E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

আনোয়ারায় ছিনতাই, কর্ণফুলীতে মামলা, পুলিশের তালিকায় উধাও দুই সিএনজি!

২০২৫ আগস্ট ২৬ ১৮:৩৪:২৪
আনোয়ারায় ছিনতাই, কর্ণফুলীতে মামলা, পুলিশের তালিকায় উধাও দুই সিএনজি!

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে ছিনতাই হওয়া সিএনজি উদ্ধার অভিযানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, উদ্ধার করা ৬টি সিএনজির মধ্যে থানায় জব্দ তালিকায় দেখানো হয়েছে মাত্র ৪টি। বাকি দুইটি সিএনজি রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। 

স্থানীয়দের দাবি, এ ঘটনা ঘটেছে ওসি মুহাম্মদ শরীফের নির্দেশে দুই এসআইয়ের প্রত্যক্ষ যোগসাজশে। অথচ পুলিশের দাবি, মামলা হওয়ার মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যেই তারা ছিনতাই হওয়া সিএনজি উদ্ধার করে এবং এক সক্রিয় চক্রের সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের বক্তব্যে উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র।

গত ২১ আগস্ট দুপুরে কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের বাঁশখালী বিল্ডিং এলাকা থেকে আনোয়ারার আব্দুল করিম নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকেই পুলিশ চারটি চোরাই সিএনজি উদ্ধার করার কথা জানালেও স্থানীয় ওসমান সরোয়ার জানান, সেখানে মোট ছয়টি সিএনজি ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেন, দুই এসআই শফি উল্লাহ ও পিএসআই ইকবাল হোসেন গাড়ির মালিকানা দাবি করা হেলালের সঙ্গে বাসায় উঠে দ্বিতীয় তলায় গোপন বৈঠক করেন। বৈঠকের পর দুইটি সিএনজি আর থানায় যায়নি।

ছিনতাই হওয়া সিএনজির মালিক মো. রফিক অভিযোগ করেন, গাড়ি ছিনতাইয়ের মূল হোতা হেলাল উদ্দিনকে পুলিশ ঘটনাস্থলেই পেলেও গ্রেপ্তার করেনি। বরং তাকে আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে।

আরও অভিযোগ রয়েছে, ‘মা–বাবার দোয়া’ ও ওয়াসিম নাম লেখা দুটি সিএনজি পরে থানার তালিকায় রাখা হয়নি। এক শ্রমিক নেতা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, গাড়ি দুটি রহস্যজনকভাবে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গোপন আঁতাত করে।

এছাড়া মামলার এজাহার নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বাদী রফিক বলেন, তিনি স্পষ্টভাবে লিখিয়েছিলেন গাড়িটি আনোয়ারার চেয়ারম্যান ঘাটা থেকে অস্ত্রের মুখে ছিনতাই হয়েছে। কিন্তু পুলিশ মামলার কাগজে উল্লেখ করেছে, গাড়ি কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ডাকপাড়া এলাকায় চা খাওয়ার সময় চুরি হয়েছে। ভুক্তভোগীর বক্তব্য উপেক্ষা করে পুলিশ নিজের মতো করে মামলা সাজিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এসব ঘটনায় পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস, উদ্ধার অভিযান ও মামলার নথি উভয় ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে কর্ণফুলী থানা পুলিশ। ফলে পুলিশি কর্মকাণ্ডের ওপর জনআস্থা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

স্থানীয় চালক ও ভুক্তভোগীদের দাবি, পুলিশের এ ধরনের ভূমিকা চোরাই সিএনজি সিন্ডিকেটকে আরও উৎসাহিত করছে। গায়েব হওয়া দুই সিএনজির বাজারমূল্য আনুমানিক আট লাখ টাকা। এতে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে পুলিশের একটি অংশ অপরাধীদের সঙ্গে যোগসাজশে কাজ করছে।

অভিযোগ প্রমাণিত হলে এটি শুধু আইনের শাসনকেই দুর্বল করবে না, বরং চোরাই সিএনজি সিন্ডিকেট ভাঙতে পুলিশের সক্ষমতা নিয়েও বড় প্রশ্ন তুলবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। তাই তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের দায় নির্ধারণ এবং স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা জরুরি।

এ বিষয়ে জানতে বাঁশখালী বিল্টিংয়ের মালিক মো: ইয়াছিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

কর্ণফুলী থানার এসআই মো. শফি উল্লাহ বলেন, "বাদি এজাহারে যা লিখেছে তাই। আমরা কিছু জানি না। আপনারা কিছু বলতে চাইলে সরাসরি কথা বলব।" তবে ৬টি সিএনজি আটক করার পরও কেন মাত্র ৪টি জব্দ দেখানো হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো উত্তর দেননি। এ ঘটনায় যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে পিএসআই মো. ইকবাল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

কর্ণফুলী থানার ওসি মুহাম্মদ শরীফের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করে বারবার কেটে দেন। তবে গত ২১ আগস্ট তিনি নিজেই সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মামলা হওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে ৪টি চোরাই সিএনজি উদ্ধার করেছেন।

অথচ প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সেদিন মোট ৬টি সিএনজি আটক হয়েছিল। আবার মামলার বাদী রফিকুল ইসলামের দাবি, ৫টি সিএনজি আটক করেছিলো, তার ছিনতাই হওয়া সিএনজি ছাড়া। তাহলে সংখ্যার এ অমিল কেন—তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

কর্ণফুলী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, "আনোয়ারায় সিএনজি ছিনতাই হলেও উদ্ধার হয়েছে কর্ণফুলীতে, তাই মামলাও হয়েছে এখানে। অপরাধের ধরণ অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে ৬টি সিএনজি আটক করার পর মাত্র ৪টি জব্দ দেখানো হয়েছে কেন—সে বিষয়ে আমি খোঁজ নিচ্ছি।"

(জেজে/এসপি/আগস্ট ২৬, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৬ আগস্ট ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test