবে না। এদের মধ্যে পদত্যাগী নেতা মুকসুদপুর পৌর সভার ২ নং ওয়ার্ডের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ জামাল হোসেন মুন্সী শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিএনপির সভায় গিয়েছেন বলে হায়দার হোসেন দাবি করেন।

এ ব্যাপারে মোঃ জামাল হোসেন মুন্সীর বক্তব্য পেতে মোবাইলে ফোন দিয়ে বন্ধ পাওয়াগেছে।এ কারণে তার বক্তব্য জানাযায়নি।

মুকসুদপুর থানার ওসি মোস্তফা কামাল বলেন, মুকসুদপুরে অযথা কাউকে গ্রেফতার বা হয়রাণি করা হচ্ছে না। শুধুমাত্র অপরাধীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। একটি প্রতারক চক্র পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রাণি বা গ্রেফতারের ভয় দেখাচ্ছে। বিকাশে টাকাও নিচ্ছে বলে শুনেছি। সে বিষয়ে আমরা সধারণ মানুষকে সতর্ক করে চলেছি। টাকা দিতে নিষেধ করেছি।

(টিবি/এসপি/আগস্ট ২৩, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৩ আগস্ট ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test